-->
শিরোনাম

শরিকদের কদর বেড়েছে আওয়ামী লীগে

নিখিল মানখিন
শরিকদের কদর বেড়েছে আওয়ামী লীগে

নিখিল মানখিন: রাজনৈতিক মাঠে বইতে শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচনের আবহ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও আন্তর্জাতিক মহলের পরোক্ষ প্রত্যক্ষ চাপ অনুভূত হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুর্গে। ফলে জোট শরিকদের কদর বেড়েছে আওয়ামী লীগে। জোট শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে দলটি।

 

শরিকদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নানা কৌশলে উপস্থিত থাকছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। ঘন ঘন আলোচনায় বসছেন তারা। মনে ক্ষোভ থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে চলেছেন জোটের শরিক দলের নেতারা।

 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ন্যাপ, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, গণতানেন্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ, গণআজাদী লীগ, বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া) ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নানা কৌশলে রাজনৈকি মাঠ দখলে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। দল এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিদ্যমান কোন্দল নিরসনের পাশাপাশি জোট শরিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছে দলটি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নিজেদের জোট সম্প্রসারণের কাজ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল ১৪ দলীয় জোট শরিকদের।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, নানা কারণে জোটের শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল আওয়ামী লীগের।

 

২০২৩ সালের শেষ সময় পর্যন্ত জোট থাকলেও মাঠে দৃশ্যত একা হয়ে পড়ে দলটি। ভোট বাড়ানোর চেষ্টায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের এককভাবে মাঠে থাকা, শরিক দলগুলোর পাশে না থাকা নিয়ে রাজনীতির অন্দরমহলে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের অন্য দলগুলোর অংশগ্রহণ না থাকায় এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল শুরু থেকেই।

 

দলগুলোর সূত্র জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় জোট শরিকদের ব্যাপারে টনক নড়েছে আওয়ামী লীগের। নির্বাচন সামনে আসায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করা হচ্ছে। সর্বশেষ সংসদ থেকে বিএনপি দলীয় এমপিদের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের দুই শরিক দলকে দুটি আসন ছেড়ে দেয়। এর মধ্যে একটি আসন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে, আরেকটি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে দেয়া হয়েছে।

 

তবে এ নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী জয়ী হলেও হেরে যান বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী। সংশ্লিষ্টরা জানান, উপনির্বাচন ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আওয়ামী লীগের পাশে দেখা যায়নি। তবে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শোক দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন, মে দিবস এ ধরনের দিবসভিত্তিক আলোচনা সভাগুলো একসঙ্গে করে আসছে তারা।

 

রাজপথে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একজোট হয়ে আন্দোলন করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল এর সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা তো ১৪ দলে আছি। নির্বাচনেও আমরা জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেব। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি একসঙ্গে আন্দোলনে থাকার জন্য ডাক দেন, তাহলে অবশ্যই আমরা তাতে অংশ নেব। তিনি বলেন, ১৪ দলের পক্ষ থেকে যদি বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার কর্মসূচি দেয়া হয়, তাহলে করব।

 

ভবিষ্যতে রাজনৈতিক আন্দোলনে শরিকদের পাশে চাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, আদর্শগত দিক দিয়ে আমরা জোট গঠন করেছি। সেই গ্রাউন্ড এখনো বলবৎ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিগুলোকে একসঙ্গে মোকাবিলা করতেই আমরা জোটবদ্ধ হয়েছি। সাম্প্রদায়িক শক্তি বলি আর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বলি তারা এখনো সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের জোটবদ্ধ লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।

 

তাই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ যদি এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে মাঠে থাকে, তাহলে আশা করি তারাও আমাদের সঙ্গে শরিক হবে বলে জানান সুজিত রায় নন্দী।

 

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান ভোরের আকাশকে বলেন, আদর্শিক জায়গা থেকে শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক সবসময়ই ভালো। তবে জোটের মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগটা কখনো একদম স্বাভাবিক আবার কখনো তাতে ব্যত্যয় ঘটে।

 

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু)-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল কাইয়ুম ভোরের আকাশকে বলেন, ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ সম্পর্ক বিরাজমান। অটুট বন্ধনে আবদ্ধ শরিকরা। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও শরিক দলের শীর্ষনেতাদের যোগাযোগ এখন অনেক ভালো বলে জানান আব্দুল্লাহ হিল কাইয়ুম।

 

সম্প্রতি রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা এক বৈঠকে বসেন। এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ছিলেন এমন একটি সূত্র জানায়, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ক্ষমতাসীন দলের একতরফা নির্বাচনী প্রচারণা, শুধুমাত্র ‘নৌকা’র জন্য ভোট চাওয়া এবং তৃণমূলে জোটকে কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে জোটের শরিকরা।

 

জবাবে আমু তাদের আশ্বস্ত করেন, ১৪ দলীয় জোট অটুট থাকবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের নিয়েই পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও জোটের শরিকদের নিয়ে বৈঠক করে আসন ভাগাভাগি করা হবে।

 

সম্প্রতি ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, শরিকদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ আছে, তবে এটি থাকবে না। কারণ ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। আমরা বসে নেই। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।

 

আশা করছি, বিএনপি-জামায়াতসহ যেকোনো অপশক্তিকে মোকাবিলায় শিগগিরই একসঙ্গে রাজপথে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version