দীর্ঘদিনের দূরত্ব ঘুচিয়ে জাতীয় পার্টিকে আরো শক্তিশালী করতে একমত হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টি নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধানে আলোচনা করেন তারা। আন্তরিক পরিবেশে মঙ্গলবার সকালে রাজধানী গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে যান জিএম কাদের। এ সময় তার সঙ্গে দলটির কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরর আহব্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু উপস্থিত ছিলেন।
চাচাকে স্বাগত জানান এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহে সাদ এরশাদ, পুত্রবধূ মহিমা সাদ। বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করে সালাম ও কুশল বিনিময় করেন জিএম কাদের। তারপর সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ১০-১৫ মিনিট কথা বলেন।
বহিস্কৃত, দলত্যাগীদের ফিরিয়ে নেওয়া, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন, প্রধান পৃষ্ঠপোষকসহ সবার পরামর্শে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম পরিচালনা, রংপুর সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন এবং দলীয় রাজনীতির সৃষ্ঠ সংকট নিয়ে দুজনই আলোচনা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, সকালে কাদের আমার কাছে এসেছিলেন। আমরা আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করেছি। ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়তে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো ধরনের বিভেদ-বিভক্তি নয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করে আমাদের আগামীতে ক্ষমতায় যেতে হবে। তিনি পল্লীবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের কাজ করার আহব্বান জানান।
এ বিষয়ে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানসহ আমরা পল্লীমাতা বেগম রওশন এরশাদের দোয়া নিতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের সন্তানের মতো ভালোবাসেন। তিনি আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের দোয়া করেছেন। আমাদের অভিভাবক হিসেবে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সাক্ষাতে জিএম কাদের অতীতের ভুলত্রæটির জন্য ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন। বেগম রওশন এরশাদের পরামর্শে জাতীয় পার্টিকে পরিচালনার কথাও বলেন তিনি। দল পরিচালনায় ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ভুল বুঝাবুঝি হবে না বরং একে অপরের পরামর্শে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেবেন বলেও একমত হন উভয়ে। এর আগের দিন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম ঘোষণা করেন তিনি। এতে আভাস মিলে বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের দূরত্ব কমার। কারণ জিএম কাদের এর পক্ষে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আগেই মোস্তফার নাম মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিতে রওশন এরশাদ ও পার্টির চেয়ারম্যানের মধ্যে নিবিড় ঐক্যের বিকল্প নাই। দুজনের ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে এরশাদ পরিবারকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়তে নেপথ্যে ভূমিকা রাখছেন দলটির প্রভাবশালী কো-চেয়ারমান সাবেক মন্ত্রী এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ কিছু সিনিয়র নেতা।
তারই ধারাবাহিকতায় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদেরের মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য