বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চটি ভেঙ্গে পড়লো ঠিক তখন, যখন বক্তব্য রাখছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ঘটনায় জাতীয় সংসদের ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ আটজন আহত হয়েছেন। তবে ওবায়দুল কাদের বড় ধরণের দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। তিনি পায়ে সামান্য ব্যথা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারি মো. জাহাঙ্গীর কবির।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাহাঙ্গীর কবির ভোরের আকাশকে বলেন, ‘স্যার ভালো আছেন। তবে তিনি পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। তিনি আগের কর্মসূচি অনুযায়ী কিছুক্ষণ পর দলীয় কার্যালয়ে যাবেন।’
মঞ্চ ভেঙে পড়ার কিছুক্ষণ পরই ওবায়দুল কাদের উঠে দাঁড়ান এবং আবারও তিনি বক্তব্য শুরু করেন। মঞ্চে অতিরিক্ত মানুষ ওঠার কারণে এমনটি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বক্তব্য দেওয়ার সময় আচমকা মঞ্চ ভেঙে পড়েছে। এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। মঞ্চে অনেক নেতা ছিলেন। আমি বলবো, আমাদের আরও কর্মীর দরকার। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট কর্মী দরকার। এতো নেতা দরকার নেই। যেকোন মঞ্চে গেলে সামনের লোকের চেয়ে মঞ্চের লোকের সংখ্যা বেশি হয়। নেতা উৎপাদনে এত বড় কারখানা আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রযোজন কর্মী তৈরীর কারখানা। এত নেতা কেন?
তিনি বলেন, পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে আমরা ছাত্রলীগ করতে গিয়ে আহত হয়েছিলাম, রক্তাক্ত হয়েছিল অনেকেই, গুরুতর আহত হয়েছে অনেকেই। আজ তো এটা স্টেজ ভেঙে পড়েছে, এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
শুক্রবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখছিলেন। এসময় মঞ্চ ভেঙে পড়ে। এর পরপরই নেতাদের উদ্ধারে তৎপর হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় সংবাদকর্মীরা ছবি, ভিডিও করতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। সেখানে হট্টগোল শুরু হলে পুলিশের নিরাপত্তায় উঠে দাঁড়ান ওবায়দুল কাদেরসহ ছাত্রলীগের বর্তমান-সাবেক নেতারা।
আহতরা হলেন
এ ঘটনায় জাতীয় সংসদের ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএমএ কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মো. জাবেদ, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিসুজ্জামান রানা, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, সাবরিনা চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাধন, ছাত্রলীগ সদস্য মো. জসিম উদ্দিন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তেমন কোনও বড় ধরনের দুর্ঘটনা নয় এটি। স্বাভাবিক ঘটনা। মঞ্চে অতিরিক্ত লোক ওঠার কারণে মঞ্চটি ভেঙে পড়ে। অনেকে আহত হয়েছে, তবে খুবই সামন্য। একটা মঞ্চে ভেঙে পড়লে লোকজন ব্যথা পাবেই। অনেকের পায়ে একটু খোঁচা লেগেছে। তিনি আর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চে ছিলেন। মঞ্চে উনার চারপাশে লোকজন ছিল। তেমন কোনও ব্যথা তিনি পাননি। সামান্য পায়ে ব্যথা লেগেছে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলে গেছে ও আঘাত লেগেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাত জন বাড়ি ফিরেছেন। লিলি এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
এর আগে বিকেল ৩টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে র্যালি পূর্ব অনুষ্ঠান শুরু হয়। গত ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে ছাত্রলীগ। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ হলো র্যালি।
এতে অংশ নিতে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শাখার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও অংশ নেন।
এসময় জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। পরে দলীয় সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য