-->
শিরোনাম

৫ সিটি নির্বাচনকে ফাঁদ হিসেবে দেখছে বিএনপি

এম সাইফুল ইসলাম
৫ সিটি নির্বাচনকে ফাঁদ হিসেবে দেখছে বিএনপি

এম সাইফুল ইসলাম: আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘ফাঁদ’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এনে বিএনপি নেতারা বলেছেন সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনে সরকার নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। সিটিতে ‘উকিল সাত্তারে’র মতো যদি কাউকে মডেল বানানো যায় সেক্ষেত্রে সরকার লাভবান হবে। এই নির্বাচনকে ফাঁদ হিসেবে ধরে নিয়ে কাউকে অংশ না নিতে কঠোর বার্তা দিয়েছে দলটি। দলীয় মোড়ক থেকে বের হয়ে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

 

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় তারা। যেকোনো অজুহতে কেউ এই ভোটে অংশ নিলে দল তাকে ছাড় দেবে না। সরকারের ফাঁদে তারা পা দেবেন না বলেও স্পষ্ট করেছেন।

 

জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি এখন রাজপথে আন্দোলন করছে। দলটি বর্তমান ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির সংলাপ, ইসি নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটিতে নাম না দেয়াসহ কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়নি। চলমান ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর বিএনপিকে আলোচনার জন্য চিঠি দিলে দলটি তাতে সাড়া দেয়নি। এই ইসির অধীনে স্থানীয় বা কোনো সংসদ উপনির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিএনপি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তও বেশ আগেই নিয়েছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি যখন রাজপথের কর্মসূচিতে, ঠিক সে সময় পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আট মাস আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপির নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ যেন ভোটে অংশ না নেয় সেটিই এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিছুদিন আগে সংসদ উপনির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দলীয় সাবেক সংসদ সংসদ উকিল আব্দুস সাত্তারের মতো কেউ জার্সি পরিবর্তন করবেন না, তার নিশ্চয়তা নিয়েও দলটির চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

 

গত ৩ এপ্রিল ইসি সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিলে আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে দলীয় চাওয়া থেকে সরে এসে বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে। তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনে যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে আরিফুল নির্বাচনে অংশ নেয়ার ‘আভাস’ দিয়েছিলেন। নেতাকর্মীদের তিনি বলেছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি দলের সিগন্যাল পরিষ্কার করবেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র ভোট করবেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

 

বিগত খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও দলের মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুও প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। দলে পদে না থাকলেও তিনি বলছেন, আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেয়া যায় না। তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি ভোট করতে চান। বরিশালে বিএনপি দলীয় সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তৎপরতা শুরু করেন। গাজীপুরে দলীয় নেতা নূরুল ইসলামের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম প্রার্থী হবেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া রাজশাহীর সিটি নির্বাচনেও দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচনের আগ্রহের কথা জানা গিয়েছিল। দল নির্বাচনে না এলে তিনি ভোট করবেন না বলেও জানিয়েছেন। রাজশাহীতে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন রিমনের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় কঠোর বার্তার বিবষয়টি জানার পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহীরা কিছুটা হলেও পিছপা হয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

চলমান অবস্থায় মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেন। সেখানে চলমান আন্দোলন ও সিটি নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত মতামত তুলে ধরেন দলটির নেতারা। নেতারা সবাই একবাক্যে সিটি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছেÑ আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিটি নির্বাচনে সরকার ফাঁদ পাতার চেষ্টা করবে। দলীয় কোনো কোনো নেতাকে ‘উকিল সাত্তারে’র মতো মডেল বানোনোর জন্য সরকার চেষ্টাও করছে। তাই নির্বাচনে দলীয় মোড়ক থেকে বের হয়ে এসে দু-একজন স্বতন্ত্র ভোট করার চেষ্টা করতে পারে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাদের আজীবন বহিষ্কারসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।

 

বিএনপি মনে করছে সরকার পাঁচ সিটির মধ্যে অন্তত যদি দু-একটি সিটিতেও বিএনপির কাউকে বাগিয়ে প্রার্থী করতে পারে সেটি দলটির জন্য বেশ অস্বস্তি হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ সরকার এটিই প্রমাণের চেষ্টা করবে যে, দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ না নিলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলটির অনেক নেতা অংশগ্রহণ করবে।

 

এদিকে, বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে বলে বিএনপির যে দৃঢ় অবস্থান, তা থেকে সরে এসে সিটি নির্বাচনে নেতাদের অংশ নেয়ার আগ্রহেও ক্ষুব্ধ দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিলে বা অংশ নেয়ার পক্ষে মৌন সমর্থন করলে দলটির নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হবে। সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বৈধতা দেয়া নিয়ে দলে যে অস্বস্তি, সন্দেহ ও অবিশ^াস সৃষ্টি হয়েছিল, আবারো তার পুনরাবৃত্তি হবে বলেও মনে করছেন অনেকেই। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

 

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কামিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ অংশ নেয় তার বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বিএনপি এখন দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প কিছু ভাবছে না।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়া। আমরা মনে করছি না কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে যাবে। যদি কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে যায় তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে দল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উকিল সাত্তার মডেল নির্বাচন করতে সরকার তৎপরতা চালাবে এটি অস্বাভাবিক নয়। সে বিষয়ে দল সতর্ক আছে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version