-->

সংবিধানে থেকেই নির্বাচন করতে অনড় আ.লীগ

নিখিল মানখিন
সংবিধানে থেকেই নির্বাচন করতে অনড় আ.লীগ

নিখিল মানখিন: নির্বাচনমুখী হয়ে পড়েছে দেশের রাজনীতি। সরব হয়ে উঠেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি নানাভাবে উঠে আসছে। সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়ে চলেছে বিএনপি।

 

আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে অনড় রয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

 

বিদ্যমান সরকারই নির্বাচনের সময় চলমানভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় এ সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে।

 

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থানে দুই দল। এ নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা।

 

তাদের মতে, উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথেই তাদের মোকাবিলা করা হবে। অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

 

শুধু তাই নয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই এ দাবি আদায় করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি। বিএনপির এ ধরনের হুঁশিয়ারিকে আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দুই দলের এমন কঠোর অবস্থানে রাজপথে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

 

সম্প্রতি বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কোনো বিধান সংবিধানে নেই। ক্ষমতাসীন সরকারই নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে তার কোনো কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। তবে বিরত যে থাকতেই হবে এমন কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানান ড. শাহদীন মালিক।

 

আর সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়ে চলেছে বিএনপি। গত ২৭ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা খুব পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

 

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব। এদিকে সংবিধানে থেকেই জাতীয় নির্বাচনে অনড় রয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিয়ে যাচ্ছে দলটি।

 

গত ১৭ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সরকার বারবার সংবিধানের ওপর আঘাত এনেছে। তারা সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

গত ২৯ মার্চ সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে একই সুরে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন লাঞ্চের দাওয়াত দিয়েছিল। সেখানে বলেছি, সংবিধান অনুযায়ী আমরা কেয়ারটেকার সরকারে ফেরত যেতে পারব না। তারা চায় বাংলাদেশে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হোক। তারা তা বলতেই পারে। এটা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রও বলতে পারে। কেননা তারা আমাদের বন্ধু।

 

ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন বাস্তবায়ন করবে ইলেকশন কমিশন। তখনকার সরকার রুটিন ওয়ার্ক করবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফেরা সম্ভব নয়। বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিবাস্বপ্ন দেখুক, তা কখনো পূরণ হবে না বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথেই তাদের মোকাবিলা করা হবে বলে জানান সুজিত রায় নন্দী।

 

এভাবে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও দলের শীর্ষ নেতারাও ঘুরেফিরে একই ধরনের মন্তব্য করে আসছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার বিষয়টি মূলত সংবিধান পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করছে। তারা মূল যে দাবিতে অনড় তা হলো, নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যেটি বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে অসম্ভব।

 

এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যদি সংবিধান সংশোধন করা না হয় এবং যদি আগের দুটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়, তাহলে কি বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে? যেমনটা করেছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে? বিএনপি কি নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলন-সংগ্রাম চালাবে?

 

আর বিদ্যমান সংবিধান অনুয়ায়ী অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন প্রতিহত করতে গেলেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি হয়ে উঠবে সহিংস ও অস্থিতিশীল। এমন শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version