-->
শিরোনাম

নির্বাচনী কৌশলে এগিয়ে আ.লীগ

নিখিল মানখিন
নির্বাচনী কৌশলে এগিয়ে আ.লীগ

নিখিল মানখিন: নির্বাচনমুখী হয়ে পড়েছে দেশের রাজনীতি। আর নির্বাচনী কৌশলে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে অন্য কিছু ভাবছে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির আন্দোলন ও দাবিসমূহ আমলে নিচ্ছে না দলটি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দিয়ে চলেছে তারা। বিদেশি শক্তিনির্ভর বিএনপিকে চাপে রেখে নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করে চলেছে আওয়ামী লীগ। আর সংবিধানের জায়গায় এলেই অসহায় হয়ে পড়ছে বিএনপি।

 

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়ে চলেছে বিএনপি। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত বাগ্যুদ্ধ ও মাঠযুদ্ধে রয়েছে দলটি। কিন্তু জনসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি তারা। জনবিচ্ছিন্ন আন্দোলন দিয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নড়ানো যাবে না। বিএনপি এখন বিদেশি কূটনীতিকদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কূটনৈতিক কৌশলেও এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিদ্যমান সরকারই নির্বাচনের সময় চলমানভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় এ সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে।

 

গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেউ আসুক আর না আসুক, নির্বাচন কারো জন্য থেমে থাকবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আগ্রহ না দেখালেও তলে তলে দলটির অনেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা অনেক আন্দোলন করে, রংবেরঙের আন্দোলন। কখনো পদযাত্রা, কখনো মানববন্ধন। কিন্তু কোনো আন্দোলনেই জনগণ সাড়া দেয়নি। বিএনপি বুঝে গেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচন করে লাভ নেই।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপির দাবি-দাওয়া এবং আন্দোলন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দলটির ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

 

তাই বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে আগামী নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ কামনা করে আওয়ামী লীগ। জনবিচ্ছিন্ন আন্দোলন দিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বিএনপি। আর আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথেই বিএনপিকে মোকাবিলা করা হবে বলে জানান সুজিত রায় নন্দী।

 

সিটি নির্বাচন : বিএনপি আগামী মে ও জুনে সরকারবিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার করতে পারে এমন তথ্য আছে সরকারের কাছে। আর এ সময়টাতেই দেশের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিটির মানুষ ভোট উৎসবে মেতে উঠবে। মেয়র ও কাউন্সিলর পদ ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অন্তত দেড় মাস সিটি করপোরেশন এলাকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। এ সময় চাইলেও বিএনপি এসব সিটিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে সুবিধা করতে পারবে না বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মনে করেন।

 

আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোট যাতে অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়, সেদিকে নজর আছে আওয়ামী লীগের। কারণ, এই ভোটে আওয়ামী লীগের হারানোর তেমন কিছু নেই; বরং বিএনপির জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন।

 

সংবিধানভিত্তিক কৌশল : আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ভোরের আকাশকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যু ও নির্বাচন বিষয়ে বিদেশি পরামর্শ আমলে নেয়ার একমাত্র পথ সংবিধানসম্মত উপায় অবলম্বন করা। তাতে আওয়ামী লীগের দুই কূল রক্ষা পাবে। বিদেশিদের পরামর্শ যেমন রাখা হবে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকারও থাকবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ সরকারের নেই।

 

সুতরাং নিরপেক্ষ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার বিএনপির দাবি কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংবিধানে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা দাবি করেন বিদেশিরা চাপ দিতে পারবে, কিন্তু সংবিধান বা আইন লঙ্ঘনের জন্য চাপ দিতে পারবে না তারা।

 

প্রত্যেক দেশেরই আলাদা আইন-সংবিধান থাকে। সেই নির্দেশিত পথে চলতে হয় সরকারকে। আওয়ামী লীগের অবস্থান এইদিকে থাকলে বিএনপির দাবি মানার চাপ দিতে নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে যাবে বিদেশিরা।

 

কূটনৈতিক তৎপরতা : সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর যে চাপ প্রয়োগ করছে, সেই চাপ নিরসনের জন্য নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। ভারত সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ভারত সফর ও রাশিয়া সফর করেছেন। গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ দিনের সরকারি সফরে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে গেছেন।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনিভায় জাতিসংঘ মিশনে স্থায়ী প্রতিনিধি, অস্ট্রেলিয়ায় হাইকমিশনার ও ডেনমার্কে রাষ্ট্রদূত পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরিয়ে দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে। গত বছর অক্টোবরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি দেশের বাইরে ১৮ দিন ছিলেন।

 

চলতি বছরের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং ইইউভুক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। এতে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

 

গত ২২ মার্চ ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে তার বাসায় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন উভয়পক্ষ।

 

গত ৮ এপ্রিল ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি কূটনীতিকদের পাড়ায় পাড়ায় পদচারণা করছে। জাতিসংঘের কাছে নালিশ দেবে বলেছে। জাতিসংঘের কাছে যত নালিশ করেন, যত আবদার করেন, সালিশ করার এখতিয়ার জাতিসংঘের নেই।

 

বিদেশ থেকে অনেক কূটনীতিক আসে। সরকারের সঙ্গে বৈঠক হয়। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তারা কোনো বৈঠক করে না। গত ১৭ মার্চ ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করে, আর সে আলোকেই আগামী নির্বাচন করবে। আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনমুখী।

 

নির্বাচনমুখী আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পুুরো রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। তাদের দল গোছানোর কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। দলীয় জেলা-উপজেলা সম্মেলন ও কমিটি গঠন শেষদিকে। সুরাহা হওয়ার শেষ পর্যায়ে তৃণমূল কোন্দলও। জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলছে আলোচনা ও দেনদরবার।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ। সংসদীয় আসনভিত্তিক জরিপসহ ত্রিমুখী তৎপরতা চলছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ এবং প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। তাই প্রার্থী বাছাই কার্যক্রমও চলছে খুব সূক্ষভাবে। সব মিলিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনী কৌশলে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version