-->
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে চেকপোস্ট

রাজধানীজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেপ্তার চার শতাধিক

ইমরান আলী
রাজধানীজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেপ্তার চার শতাধিক

ইমরান আলী: বিশেষ তালিকা নিয়ে রাজধানীজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার রাত থেকে চালানো এ সাঁড়াশি অভিযানে প্রথম দিনেই চার শতাধিক গ্রেপ্তার হয়েছে। গত এক মাস ধরে তথ্যপ্রযুক্তি, স্থানীয় সোর্স ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় অভিযানের জন্য তিন শ্রেণির তালিকা তৈরি করা হয়।

 

আর এ তালিকা নিয়েই অভিযান শুরু হয়। পুলিশ বলছে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, নাশকতার একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

 

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুরোনো রাজনৈতিক মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই অভিযান চালানো হচ্ছে।

 

তবে শনিবার রাত থেকে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করা হয়। বিশেষ করে নাশকতার মামলার আসামি ও জামিনে ছাড়া পাওয়া বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

 

সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের যে হালনাগাদ তালিকা করেছে, তা ডিএমপির ক্রাইম বিভাগের সব জোনের পাশাপাশি দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। সেই তালিকা ধরেই এখন দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমগুলো অভিযানে রয়েছে।

 

সূত্র আরো জানায়, রাজধানীতে বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে ঢাকার বাইরে থেকে কোনো ‘বহিরাগত’ যাতে আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোয় উঠতে না পারে, সে জন্য তল্লাশি চালাবে পুলিশ। অকারণে ঢাকার বাইরের কোনো বাসিন্দাকে ঢাকায় অবস্থান করতেও দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে আবাসিক হোটেলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে স্থানীয় থানা পুলিশ। একই সঙ্গে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতেও তল্লাশি চৌকি বসিয়ে লোক সমাগম ঠেকানোর কৌশল নেবে পুলিশ।

 

বিএনপিকে ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। তবে বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে অনড়। এমন প্রেক্ষাপটে বহুমাত্রিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজাচ্ছে পুলিশ। বিএনপি যাতে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে না পারে, সেজন্য অন্তত তিন দিন আগেই ওই এলাকা পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে।

 

আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক নিরাপত্তা পরিকল্পনাও সাজানো হচ্ছে ডিএমপির পক্ষ থেকে। সমাবেশ কেন্দ্র করে বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদারেও পুলিশ কাজ করছে। ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

 

ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জায়গা দেয়া হয়েছে। তাদের সেখানেই সমাবেশ করতে হবে। আর তারা যদি জোর করে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, তাহলে তাদের সেটা বেআইনি সমাবেশ হবে। আর একটি বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে পুলিশের যে আইনি ব্যবস্থা আছে, সেই আইনি ব্যবস্থাই নেয়া হবে।

 

বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তিনি বলেন, পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক গ্রেপ্তার হচ্ছে না। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ নিয়মিত কাজ করছে। সেই কাজের অংশ হিসেবেই অপরাধীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, রাজধানীর আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন এলাকায় যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, তা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার শতাধিক ব্যক্তিকে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। পাশাপাশি কেউ যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টি পুলিশকে সতর্কভাবে দেখভাল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে বাড়তি যে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তা আমাদের নিয়মিত ডিউটির অংশ। সেখানে অতিরিক্ত কোনো কিছুই নয়, মূলত সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় আমরা সেখানে ফোর্স মোতায়েন করেছি।

 

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিসি ফারুক হোসেন বলেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশে নয়, কেবল যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।রাজধানীবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের যা যা করণীয়, সবই করবে বলেও উল্লেখ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

 

ডিএমপির শাহআলী থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ডিএমপি সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজনৈতিক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

 

কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে কিন্তু গ্রেপ্তার হয়নি এমন অপরাধীদের তালিকা নিয়ে থানা পুলিশের একাধিক টিম গ্রেপ্তার অভিযানে রয়েছে।

 

ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, আমরা তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছি। কাউকে হয়রানি করার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে না।এদিকে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, গত তিন দিনে রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।

 

এর মধ্যে কলাবাগান থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহব্বায়ক ইয়াসিন, ধানমন্ডি থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহব্বায়ক পলাশ, লালবাগ থানা ছাত্রদলের আহŸায়ক আফতাব ইয়াকিনকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। ওয়ারী থানাধীন ৪১নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আমিনুল ইসলাম নয়ন, বংশাল থানা বিএনপি নেতা মো. নাদের ও কোতোয়ালি থানাধীন ৩২নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আলাউদ্দীন আলাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, পশ্চিম মানিকদি ইউনিট বিএনপির সভাপতি ইব্রাহিম হক, ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপি নেতা জুয়েল মাস্টার, আবদুল হান্নান, আহমেদ আলী, পল্লবী থানা বিএনপি নেতা শাকিল আল হাসান, ভাটারা থানা বিএনপি নেতা মেহেদী হাসান সোহেল, হাসান, শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল, আলমাস, সোহেল, মোহাম্মদ জাকির ও কামাল গ্রেপ্তার হয়েছেন।

 

এ ছাড়া দক্ষিণখান থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাবুদ্দিন সাগর, বিমানবন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি জুলহাস পারভেজ মোল্লা, কাফরুল থানা বিএনপি নেতা মো. হেলাল উদ্দিন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৯২ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহব্বায়ক ওমর ফারুক, ২০ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহব্বায়ক সোহেল ভ‚ঁইয়া ও ২১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহব্বায়ক রইসুল ইসলাম রনককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version