নিখিল মানখিন: ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ। এর আগেই মাঠ দখলে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ‘ডিসেম্বরে খেলা হবে’ বলে প্রতিদিনই বিএনপির প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা।
১০ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগসহ দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন দিয়ে ঢাকায় কর্মসূচি সাজাতে পারে আওয়ামী লীগ। এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একের পর এক বিভাগীয় গণসমাবেশ করে যাচ্ছে বিএনপি। সমাবেশগুলোর জনসমাগম এবং নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে মূল ফোকাস ছিল ১০ ডিসেম্বর। ঢাকায় ওই দিন সর্ববৃহৎ শোডাউন দেয়ার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দলটি দুই ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রথম টার্গেট সাংগঠনিক শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে সর্বোচ্চ জনসমাগম নিশ্চিত করা।
ইতোমধ্যে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকার নেতাদের নিয়ে একাধিক সভা করেছে প্রস্তুতি কমিটি। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার এমপি প্রার্থীদের সমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে ছক তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ রাজধানীর অন্যতম বড় প্রবেশমুখ সাভারে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ওই দিন রাজধানীতে দুটি সমাবেশ করতে দলের অনুমতি চেয়েছে।
সমাবেশের সিদ্ধান্ত না পেলে ওই দিন রাজধানীর প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে অবস্থান নেবেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সহযোগী সংগঠনগুলোও নিজেদের সুবিধামতো স্থানে সতর্ক অবস্থান নেবে। এ ছাড়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের মতো ঢাকার মহাসমাবেশের সময়ও পরিবহন ধর্মঘট ডেকে কিংবা পরিকল্পিতভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে। ফলে বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মতো ঢাকায় বড় জমায়েত করা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ১০ ডিসেম্বর সাভারে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নবীনগর ও বাইপাইলের মাঝামাঝি মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রি কলেজ মাঠে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইÑ এই তিন থানায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ হবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশটির স্থান এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে যে, এর মাধ্যমে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীদের আটকে দেয়া যাবে। সমাবেশ উপলক্ষে আগের দিন রাত থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকবে।
দক্ষিণবঙ্গের মানুষ লঞ্চ ও পদ্মা সেতু হয়ে আসবেন। এ ক্ষেত্রে লঞ্চ বন্ধ থাকলে জমায়েতের লোকজন আসতে পারবেন না। আর পদ্মা সেতু হয়ে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর দিয়ে খুব বেশি বিএনপির মিছিল-সমাবেশের মানুষ আসতে পারবেন না। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর এ পার মুন্সীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সতর্ক পাহারায় থাকবেন। বিএনপির সমাবেশগুলোর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আওয়ামী লীগও বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করছে। এসব সমাবেশের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরাও দেখিয়ে দিতে চায় যে, তাদের জনসমর্থন কম নেই।
গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকায় সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। আর গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের যুব মহাসমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
দলটি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, ডিসেম্বরের ৪ তারিখে তারা চট্টগ্রামে সমাবেশ করবে, যেখানে দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সম্মিলন ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, সমাবেশগুলোতে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটানো তাদের টার্গেট। দলটি মনে করছে, বিএনপির কর্মসূচির সময়ে তারা যদি মাঠে না থাকে, তাহলে রাজনৈতিকভাবে অসুবিধায় পড়তে পারে দলটি। সে জন্য বিএনপির সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগও নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে।
২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জনসমাবেশ, ৯ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এসব সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটানো হবে। মহাসম্মেলনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিএনপিকে মোকাবিলায় রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য