-->
কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয় : মির্জা ফখরুল

কুমিল্লা প্রতিনিধি
শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয় : মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে দেশে আগামীতে কোনো নির্বাচন হবে না। আগে তাকে পদত্যাগ করে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সে কমিশন একটি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

 

গতকাল শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেছেন।

 

তিনি বলেন, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী জোর করে দুবার নির্বাচন করেছেন। ২০১৪ সালে কেউ ভোট দিতে যায়নি। নির্বাচনের আগে তাদের ১৫৪ জন জয়ী হয়ে গেছেন। ২০১৮ সালেও রাতেই ভোট হয়েছে। আবারো তিনি নাকি নির্বাচন করবেন। এবার দেশে সত্যিকারের ভোট হলে জামানত থাকবে না আওয়ামী লীগের।

 

তাই আবারো আগের কৌশলে যেতে চান। কিন্তু তা হবে না। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা আরো দুর্বার আন্দোলন তৈরি করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব। তারপর জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যশোরে জনসভা করেছেন রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে। সেখানে মানুষের কাছে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। শেখ হাসিনার ভোট চাওয়া দেখে আমার আব্বাস উদ্দিনের গানের কথা মনে পড়ে গেছে ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না।’ এ দেশের মানুষও এখন সেই গান গাইতে শুরু করেছেন। ভুলে যান, দেশের মানুষ আর আপনাদের চায় না। সময় থাকতে মানে মানে চলে যান। না হয় পরিণতি ভালো হবে না।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের নতুন করে ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে জীবন দিতে হচ্ছে। তারা নিরপেক্ষ ভোট দিতে চায় না। কারণ ভোট হলে জামানত থাকবে না এটা বুঝতে পেরেছে।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, গণসমাবেশ নস্যাৎ করতে আগে থেকেই মামলা দেয়া হয়েছে। এসব করে আমাদের সমাবেশ বন্ধ করা যায়নি। ১০ ডিসেম্বরেও ঢাকায় আমাদের সমাবেশ কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। অগ্নিসন্ত্রাস করে আপনারা বিরোধী দল-বিএনপির নাম দিচ্ছেন। চট্টগ্রামেও ছাত্রলীগের আগুনসন্ত্রাসের পর বিএনপির নামে মামলা দেয়া হয়েছে। কুমিল্লায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার হিরু-হুমায়ুনকে গুম করা হয়েছে। তাদের সন্তানরা বাবাকে পায় না। সন্তানদের চোখ ছলছল করে, আমরা সান্ত¡না দিতে পারি না। সিলেটের ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে।

 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, রিজার্ভ আপনারা চিবিয়ে খাননি, গিলেই খেয়ে ফেলেছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিদ্যুতের জন্য ৭৮ হাজার কোটি টাকা তারা এক বছরে পাচার করেছে। বিদ্যুতের দাম কত বাড়িয়েছে? দাম দিতে দিতে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি।

 

অকটেন, ডিজেলের দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বাড়লেও আয় বাড়েনি। কিন্তু ওদের আয় বাড়ে। তারা ফুলেফেঁপে যাচ্ছে। একজনের ৪টা বাড়ি থেকে ১০টা বাড়ি হয়েছে। সাধারণ মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। আমাদের মা-বোনেরা তাদের সন্তানকে একটি ডিমও খাওয়াতে পারছেন না।

 

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নেতা দূর থেকে ডাক দিয়েছেন টেকব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম। যে স্বপ্ন দেখে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আমাদের দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে, সেই বাংলাদেশ। কিন্তু এ সরকার কোথাও কিছু রাখেনি। ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে দেয়। সমাবেশে উপস্থিত আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে ৫০/৬০টি করে মামলা রয়েছে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

 

সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে, তিনি দেশে আসতে পারছেন না।

 

তিনি বলেন, একমাত্র খালেদা জিয়ার মাধ্যমে দেশের পরিবর্তন সম্ভব। আগামীতে তার নেতৃত্বে আমরা সব দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব।

 

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক এবং সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াসহ কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের শীর্ষ নেতারা।

 

গণসমাবেশ পরিচালনা করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক উদবাতুল বারী আবু এবং সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version