-->
শিরোনাম

সমঝোতার সম্ভাবনা নেই আন্দোলনে সমাধান: বিএনপি

এম. সাইফুল ইসলাম
সমঝোতার সম্ভাবনা নেই আন্দোলনে সমাধান: বিএনপি

এম. সাইফুল ইসলাম: বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে ‘কঠোর আন্দোলনে’র বিকল্প দেখছে না বিএনপি। কার্যত নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংকট উত্তরণে কোনো সম্ভাবনাও নেই বলেও মনে করছে বিএনপি। তাই সংলাপের দিকে তাকিয়ে না থেকে কার্যকর আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে বিএনপি এখন রমজানেও মাঠে।

 

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন আন্দোলন চায়। বর্তমান সরকারের পদত্যাগের আগেও কোনো সংলাপে বসতে চান না তারা। সংলাপের বিষয়ে গত কয়েকদিনে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্যেও তার আভাস মিলেছে।

 

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি প্রায় নয় মাস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন রাজনীতির মাঠ সরগরম। মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচন সামনে রেখে বড় দলগুলো এখন নির্বাচনী কূটনীতি নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি এখন রাজপথে। দলটি এবার রমজান মাসেও মাঠের কর্মসূচিতে।

 

গতকালও প্রায় ৬৫০টি স্পটে দলটি একসঙ্গে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল সবাই এখন চায় আন্দোলন। কারণ বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা বা কার্যকরী কোনো সংলাপের সম্ভাবনা তারা দেখছেন না।

 

তারা মনে করছেন আন্দোলনই তাদের সামনে একমাত্র পথ। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা মাঝেমধ্যে সংলাপের কথা বললেও সেটি লোক দেখানো বলে মনে করেন তারা। সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রসঙ্গে ২০১৮ সালকে সামনে আনছেন তারা। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসে কোনো লাভ হয়নি বিএনপির। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া নিয়েও অনেকে কেন্দ্রকে ‘কাঠগড়ায়’ দাঁড় করান।

 

শুক্রবার জাতীয় সংসদে বিদায়ী ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি সংকট উত্তরণে সংলাপ-সমাঝোতার ইঙ্গিত দেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল শনিবার দুপুরে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পদত্যাগ না করে সংলাপের আহব্বান করলে বর্তমান সরকারকে আর বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই। আগে পদত্যাগ করতে হবে। তারপর সংলাপ।

 

এছাড়া সম্প্রতি একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার বক্তব্যে বিষয়টি উঠে এসেছে। গত কয়েকদিনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ একাধিক নেতা সমঝোতা ও সংলাপের বিষয়ে কথা বলেছেন। তারা বলছেন, বিএনপির চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে সরকার মাঝেমধ্যে লোক দেখানো সংলাপের কথা বলে।

 

সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের কথা বলা হলেও বিএনপি সেটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহব্বান জানিয়ে লেখা চিঠিকে বিএনপি সরকারের ক‚টকৌশল হিসেবে অভিহিত করেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার যে আন্তরিক, তা দেখাতে এখন সংলাপকে সামনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিরপেক্ষ ও প্রকৃতপক্ষে অংশগ্রহণমূলক ভোট করতে দেশের বাইরের বেশ চাপের কাছে সরকার সংলাপকে সামনে আনছেন বলে বিএনপি নেতাদের ধারণা।

 

শুধু কেন্দ্র নয়, তৃণমূলের ভাবনাও একই রকম। গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সারা দেশে দলের বর্তমান ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। প্রতিটি বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা আলাদা ওই বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে দলটির আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনায় তৃণমূলের মতামত জানতে চান নেতারা।

 

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক ব্যক্তি ভোরের আকাশকে বলেন, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। কঠোর আন্দোলন ছাড়া আগামীদিনে সরকার তাদের দাবি মানবে এমন কোনো আশাও তারা করেন না।

 

তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা বলছেন বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দাবি আদায়ে বিএনপি এখন দৃঢ়ভাবে মাঠে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও সঙ্গে রয়েছে। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা এখন এসব ইস্যুতে রাজপথমুখী। এখন বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রলোভনে সরকার ‘নানা টোপ’ দিতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে আওয়ামী লীগ আবারো সংলাপের প্রস্তাব দিতে পারে।

 

মূলত আন্দোলনের গতি কমাতে ও দলের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াতে সরকার সব ধরনের আয়োজন করবে বলেও মনে করেন তারা। কিন্তু বিএনপি যদি ২০১৮ সালের মতো আবারো এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায়, তবে পরিণতি আগের থেকেও খারাপ হবে। তাই ‘ঢাকাকে টার্গেট’ করে তারা আন্দোলনের ছক কষতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

 

যশোরের মনিরামপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য নিস্তার ফারুক ভোরের আকাশকে বলেন, তৃণমূল চায় আন্দোলন। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বলেছি, এই সরকার সংলাপ-সমঝোতা যাই বলুক, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই আগামীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সরকার পতনের কার্যকরী আন্দোলন চাই। তিনবারের এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের মামলা আর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ এখন আন্দোলনের বাইরে কিছু ভাবছে না। কারণ ১০১৮ সালের অভিজ্ঞতা তারা ভুলে যায়নি।

 

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষকে বাঁচাতে ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে অবাধ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে তৃণমূল বিএনপি সেটিই চায়। আশা করছি, এবার কেন্দ্রও তার বাইরে কিছু ভাবছে না।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি ও দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে সব ধরনের আন্দোলন করা হবে বলেও জানান তিনি।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ বা সমঝোতা হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই। কারণ আওয়ামী লীগ বারবারই সংলাপের নামে প্রতারণা করেছে। আন্দোলন নিয়ে কেন্দ্র আর তৃণমূলের ভাবনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

 

দলটির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, বিএনপি এখন মাঠের কর্মসূচিতে। সমঝোতা বা সংলাপ নিয়ে কোনো কিছু ভাবছেন না তারা। সঠিক সময়ে দল সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version