শাহীন রহমান: ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে আগামী বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা পরের বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগেই বড় ধরনের নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে ইসিকে। এ বছর ফেব্রুয়ারীর শেষ সপ্তাহে দায়িত্ব নেয়ার পর বর্তমান ইসির অধীনে বড় ধরনের নির্বাচন হয়েছে কুমিল্লা সিটিতে।
এর বাইরে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন এবং ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন ছাড়া আর কোনো বড় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এখনো হয়নি। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগেই দেশে ৫টি বড় সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে তাদের। আর এসব সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের মধ্যেই। এ কারণে ২০২৩ সালকে নির্বাচনের বছর হিসেবে গণনা করতে হচ্ছে ইসিকে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। রোডম্যাপে ’২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ অথবা ’২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ’২৩ সালের নভেম্বরের তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়াও দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ ও প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছর জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়। এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে আরো বড় ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব সিটি করপোরেশনের মধ্যে রয়েছে গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট। ইতোমধ্যে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। তফসিল অনুযায়ী রংপুরে ভোট হবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রংপুরের পাশাপাশি দেশে আরো ৫টি সিটি নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
যেগুলোর নির্বাচন আগামী বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালে আরো কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সে অনুযায়ী ইসির প্রস্তুতি রয়েছে। এ কারণে আসছে ২০২৩ সালে বড় ভোটের ব্যস্ততায় কাটাতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কর্মযজ্ঞও পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালÑ এই পাঁচ সিটির নির্বাচন আগামী বছরের মার্চ থেকে নভেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে হবে। আইন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে নভেম্বরের মধ্যেই ওই ভোটগুলো করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী, নির্বাচিত কোনো করপোরেশনের প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদ ধরা হয়। আর ভোটগ্রহণ করতে হয় সময় শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ২৭ জুন। প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে ২০২৩ সালের ১১ মার্চ। এই সিটিতে ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হবে।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর। পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল। এই সিটিতে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবরের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুন। প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর। পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল। এই সিটিতে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবরের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে ২০২৩ সালের ১৪ মে। এই সিটিতে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হবে। সর্বশেষ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর। পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে ২০২৩ সালের ৬ মে। এই সিটিতে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০২৩ সাল বর্তমান ইসির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব ভোটের ওপর নির্ভর করছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচনে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করে আসছে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। গত শুক্রবার যুবলীগের সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা ইসির জন্য কঠিন হবে। কারণ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর দলীয় সরকারের অধীনে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তবে নির্বাচন কমিশন থেকে বারবারই দাবি করা হয়েছে, দায়িত্ব নেয়ার পর কুমিল্লা সিটিসহ এই ইসির অধীনে এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার পরিষদের অনেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেসব নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন ওঠেনি। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে। কমিশন থেকে সব দলকে ইসির প্রতি আস্থা রেখে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহব্বান জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষে নির্বাচন হলে নভেম্বরের শুরুর দিকে আর ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন হলে আগামী বছরের নভেম্বরের শেষের দিকে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনের তফসিল দেয়ার অন্তত কয়েক মাস আগে নতুন দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে ভোটার তালিকা ও নির্ধারণ করতে হবে ভোটকেন্দ্র।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য