তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে অব্যাহত গণতন্ত্রের কারণেই একজন সফল রাষ্ট্রপতির সম্মানজনক বিদায় ও নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ সম্ভব হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ উত্তর শুভেচ্ছা বিনিময় ও সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনাকালে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আজকে বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন শপথ গ্রহণ করেছেন এবং একইসাথে ২১তম রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ বিদায় নিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম একজন রাষ্ট্রপতি ১০ বছর সম্মানের সাথে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করার পর বিদায় নিয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত আছে বিধায় এটি সম্ভবপর হয়েছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যদিওবা গণতন্ত্রকে নসাৎ করার জন্য গত সোয়া ১৪ বছরে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে, নির্বাচন ভন্ডুল করার অপচেষ্টা হয়েছে। নির্বাচন ভন্ডুল করে গণতন্ত্রের চর্চাকে ব্যহত করা, বিশেষ ধরণের সরকার আনার অনেক অপচেষ্টা হয়েছে, এখনো অব্যাহত আছে। কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাসে একজন রাষ্ট্রপতি ১০টি বছর অত্যন্ত সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালনের পর বর্ণাঢ্যভাবে তাকে আমরা বিদায় জানাতে সক্ষম হয়েছি। আমি মনে করি এতে গণতন্ত্রেরই বিজয় হয়েছে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভবপর হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী এ সময় নতুন রাষ্ট্রপতির জীবনের ওপর আলোকপাত করে বলেন, ‘মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন একজন প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, বিচক্ষণ মানুষ। তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ইতিপূর্বে পালন করেছেন। তিনি জেলা জজ, দুর্নীতি দমন কমিশনার, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। সব ক্ষেত্রে তিনি তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। একইসাথে তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং ’৭৫ এর পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন, পদ্মা সেতু থেকে যখন বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলো তখন দেশের পক্ষে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে আজকে শপথ গ্রহণ করেছেন, তিনি অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে বিচক্ষণতার সাথে বিগত রাষ্ট্রপতির মতো জনবান্ধব রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
সাংবাদিকরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধিনে। সেখানে সরকারের ভূমিকা গৌণ। সরকার শুধু ফ্যাসিলেটেটরের ভূমিকা পালন করে। এমন কি তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত সরকারি দপ্তর এবং তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চাকরি নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সফলভাবে বেশ কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে এবং সামনে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসে নাই। গাইবান্ধার নির্বাচন নির্বাচন কমিশন নিজেই বাতিল করেছিলো, যদিওবা সেই বাতিল প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু এরপরও নির্বাচন কমিশনই বাতিল করেছিলো। অর্থাৎ তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।’
‘আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনের অধিনে আগামী নির্বাচনও একটি অবাধ অংশগ্রহণমূলক, উৎসাহব্যঞ্জক ও সবার অংশগ্রহণে বিশ্বময় গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে, দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি যেমন আগে বিচক্ষণতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন এ ক্ষেত্রেও অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন’ উল্লেখ করেন ড. হাছান।
‘দেশের বিষয় নিয়ে বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেওয়া দেশবিরোধী কাজ’
বিএনপি প্রস্তাবিত রাজনৈতিক বিষয়ে বিদেশিদের মধ্যস্থতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশ আমাদের। এই দেশের মালিক দেশের জনগণ। এবং এ দেশের সরকার নির্বাচিত করার, সরকারকে বিদায় দেওয়ার দায়িত্ব কিম্বা ক্ষমতা বা এখতিয়ার শুধু এ দেশের জনগণের। এ দেশের সরকার পরিবর্তনের এখতিয়ার বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নাই এবং এটি বিদেশিদের কাজও নয়। যে রাজনৈতিক দল বা যে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষণে ক্ষণে দেশের বিষয় নিয়ে বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয়, বিদেশিদের হাতে পায়ে ধরে, সেটি দেশবিরোধী কাজ। বিএনপি যদি এ কথা বলে থাকে সেটি দেশবিরোধী বক্তব্য।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যদি কোনো সমস্যা থাকে সেটি আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে। অতীতেও আমরাই সমাধান করেছি। বিএনপির কোনো বক্তব্য থাকলে তারা নির্বাচন কমিশনে বলতে পারে। তাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে যে তারা সরকারের সাথে কথা বলতে চায় সেটাও তারা বলুক। কিন্তু বিদেশিদের কাছে গিয়ে আমাদের বিষয়াদি নিয়ে ধর্ণা দেওয়া দেশবিরোধী কাজ।’
এ সময় পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দেশ রচনার, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার সার্থকতাটা সেখানেই যে, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। যে পাকিস্তানিদের অনেকেই আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বলেছিল, ‘ভুখা বাঙালি চলে গেছে, খুব ভালো হয়েছে’। আজ সেই পাকিস্তান, পাকিস্তানের জনগণ, রাজনীতিবিদরা এমন কি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও আমাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে যে রাজনীতিবিদরা পাকিস্তানপন্থী কিম্বা পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলো তাদেরই সন্নিবেশ ঘটিয়ে বিএনপি তৈরি হয়েছে। আর ফখরুল সাহেবও যে পাকিস্তানপন্থী, ক’দিন আগে ‘পাকিস্তানই ভালো ছিলো’ বলে সেটা উনি প্রমাণ করেছেন। যে পাকিস্তানে রমজানের সময় ১৬ জন পদদলিত হয়ে মারা গেছে, যে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩১ শতাংশের ওপরে, যে পাকিস্তানকে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না, সেই ‘পাকিস্তানই ভালো ছিলো’ বলেছেন ফখরুল সাহেব।'
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য