নিখিল মানখিন: আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বাগ্্যুদ্ধ অবশেষে বাস্তব সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। সম্মেলনের ভেন্যু নিয়ে বিএনপির টালবাহানার সুযোগ লুফে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সর্বত্র অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের মিছিলে মিছিলে কম্পিত থাকবে রাজধানীর রাস্তাঘাট, অলিগলি ও পাড়া-মহল্লা। বিএনপিকে সম্মেলনের নামে রাস্তায় নেমে অরাজকতা সৃষ্টি করার সুযোগ দেয়া হবে না। প্রতিটি স্থানে বিএনপিকে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। শুধু তাই নয়, আঘাতের পাল্টা আঘাত দেয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে তীব্র বাগ্্যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে আওয়ামী লী ও বিএনপি। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের ভেন্যু রাজনীতিতে পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতিপ্রাপ্ত ভেন্যু বিএনপির প্রত্যাখ্যান এবং বিএনপির বিকল্প ভেন্যুর প্রস্তাবে আওয়ামী লীগের সাড়া না দেয়ায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে উত্তপ্ত। মঙ্গলবার পল্টন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিএনপি নেতাকর্মীদের। তালা দেয়া হয়েছে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলেন, রাজধানীতে যে কোনো সম্মেলনের জন্য সবচেয়ে উত্তম ভেন্যু ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’ প্রত্যাখ্যান করে চরম ভুল করেছে বিএনপি। বিএনপির সম্মেলন আয়োজনে ভেন্যু, পরিবহন ধর্মঘটে নিষেধাজ্ঞা, দলীয় কর্মসূচিগুলো এগিয়ে আনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর বিএনপির অসময়োপযোগী সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রথমদিকে নানাভাবে ছাড় দেয়ার কথা জানালেও এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে দলটি।
প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি আ.লীগের : বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে নগর ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভায় গণভবন থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বহু মার খেয়েছি, আর নয়। যে হাত মারতে আসবে, সে হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত আগুন দিতে আসবে, সেই হাত আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে। আর সহ্য করা হবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।’
একই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা, ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থায় থাকবেন। আক্রমণ তারা করবেন না। তবে আক্রান্ত হলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
পাড়া-মহল্লায় মহড়া : আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, আগামী ১০ ডিসেম্বর কঠোর হস্তে বিএনপিকে প্রতিহত করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপির সম্মেলনের সুবিধার্থে উঠিয়ে নেয়া দলীয় কর্মসূচিসহ পাড়া-মহল্লায় অবস্থান কর্মসূচি আবার ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ রাজধানীর অন্যতম বড় প্রবেশমুখ সাভারে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে। নবীনগর ও বাইপাইলের মাঝামাঝি মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রি কলেজ মাঠে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইÑ এই তিন থানায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ওই দিন রাজধানীতে দুটি সমাবেশ করতে দলের অনুমতি চেয়েছে। সমাবেশের সিদ্ধান্ত না পেলে ওই দিন রাজধানীর প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে অবস্থান নেবেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সহযোগী সংগঠনগুলোও নিজেদের সুবিধামতো স্থানে সতর্ক অবস্থান নেবে।
পদ্মা সেতুর এ পার মুন্সীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সতর্ক পাহারায় থাকবেন। ওইসব এলাকায় আওয়ামী লীগ বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করবে। রাজধানীর প্রবেশপথের জেলা ও থানা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনেগুলোও ইতোমধ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শুরু হয়েছে মহড়া : আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সম্মেলন কেন্দ্র করে বিএনপিকে প্রতিহত করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরব অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান ও মহড়া দিতে দেখা গেছে কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ইউনিট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাবির মধুর ক্যান্টিন প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ক্যাম্পাসের টিএসসি এলাকা, শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পলাশী চত্বর এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তারা মহড়া দেন।
পুলিশি অ্যাকশন : বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রবেশদ্বারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। সেখানে জনসাধারণকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিজয়নগর মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ার পরপর বিএনপি কার্যালয়ে তালা দেয়া হয়। সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না কাউকেই। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকায় আগত সবাইকে তল্লাশি করছে পুলিশ। পরিচয়পত্র দেখার পাশাপাশি জানতে চাওয়া হচ্ছে সেদিকে যাওয়ার কারণ। এভাবে প্রথম অ্যাকশনে যাবে পুলিশ এবং পরে অংশ নেবেন আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য