-->

বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে আ.লীগের দলীয় প্রার্থীরা

শাহীন রহমান
বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে আ.লীগের দলীয় প্রার্থীরা

ঢাকা: নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় জেলা পরিষদে উত্তেজনা কিছুটা বাড়ছে। তবে এ নির্বাচনে অন্য দল অংশ না নেয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের। আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৫৯টি জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে ২৭ জেলায় প্রার্থীরা ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। দুটি জেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৩২ জেলার মধ্যে ২৫ জেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

 

জানা গেছে, কোনো কোনো জেলায় একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। দলের মনোনয়ন না পেয়ে তারা বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব প্রার্থী দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও তৃণমূল থেকে এসব বিদ্রোহীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তবে জানা গেছে, স্থানীয় অনেক এমপি এবং দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। ফলে অনেক দলীয় প্রার্থীর নির্বিঘ্নে জয়লাভ করা অনেকটা অনশ্চিত হয়ে পড়ছে। জেলা পরিষদ আইনানুযায়ী স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের একজন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করবেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন। যদিও স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের। তারপরও দলীয় আন্তঃকোন্দল, প্রার্থী মনোনয়নে অসন্তোষসহ নানা কারণে এসব ভোট বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সহজেই বিজয় লাভ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

 

জেলা পরিষেদ আইনানুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য, পৌরসভার মেয়র, কমিশনার ও সংরক্ষিত কমিশনার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর এবং সংরক্ষত কাউন্সিলররা এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। তবে অনিয়মের কারণে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে যেসব জনপ্রতিনিধি স্থায়ী বহিষ্কার হয়েছেন, তারা ভোট দিতে পারছেন না। আবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের যাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, তারাও ভোট দিতে পারছেন না। নির্বাচন কমিশন থেকে সম্প্রতি এ নির্বাচনে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে মোট ভোটার সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৬৩ হাজার ১৫৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৪ হাজার ৯৯২ এবং পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৩৬ জন।

 

ইসির কর্মকর্তারা জানান, এসব নির্বাচনে ৪৭৭টি ভোটকেন্দ্রের ৯৫৫টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট হবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। সব কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদ রয়েছে ৪৬৩টি। সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদ রয়েছে ১৭২টি। আর চেয়ারম্যান পদ ৬১টি। তিন পার্বত্য জেলা জেলা পরিষদের আওতাভুক্ত না হওয়ায় সেখানে নির্বাচন হচ্ছে না।

 

ইসি সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে ৬১ জেলায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ১৬২ জন, বাছাই শেষে বৈধতা পেয়েছিলেন ১৪২ জন। সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৯৮৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন, এদের মধ্যে বৈধতা পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭৪৪ জন। আর সংরক্ষিত সদস্যপদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৭১৫ জন, যাদের মধ্যে বৈধতা পেয়েছিলেন ৬৭৫ জন। তবে আপিল নিষ্পত্তি ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছে ৯৬ জন, সাধারণ সদস্যপদে ১ হাজার ৫১৩ ও সংরক্ষিত সদস্যপদে রয়েছেন ৬২২ প্রার্থী। আদালতের আদেশে ২টি জেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

 

তবে জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে না হলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী থেকে সব জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বিএনপি শুরু থেকে এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করছে। ফলে তারা জেলা পরিষদে কোনো প্রার্থী দেয়নি। দলীয় সমর্থক জনপ্রতিনিধি না থাকায় অন্য দলও এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে ক্ষমতাসীন দল থেকে যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, তারা বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। দলে হাইকমান্ড থেকে তাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হলে সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ফলে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীকে মোকাবিলা করেই নির্বাচনে জয়লাভ করতে হবে তাদের। এর আগে ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বরে দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনেও অন্য দল অংশ না নেয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছিল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের।

 

রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ২১ জেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা ভোট ছাড়াই জয় পান। এর বাইরে ৩৮ জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে ২৫ জেলায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। বাকি ১৩ জেলায় জয় পান দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা। মূলত দলীয় আন্তঃকোন্দল, অযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া এবং দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। এবারো জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় দলের নেতাকর্মীরা এবং স্থানীয় অনেক এমপি দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করছে। ফলে অনেক জেলায় দলীয় প্রার্থীর জয়লাভ করা শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। এছাড়া কোনো কোনো জেলা পরিষদে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও মাঠে রয়েছেন। যদিও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণে এসব বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

 

এদিকে ৬১ জেলায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলেও আদালতের আদেশে নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সব পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ফলে বাকি ৩৪টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সব পদে নির্বাচন হচ্ছে। আর ২৭টি জেলা পরিষদে শুধু সদস্য পদের জন্য ভোট হচ্ছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ কেউ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বর্তমান দলীয় পদে রয়েছেন। কেউ কেউ সহযোগী সংগঠনের পদে আছেন। কেউ বা বর্তমানে কোনো পদে না থাকলেও ইতোপূর্বে দল বা সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে পিরোজপুরে প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছিলেন মহিউদ্দিন মহারাজ। এবারো দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন। মহারাজ টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সালমা রহমান হ্যাপিকে। জেলার জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন মহিউদ্দিন মহারাজ। ফলে হ্যাপির জয়লাভ অনেক অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এ ধরনের আরো অনেক জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বিজয় লাভ অনেকটা চ্যালেঞ্জর মধ্যে পড়েছে। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে দলীয় প্রার্থীদের।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version