এম সাইফুল ইসলাম: আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি পালনে হার্ডলাইনে রয়েছে সমাবেশ। যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ঢাকা মহানগরীতে সমাবেশ পালনে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ পালন করতে চান।
বিকল্প হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাথায় রেখেছেন তারা। ইতোমধ্যে পুলিশের কাছে বিএনপি সমাবেশের অনুমতি চাইলেও এখনো তা মেলেনি। শেষ মুহূর্তে হলেও সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার আশা বিএনপি নেতাদের।
বিএনপি নেতারা বলছেন, পুলিশের অনুমতি না পেলে বা মহানগরের বাইরে অনুমতি দিলে সেটি মানবে না বিএনপি। মহানগরের মধ্যে যেকোনো মূল্যে সমাবেশ করবে দলটি। সরকারি দলের শীর্ষনেতাদের নানা বক্তব্য ও ছাত্রলীগের সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির আভাস সত্তে¡ও সমাবেশ করতে মরিয়া বলেও জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে হেরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় হয় বিএনপির। যদিও বিএনপির অভিযোগ ওই নির্বাচন ছিল একতরফা। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বেশ সতর্কভাবে অনেকটাই একলা চলো নীতিতে এগোতে থাকে বিএনপি।
২০২০ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনার থাবা কাটিয়ে ওঠার পর গত বছরের শেষ সময়ে এসে বেশ জোরেশোরে মাঠে নামে বিএনপি। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো ও দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামলেও দেশব্যাপী বেশ সাড়া পায় দলটি।
২০২২ সালের শুরু থেকে বেশ জোরেশোরে বিএনপি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে তৎপর হয়। জুলাই মাসের শুরু থেকে নানা ইস্যুতে টানা কর্মসূচিতে মাঠে রয়েছে বিএনপি। ওইসব কর্মসূচি সফলের পর ঢাকার কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, ফরিদপুর, বরিশাল বিভাগের সমাবেশ শেষ করেছে দলটি। এসব সমাবেশে বেশিরভাগ স্থানে পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে ব্যাপক লোকসমাগম হয়। অন্য ৯টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ শেষ করার পর আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ করতে চায় দলটি।
এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ বেশ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানসহ কয়েকজন নেতার বক্তব্যে উত্তাপ ছড়ায় মাঠের রাজনীতিতে। এসব নেতা বলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়। ঢাকার এ সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। যেকোনো মূল্যে সমাবেশ করতে ইতোমধ্যে বেশ প্রস্তুতিও নিয়েছে বিএনপি। ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে মরিয়া বিএনপি।
জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশ হলেও সারা দেশ থেকে ঢাকার সমাবেশ যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা। এ সমাবেশে দলটি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জানা গেছে, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ঢাকার সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের একদফার কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
১০ ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে অনুমতি চেয়ে গত ১৫ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে বিএনপি। তবে পুলিশ বলছে, গোয়েন্দা রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে অনুমতির বিষয়টি। তবে সরকার যে বিএনপির এ সমাবেশ একেবারে সহজভাবে নেয়নি তা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের কথায় স্পষ্ট।
গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিএনপি ব্যাপক লোকসমাগম ঘটিয়ে যদি নাশকতার চেষ্টা করে, তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না। তিনি ঢাকার ভেতরে সমাবেশ করতে দেয়ার ব্যাপারেও নেতিবাচক কথা বলেছেন। এছাড়া ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ দেয়া হয়েছে ৮ ও ৯ ডিসেম্বর।
মূলত রাজপথ দলের রাখার কৌশলের অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা আছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় অনেকটাই পরিষ্কার যে বিএনপির এ সমাবেশকে তারা সহজে ছাড় দিতে চান না। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, বিএনপির সমাবেশের উদ্দেশ্য হিসেব করে গোয়েন্দা রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হতে পারে। হেফাজতের মতো কোনো উদ্দেশ্য থাকলে বিএনপি অনুমতি পাবে না বলেও বলছে পুলিশ।
শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি সমাবেশের অনুমতি না পায় অথবা ঢাকার বাইরে কোথাও অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে কী করবে বিএনপি? এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। এছাড়া পুলিশের অনুমতি না পেলে নেতাকর্মীদের মনোবলও শক্ত থাকবে কিনা, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু ভোরের আকাশকে বলেন, সব কয়টি বিভাগীয় সমাবেশে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। তারপরও সমাবেশে নেতাকর্মীর ঢল নেমেছে। ঢাকার সমাবেশে কোনো বাধা কাজে আসবে না বলে দাবি করেন তিনি।
তার দাবি, পুলিশ অনুমতি দিলে ভালো। না দিলেও বিএনপি ঢাকায় সমাবেশ করবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, আশা করছি পুলিশ ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেবে। না দিলেও সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে সমাবেশ করা হবে। ১০ তারিখ ঢাকা বিএনপির দখলে থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেকোনো মূল্যে ঢাকার সমাবেশ সফল করা হবে। আবার স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকার বিএনপির সমাবেশ বানচালে নানা কৌশল নিচ্ছে। বিএনপিরও পাল্টা কৌশল আছে।
কোনো বাধা ঢাকার সমাবেশ বন্ধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, বিভাগীয় এ সমাবেশ ঢাকা মহানগরীতেই হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য