-->
শিরোনাম
আজ খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ

পথে পথে বাধার অভিযোগ, আ.লীগ বলছে ভিত্তিহীন

এম সাইফুল ইসলাম
পথে পথে বাধার অভিযোগ, আ.লীগ বলছে ভিত্তিহীন

ঢাকা: আজ শনিবার বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে গত তিন দিন ধরে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষনেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে। বিএনপি নেতারা বলছেন, সমাবেশে কোনো অঘটন ঘটলে সরকারকে এর দায় নিতে হবে। সমাবেশগামী বিএনপি কর্মীদের পথে পথে বাধা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। সব বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল হবে বলেও দাবি বিএনপি নেতাদের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, যেখানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে, সেখানে বাধা-বিপত্তির অভিযোগ ভিত্তিহীন।

 

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সমাবেশ বানচালে নানারকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। গণপরিবহন ও লঞ্চ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিকল্প উপায়ে গত কয়েকদিনে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী খুলনায় পৌঁছালেও গতকাল শুক্রবার থেকে সমাবেশে যোগ দিতে ইচ্ছুকদের পথে পথে হয়রানি করছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির সমাবেশে তারা কোনো বাধা দিচ্ছেন না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় তারা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। আর পুলিশ বলছে, মামলার আসামি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

 

জানা গেছে, আজ শনিবার খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সীমাহীন লোডশেডিং, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত এ সমাবেশ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশের অনুমতিও পেয়েছে দলটি।

 

বিএনপি নেতারা বলছেন, অনুমতি দেয়ার পরও এ সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখিয়ে স্থানীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা শুক্র ও শনিবার গণপরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। জানা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় সমাবেশের তিন দিন আগে থেকে বিভাগের কয়েকটি জেলার নেতাকর্মীরা খুলনা যেতে শুরু করেন। বিশেষ করে খুলনা থেকে দূরের জেলা কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোরের কয়েকটি এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা এ তালিকায় রয়েছেন।

 

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একটা বড় অংশ শুক্রবারের মধ্যে খুলনায় পৌঁছছে বলে নিশ্চিত করেছে বিএনপি। দূরের জেলা থেকে খুলনায় যাওয়া এসব নেতাকর্মী হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধের আশঙ্কায় শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে গেছেন। এছাড়া খুলনার আশপাশের জেলা; বিশেষ করে নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোরের একাংশের নেতাকর্মীদের শুক্রবার রাতের মধ্যে সমাবেশস্থলে পৌঁছানোর পরিকল্পনা দলটির। জানা গেছে, গত দুদিন থেকে গণপরিবহন ও গতকাল থেকে লঞ্চও বন্ধ। তাই নেতাকর্মীরা নসিমন, করিমন (ব্যাটারিচালিত ভ্যান) নিয়ে বিভিন্ন বাইপাস রুটে খুলনামুখী। তবে শুক্রবার থেকে বিভিন্ন রুটে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের পথরোধ করছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা- এমন অভিযোগ বিএনপি নেতাদের। এছাড়া বিএনপি কর্মীদের বাসাবাড়িতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে বলে জানান তারা।

 

মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম জহির ভোরের আকাশকে বলেন, বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে বৃহস্পতিবার খুলনায় এসেছেন দলের কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার পর তিনি নগরীর বসুপাড়া বাঁশতলা এলাকার একটি বাসায় অবস্থান করেন। সেখানে নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এ সময় ওই বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ১০-১২ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। যশোরে গত চার দিনে বিএনপির কমপক্ষে ৬৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় ২০, মাগুরায় ৩৩, নড়াইলে ১৫, বাগেরহাটে ৪০ এবং খুলনা মহানগরীতে শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাসাবাড়িতে চালানো হচ্ছে পুলিশি তল্লাশিও। যশোরের অভয়নগর উপজেলা বিএনপি সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম হায়দার এবং নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি সভাপতি আবু নঈমের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। গতকালও খুলনার ডুমুরিয়া, কয়রা, সাতক্ষীরার প্রায় প্রতিটি উপজেলা, মাগুরার শ্রীপুর, মোহাম্মদপুর, ঝিনাইদহের মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, বাগেরহাটের চিতলমারীসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশির খবর প্রচার হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়।

 

এদিকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে খুলনায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে লঞ্চ চলাচল। ফলে খুলনা থেকে দক্ষিণ দিকে (দাকোপ, কয়রা, সাতক্ষীরা) যাওয়ার সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে খুলনা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। তার দাবি, এ ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিএনপি সমাবেশ সফল করতে অনড় অবস্থানে রয়েছে।

 

দলটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে বিএনপি এ সমাবেশ সফল করবে। কারণ এ সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ‘সমাবেশ ফ্লপ’ করতে পারলে আওয়ামী লীগ সেটিকে ব্যাপকভাবে মিডিয়ায় প্রচার করবে। যার প্রভাব পড়বে আগামীর সমাবেশগুলোয়।

 

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাতে নেতাকর্মীরা মরিয়া। তাই কোনো বাধা দিয়েও আওয়ামী লীগ লোকসমাগম ঠেকাতে পারছে না। তার দাবি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশ মিলে এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই, যা করেনি। তারপরও শুক্রবার থেকেই খুলনা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিভাগীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক গয়েশ^র চন্দ্র রায় ভোরের আকাশকে বলেন, ব্যাপক পুলিশি নির্যাতন, গণপরিবহন বন্ধে ভোগান্তি উপেক্ষা করে শনিবার (আজ) খুলনা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। তবে কেউ বাধা দিলে তা প্রতিহত করা হবে।

 

অন্যদিকে দলের বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনরা ‘পিপলসফোবিয়া’ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো অঘটন ঘটলে পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে। তবে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির করা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী বলেন, বিএনপির সমাবেশের দিন খুলনা আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করবেন। গত মঙ্গলবারের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, মানুষের জানমালের ক্ষতি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক এবং সবাইকে সহনশীল অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।

 

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা ভোরের আকাশকে জানান, বিএনপি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে বাধা দিতে হবে- এটা আমরা বিশ^াস করি না। তবে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।

 

এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সমাবেশের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পুলিশি হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, আসামি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে অহেতুক তল্লাশি চালানো হচ্ছে না বলেও দাবি তার।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version