আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিতব্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীতা বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে গতকাল রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল-ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চের অনুমতি নিয়ে রিট আবেদনটি দাখিল করা হয় বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী নকিব সাইফুল ইসলাম। এই বেঞ্চেই রিট আবেদনটির শুনানি করা হবে বলে তিনি জানান।
মেয়র পদে ২৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জাহাঙ্গীর আলম। ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। জামিনদাতা হিসেবে ঋণখেলাপি হওয়ায় তার প্রার্থীতা বাতিল করে দেয়া হয়। তবে যে ঋণের জামিনদাতা হিসেবে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা বাতিল হয়, সেই ঋণ পরিশোধের দাবি করেন জাহাঙ্গীর। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। আপিল কর্তৃপক্ষের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার। ৪ মে তার আবেদন খারিজ করে দেন আপিল কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন টঙ্গী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খান। তবে পরের বার ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর।
গাজীপুরের মেয়র পদে থাকাকালে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও বিরূপ মন্তব্য শোনা যায়। এর পরই দেশের বিভিন্ন জেলায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মানহানি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একের পর এক মামলা হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি এবং দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মেয়র পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে ক্ষমা চেয়ে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করে দিয়ে পহেলা জানুয়ারি চিঠি দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর মেয়র পদে বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে তদার দাখিল করা একটি রিট মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। এরইমধ্যে তিনি ২৬ এপ্রিল মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে পরদিন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
৩ এপ্রিল ইসি গাজীপুর সিটিতে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ মে ভোট। তফসিল অনুযায়ী এরইমধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শেষ সময় ৮ মে, প্রতীক বরাদ্দ ৯ মে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য