-->
শিরোনাম

হাতপাখার ঝাঁপটা সামলে বন্দরে ভিড়ল খোকনের নৌকা

এসএলটি তুহিন, বরিশাল
হাতপাখার ঝাঁপটা সামলে বন্দরে ভিড়ল খোকনের নৌকা

নদী পথে যাওয়ার সময় বরিশালের খানিক আগেই চরমোনাই পীরের দরবার। সেই পীরের ছেলে মুফতি ফয়জুল করীম যখন এবার মেয়র প্রার্থী হন, তখন বিএনপিবিহীন নির্বাচনও জমে ওঠার সম্ভাবনা জেগে উঠেছিল। ভোটের দিন তার ওপর হামলা উত্তাপও ছড়িয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নৌকা নির্বিঘ্নেই বন্দরে ভেড়ালেন রাজনীতিতে নবীন খোকন সেরনিয়াবাত।

 

সোমবার অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৩ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত), যার প্রার্থী হওয়াটাই ছিল বরিশালবাসীর জন্য চমক। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েই জিতলেন তিনি।

 

বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা হলেও ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে খোকনের দূরত্বই বেশি আলোচিত, যদিও ভোটে জেতার পর ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অভিনন্দন বার্তা পেয়েছেন খোকন। এবারের পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপিসহ নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল না থাকায় ভোট নিয়ে মানুষের স্বাভাবিক সময়ের মতো আগ্রহ তেমন দেখা যায়নি।

 

তার মধ্যে গত মাসে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতে চমক সৃষ্টির পর বরিশালেও ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা নিয়ে অনেকে কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলেন। বিভিন্ন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের যে ভোটের হার, তার সঙ্গে পীরের নিজের জেলায় ভোট বলে এই কৌত‚হলের মাত্রাটা ছিল বেশি।

 

অনেকে মনে করছিলেন, হাতপাখার বড় ঝাঁপটায় দুলে ওঠতে পারে নৌকা। কেননা, সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা নামেননি খোকনের পক্ষে, আবার তারা গোপনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছিলেন বলেও গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। সম্পূর্ণ ইভিএমে অনুষ্ঠিত এই ভোটে ৬ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ফল আসে। তাতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলনের ফয়জুল করীম হাতপাখা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮টি।

 

অর্থাৎ দুজনের ভোটের ব্যবধান ৫৩ হাজারের বেশি। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের পাশাপাশি বৃষ্টির বাগড়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ভোটের হার দাঁড়ায় ৫১ শতাংশ।

 

নেত্রীর আশা আকাক্সক্ষা পূরণ হয়েছে খোকন সেরনিয়াবাত: নৌকা প্রতীকের ফলাফল পেয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আশা আকাক্সক্ষা নিয়ে আমাকে প্রার্থী বানিয়ে আপনাদের মাঝে পাঠিয়েছেন, ভোটের মাধ্যমে আপনারা আমাকে বিজয়ী করে নেত্রীর আশা আকাক্সক্ষা পূরণ করেছেন। নগরীর সদর রোডে সার্কিট হাউসের বিপরীতে নৌকা প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

 

এ সময় তিনি বলেন, বরিশাল বসবাসকারী শান্তিপ্রিয় নগরবাসী সালাম নিবেন। আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আল্লাহর ইচ্ছায় আমি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেছি। আমি সমগ্র বাংলাদেশের গণমানুষের আশার প্রদীপ দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সঙ্গে সঙ্গে এই নগরীর সকল ভোটার, জনগণ এবং আমার দলীয় সকল কর্মী যারা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রতি যেমন কৃতজ্ঞতা জানাই, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সদস্যসহ সাংবাদিকগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে আপনাদের প্রতি দেয়া সকল অঙ্গীকারগুলো পর্যায়ক্রমে আমি বাস্তবায়ন করতে সচেস্ট থাকব।

 

নানকের দূরদর্শীতা আরেকবার দেখল বরিশালবাসী: আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বরিশালবাসী আবারো দেখল। সিটি করপোরেশন নির্বাচন মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। তার এই বিজয়ের ক্ষেত্রে বড় ভ‚মিকা ছিল নানকের। তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন। যদিও জাহাঙ্গীর কবির নানক এই বিজয়ের কৃতিত্ব একা নিতে রাজি নন।

 

তিনি বলছেন, দলীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সাধারণ নগরবাসীর ভালবাসায় আজকের এ বিজয়। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে জেতানো বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছিল জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সামনে। তাইতো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণার শেষ সময়ে রীতিমত ঘাম ঝড়াতে হয়েছে প্রভাবশালী এ আওয়ামী লীগ নেতাকে। বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত বরিশালে আওয়ামী লীগের বিজয় অতটা সহজ নয় এমনটা খোদ নানক নিজেও স্বীকার করেছিলেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version