এম সাইফুল ইসলাম: সরকার আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের কর্মসূচি পালনে অনুমতি দিতে চাইলেও তাতে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। দলটির নেতারা বলছেন, তারা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছেন। তাই সেখানেই সমাবেশ করবেন তারা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে বাধা হিসেবে ছাত্রলীগের সম্মেলনকে সামনে এনেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে করার ঘোষণায় ওইদিনও এলাকাটি সরকারদলীয় লোকদের দখলে থাকবে। তবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকলেও শেষ পর্যন্ত লাভ-ক্ষতির হিসাব মিলিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিবর্তনও হতে পারে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে হেরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় পর বেশ সতর্কভাবে অনেকটাই একলা চলো নীতিতে এগোতে থাকে বিএনপি। ২০২০ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশ^ব্যাপী করোনা থাবা কাটিয়ে ওঠার পর গত বছরের শেষ সময়ে এসে বেশ জোরেশোরে মাঠে নামে বিএনপি।
ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো ও দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামলেও দেশব্যাপী বেশ সাড়া পায় দলটি। ২০২২ সালের শুরু থেকে বেশ জোরেশোরে বিএনপি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে তৎপর হয়। জুলাই মাসের শুরু থেকে নানা ইস্যুতে টানা কর্মসূচিতে মাঠে রয়েছে বিএনপি।
ওইসব কর্মসূচি সফলের পর ঢাকার কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, ফরিদপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের সমাবেশ শেষ করেছে দলটি। এসব সমাবেশে বেশিরভাগ স্থানে পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে ব্যাপক লোকসমাগম হয়।
আজ শনিবার দলটির কুমিল্লা সাংগনিক বিভাগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ কর্মসূচি ঘোষণার পর বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানসহ কয়েকজন নেতার বক্তব্যে উত্তপ্ত ছড়ায় মাঠের রাজনীতিতে। ঢাকার এ সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। যেকানো মূল্যে সমাবেশ করতে ইতোমধ্যে বেশ প্রস্তুতিও নিয়েছে বিএনপি।
জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশ হলেও সারা দেশ থেকে ঢাকার সমাবেশ যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা। এ সমাবেশে দলটি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে। দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ঢাকার সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
১০ ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে অনুমতি চেয়ে গত ১৫ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করেছিল বিএনপি। গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে শর্তসাপেক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে বলেছেন তিনি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে স্বরাষ্টমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশের অনুমতি চাননি। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে তারা অনুমতি চেয়েছেন। এছাড়া আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
৯ ডিসেম্বরের ছাত্রলীগের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। তাই ওইদিন এলাকাটি মূলত আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দখলে থাকবে। ফলে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ সোহরাওয়ার্দীতে উদ্যানে করতে গেলে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
জাতীয়বাদী যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু ভোরের আকাশকে বলেছেন, সব কয়টি বিভাগীয় সমাবেশে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। তারপরও সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। ঢাকার সমাবেশে কোনো বাধা কাজে আসবে না। নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায় আমরা। দল সিদ্ধান্ত অনড় থাকলে অনুমতি না পেলেও নয়াপল্টনে সমাবেশ হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চায়নি। আমরা নয়াপল্টেনর জন্য অনুমতি চেয়েছি। আগামী ৮ ও ৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এর মধ্যে কেমন করে আমাদের সমাবেশ হবে। এটা সাংঘর্ষিক হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। তাই নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাই।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, সরকার বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি কথা বললেও আমরা আগের অবস্থানেই আছি। বিএনপিকে সমাবেশ করতে কোনো জায়গা দিতে চায় না সরকার। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়ায় অবাক লাগছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ জনসমাগমের মাধ্যমে সমাবেশ হবে বলেও জানান তিনি।
দলটির স্থায়ী আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠাতে গতকাল শুক্রবার বলেন, নয়াপল্টনেই ১০ ডিসেম্বরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, পূর্বাচল থেকে সোহরাওয়ার্দীতে চলে এসেছে অনুমতি। নয়াপল্টনেই অনুমতি মিলবে।
এ দিকে বিএনপির ঢাকা মহানগরের কয়েকজন নেতা ভোরের আকাশকে বলেছেন, তাদের দল সমাবেশের অনুমতি পাবে বলে তারা আশা করেননি। সমাবেশের অনুমতি মেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দলটির নেতারা এখন সরকারকে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দিতে চাপে রাখতে চায়। সেখানে অনুমতি না মিললে লাভ ক্ষতির হিসেব কষে শেষ পর্যন্ত দলটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সমাবেশ করবে বলে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য