-->
নির্বাচনী বছর ২০২৩

উত্তপ্ত থাকবে রাজনীতির মাঠ

নিখিল মানখিন
উত্তপ্ত থাকবে রাজনীতির মাঠ

নিখিল মানখিন: রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কা নিয়ে গতকাল রোববার শুরু হয়েছে জাতীয় নির্বাচনী বছর ২০২৩। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের অবস্থান আবার পাকাপোক্ত করতে এবং বিএনপি ১৫ বছরের খরা কাটাতে মরিয়া। দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ২০২২ সালের শেষদিকে সৃষ্ট রাজনৈতিক উত্তাপ পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি।

 

নতুন বছরে সেই উত্তাপের তীব্রতা অনেকগুণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ২০২২ সালের শেষদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলো হয়ে ওঠে জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক। নির্বাচনমুখী কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রাজনীতিকে আন্দোলনের মাঠ থেকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসার কৌশল গ্রহণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপিকে আন্দোলনে ব্যস্ত রেখে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কৌশল বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

 

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, দলীয় জেলা-উপজেলা সম্মেলন ও কমিটি গঠন শেষদিকে। সুরাহা হয়েছে তৃণমূল কোন্দলও। জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলছে আলোচনা ও দেনদরবার। জোরালো করা হয়েছে ক‚টনৈতিক যোগাযোগ। গত কয়েক মাসে দলীয় জেলা ও উপজেলা সম্মেলন আয়োজন করে বিশাল বিশাল জনসমাবেশ ঘটিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সব মিলিয়ে দলটি এখন নির্বাচনমুখী। দল গোছানোর পাশাপাশি বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনার মাত্রা বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।

 

এভাবেই নীরব ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে দলটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় অবস্থান এবং নির্বাচন নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনার বিষয়ে বার্তা দিতেই এ ক‚টনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। শুধু দলীয় ব্যক্তিদের দিয়েই নয়, বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে হাইকমান্ড। আগামী জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনায় রেখেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে তেমন পরিবর্তন আনেনি আওয়ামী লীগ।

 

গতকাল নিজ বাসভবনে ব্রিফিংকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল হিসেবে নতুন বছরে নতুন আশা ও প্রত্যাশায় নয়া উৎসর্গীকৃত চেতনায় নবতর পথযাত্রার সূচনা করতে চায়। আওয়ামী লীগকে আরো সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত, আধুনিক ও স্মার্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে এদেশের গণমানুষের স্বপ্নপূরণে ইতিবাচক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন ওবায়দুল কাদের।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, নতুন বছরে দ্বাদশ জয়ে ভোটের মাঠের কাজ শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিভাগীয় সমাবেশ-জনসভা করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ভোট প্রার্থনায় নামবেন। নতুন বছরে ফেব্রুয়ারীতে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় নির্বাচনি জনসভা হবে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারী জনসভায় যোগ দেবেন সংগঠনটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিদায়ী ২০২২ সালে ৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে মহাসমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। তিন মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। উন্নয়নের উচ্ছ¡াসে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ছুটবে বলে জানান সুজিত রায়।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন বছর রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় থাকবে জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম থাকবে সেটিকে কেন্দ্র করেই। বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরের কিছু বেশি সময়। গত বছর দেশব্যাপী গণসমাবেশ, গণমিছিলের মতো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ চেষ্টা করছে ইমেজ সংকট কাটাতে। আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত রেখেছে বিএনপি। বিএনপির সামনে প্রধান দুই সংকট হলো ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং দলের শীর্ষ দুই নেতার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া।

 

এ অবস্থায়ও দল যথেষ্ট সংগঠিত এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, দলীয় কর্মসূচিতে তারা একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে, তারা শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আর যাবে না। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ বিলুপ্তির দাবিতে দলটি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এত নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এত বাধাবিপত্তি তারপরও কি সমাবেশে আমাদের লোক কম হয়েছে? প্রশ্ন করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

 

রাজনীতি বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরীও মনে করেন, পূর্বাভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপি এবারে আগের চাইতে সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে গিয়েছে। তিনি বলেন, এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে দলটি সামনের বছর নিজেদের আরো শক্তিশালী করতে চাইবে। বিএনপি এখন একা নয়, তাদের সঙ্গে অন্য বিরোধী দলগুলো যোগ দিয়েছে, যা তাদের অবস্থানকে আরো জোরালো করেছে। বিএনপি এখন যে অহিংস পথ বেছে নিয়েছে একে কৌশলগত ভালো কাজ বলে মনে করেন দিলারা চৌধুরী। এদিকে নির্বাচনী বছরে মাঠে থাকার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিএনপি।

 

জোটগত শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিদিন নানা কৌশলে নতুন নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে দলটি। দাবি মানা না হলে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা। নতুন বছর শুরু হওয়ার আগেই ৩০ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে গণমিছিল থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। নতুন বছর ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে এ নতুন কর্মসূচি পালিত হবে।

মন্তব্য

Beta version