-->
শিরোনাম

রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন খালেদা জিয়া

এম সাইফুল ইসলাম
রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন খালেদা জিয়া

এম সাইফুল ইসলাম: সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তিতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন! এমন গুঞ্জন এখন রাজনীতির মাঠে। ঈদুল ফিতরের পর থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দসহ বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলের নেতাদের সাক্ষাতের পর বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ডালপালা গজাচ্ছে।

 

তবে দলীয় প্রধান রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন এমন কথা মানতে নারাজ বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির নেতারা।

 

তারা বলছেন, নির্বাহী আদেশে মুক্ত থাকা দলের চেয়ারপারসন এখনো কারান্তরীণ ও গৃহবন্দি। তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই।

 

জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও তিনি সাজাপ্রাপ্ত হন। এরপর তিনি প্রায় দুই বছর কারাগারে ছিলেন। পরবর্তীতে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত হয়।

 

দুটি শর্তে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয় সরকার। শর্ত দুটি ছিল বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া এবং বিদেশ যেতে না পারা। এরপর থেকে তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন। এই দুই শর্তে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস পর পর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

 

সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়। মুক্ত থাকার সময়ে তিনি দুই দফা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

 

এছাড়াও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিসসহ কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত। তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপি গত বছরজুড়ে নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠেও ছিল। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি সরকার। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে খালেদা জিয়া। তবে আগের থেকে কিছুটা হলেও এখন সুস্থ তিনি।

 

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী নানা সময়ে আলোচনায় উঠে এলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সরকারি দলের নেতাদের নতুন আলোচনায় স্থান পান। সেই আলোচনা ছিল খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কিনা। খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি পারবেন না, তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে তর্কযুদ্ধ শুরু হয়।

 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার মুক্ত থাকার শর্তে রাজনীতি করতে পারবেন না এমন কথা নেই। তাই তার রাজনীতি করতে বাধা নেই।

 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ কয়েকজন দাবি করেছিলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত থাকায় খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না।

 

মুক্তির পর থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় থাকা খালেদা জিয়া আবারো নতুন করে ঈদুল ফিতরের পর থেকে নতুন করে আলোচনায়। তিনি রাজনীতি আসছেন এমন গুঞ্জন রাজনীতির মাঠে। অবশ্য এমন গুঞ্জনের নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে।

 

দলীয় সূত্র বলছে, প্রতিবার ঈদের দিন রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যারা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এবারো তার ব্যক্তিক্রম হয়নি। তবে এবার ঈদের পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন সারির কয়েকজন নেতা সাক্ষাৎ করেছেন।

 

তার মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ও যাকারিয়া তাহের সুমন।

 

এছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

 

সাক্ষাৎ শেষে মান্না বলেছেন, খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে দেশের মানুষকে আন্দোলনে শরিক হতে বলেছেন।

 

এছাড়া সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উত্তরার বাসা ছেড়ে গুলশানের বাসায় উঠেছেন। বিএনপি মহাসচিবের গুলশানে বাসা নেয়ার বিষয়টিও খালেদা জিয়ার দেয়া সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।

 

যদিও মহাসচিবের স্ত্রীর অসুস্থতার বিষয়টি মাথায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে তিনি বাসা পরিবর্তন করেছেন বলে দাবি করেছে বিএনপির মিডিয়া সেল। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মহাসচিবের বাসা পরিবর্তন করে গুলশানে নিয়ে আসার পর থেকে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন আগামী দিনে সরকার পতন আন্দোলনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎকারী নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

 

তার ইঙ্গিত মেলে মাহমুদুর রহমান মান্নার কথায়। তবে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসছেন, তা মানতে নারাজ। তারা ভিন্ন কথা বলছেন।

 

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া কার্যত মুক্ত নন। তিনি এখনো গৃহবন্দি। তাই তার রাজনীতিতে আসার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপির কর্মসূচির বিষয়েও তার কোনো পরামর্শ নেয়া হয় না বলেও তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন।

 

তিনি বলেন, যারা খালেদা জিয়ার বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে নিতে চান, তারাই খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কথা রটাচ্ছেন।

 

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। এছাড়া তাকে মুক্তও বলা যায় না। তাই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন এটি সঠিক নয়।

 

খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাদের সাক্ষাতের বিষয়ে তিনি বলেন, দলের অসুস্থ চেয়ারপারসনের সঙ্গে কেউ দেখা করলেই তিনি সক্রিয় হচ্ছেন এটা বলা যায় না।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version