আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতার বদল চাইলে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে সেফ এক্সিট মানে হলো নির্বাচন। ক্ষমতার বদল চাইলে নির্বাচনে আসুন। আমরা প্রস্তুত ভোটে আসেন। জনগণ ভোট না দিলে আমরা নিরাপদ প্রস্থান করব।’
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেট্রোরেল-১ (এমআরটি লাইন-১)-এর নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না’- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা কখনো পালাইনি। তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই তো পালিয়ে আছে।
জনগণের প্রতি আস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যেভাবে লাঠি নিয়ে নেমেছে, অগ্নিসন্ত্রাসের আভাস দিচ্ছে, তাতে ফখরুল সাহেবরেরই সেফ এক্সিট (নিরাপদ রাস্তা) খুঁজতে হবে। আওয়ামী লীগের কাছে সেফ এক্সিট মানে হলো নির্বাচন। ক্ষমতার বদল চাইলে নির্বাচনে আসুন। আমরা প্রস্তুত ভোটে আসেন। জনগণ ভোট না দিলে আমরা নিরাপদ প্রস্থান করব। তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশে কয়েক হাজার লোক হলেই বলা হয় লাখ লাখ। চট্টগ্রামে লাখের কাছাকাছি হলেও ময়মানসিংহ ও খুলনায় এত লোক হয়নি। মরা গাঙে কিছুটা ঢেউ দেখে মনকলা খাচ্ছে বিএনপি। সমাবেশে জনসমাগম দেখে মনকলা খাচ্ছে বিএনপি। জনসমাগম কাকে বলে তা দেখতে বিএনপি নেতাদের আওয়ামী লীগের একটা জেলা সমাবেশে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
১৩ বছর খরার পর বিএনপির আন্দোলনের ‘মরা গাঙে জোয়ার এসেছে’ বলে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন তো খরার মধ্যে ছিল, এখন একটু বৃষ্টি দেখেছে। ১৩ বছরই তো মরা গাঙে জোয়ার আসেনি, এখন জোয়ার দেখেছে। কিছু ঢেউ দেখতে পাচ্ছে, এটাকেই তারা ভাবছেন লক্ষ লোকের ঢেউ।’ তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট যানবাহন। পৃথিবী এগিয়ে চলেছে আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। আগামী ডিসেম্বরে মাসে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের প্রজেক্ট এমআরটি লাইন-৬ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। প্রথম অংশ এ সময় উদ্বোধন করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ছয়টি এমআরটি লাইন তৈরি করব।
জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাপানের মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এগিয়ে চলেছে। এমআরটি-১ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বহুজাতিক কনসোর্টিয়ামের নিপ্পন কোয়াই করপোরেশন কোম্পানি জেভির সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। এ কনসোর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশি-বিদেশি ৮টি প্রতিষ্ঠান। চুক্তিতে সই করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক এবং নিপ্পন কোয়াই কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি নাও কি কুদো। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫১৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা অর্থায়ন করছে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করছে ৩৯৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (লাইন-১) প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। এ প্রকল্প ব্যয় মোট ব্যয় ৫২,৫৬১.৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা বাবদ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অর্থায়ন করছে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২৬ সালে এমআরটি লাইন-১ চালু হলে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা তৈরি হবে। এমআরটি-১ প্রকল্পটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬.২১ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড এবং কুড়িল থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ১১.৩৬ কিলোমিটার এলিভেটেড বা উড়াল সেতু তৈরি করা হবে। এছাড়া নতুন বাজার থেকে কুড়িল পর্যন্ত ৩.৬৫ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রানজিশন লাইনসহ ৩১.২৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এ মেট্রোরেলের ১২টি স্টেশন থাকবে মাটির নিচে এবং ৭টি থাকবে উড়াল সেতুর ওপর।
মেট্রোরেলের ছয় রুট : এমআরটি-১ বাদে মেট্রোরেলের অপর ৫ রুটের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। অধিকাংশের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি এমআরটি লাইন-৬ এর, যা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এর কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। প্রথম অংশ বা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন করা হবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে এ ছয়টি মেট্রোরেল নির্মাণকাজ তিন পর্যায়ে শেষ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০২৪ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ বা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। তবে সরকার এ সময় কমিয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : নর্দান রুটের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ : সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
এমআরটি লাইন-৫ : নর্দান রুট ২০২৮ সালের মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত পাতাল ও উড়াল সমন্বয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে পাতাল ১৩.৫০ কিলোমিটার এবং ৬.৫০ কিলোমিটার উড়াল মেট্রোরেল হবে। এতে ১৪টি স্টেশন থাকবে। যার মধ্যে ৯টি পাতাল এবং ৫টি উড়াল হবে। ইতোমধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন জরিপ ও মূল নকশার কাজ চলছে। মূল নকশা কাজের অগ্রগতি ৫০.৩৩ শতাংশ। এমআরটি লাইন-৫ : সাউদার্ন রুট ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭.৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে পাতাল ১২.৮০ কিলোমিটার এবং উড়াল ৪.৬০ কিলোমিটার। এতে মোট ১৬টি স্টেশন থাকবে। তার মধ্যে ১২টি পাতাল এবং ৪টি উড়াল। এর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করা হয়েছে। এ মেট্রোরেলের জন্য প্রজেক্ট রেডিনেস ফাইনেন্সিংয়ের (পিআরএফ) জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য