-->
শিরোনাম

দু'দলেই চলছে হিসেব-নিকাশ

নিখিল মানখিন
দু'দলেই চলছে হিসেব-নিকাশ

নিখিল মানখিন: নির্বাচনী কৌশলে বিএনপির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। পুরোপুরি নির্বাচনমুখী দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এক দফা দাবি আদায়ে অনড় থাকলে আরেকবার ধরা খেতে পারে বিএনপি।

 

নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়তে পারে দলটি। শক্তিশালী বিরোধী দলবিহীন মাঠ পেয়ে যাবে আওযামী লীগ। আর বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করে দেখাবে দলটি। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতেই সীমাবদ্ধ থাকছেন বিদেশি কূটনীতিকরাও।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। দাবি আদায়ের আন্দোলনের নকশা তৈরিতে কূলকিনারা পাচ্ছে না দলটি। কঠোর আন্দোলনের হুঙ্কার দিয়েও মাঠে শক্ত অবস্থানে নেই তারা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগকে চাপে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। তবে আন্দোলনে সফলতা এবং বিদেশিদের আশীর্বাদ ধরে রাখা নিয়ে চিন্তিত বিএনপি।

 

আবারো বিরোধী দল ছাড়া আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পথে হাঁটছে এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ৮ জুলাই দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সেই আশা পূরণ হবে না। এবার আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে গেলে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারবে না।

 

আবারো তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করবে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া সংলাপ নয়। তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ যা-ই বলুক না কেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তার আগে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ঘোষণা সরকারকে সবার আগে দিতে হবে এবং পদত্যাগ করে নির্বাচন দিতে হবে।

 

এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বিএনপিকে আন্দোলনের ঘোরে ফেলে দিয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। সভানেত্রীর নির্দেশনা পেয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলীয় মনোনয়ন বাছাইয়ের কাজও এগিয়েছে অনেক দূর। বিএনপির বাগ্যুদ্ধ, মাঠযুদ্ধ এবং বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতা কোনোটাই আমলে নিচ্ছে না দলটি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে যাবে না আওয়ামী লীগ। যেকোনো পরিস্থিতিতে বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে তারা।

 

এদিকে, বিদ্যমান সংবিধান মেনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি বড় ভুল করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল। তারা বলছেন, বিদেশি কূটনীতিকদের অবস্থান এবং নতুন মার্কিন ভিসানীতির কোথাও বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ নিয়ে বিরোধিতা নেই। মার্কিন ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়ে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে আওয়ামী লীগ।

 

বিএনপি না এলেও নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ১৩ জুন ঢাকার হাজারীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত। যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার ভিসানীতি প্রয়োগ হবে।

 

সম্প্রতি রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আপনারা যদি সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে নির্বাচনের পথে না আসেন, তাহলে রাজনৈতিকভাবে আপনাদের কবর রচনা হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ষড়যন্ত্র চলছে, চলবে কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের উন্নয়ন থেমে থাকবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার কোনো অপশক্তিকে ভয় পায় না।

 

কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত তিন নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয় হয়েছে। আগামী নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো বিপর্যয়ের সময় এসে গেছে। আগামী নির্বাচনও দেশে সংবিধান অনুযায়ী হবে। চেষ্টা করব বিএনপিকে নির্বাচনে আনার। না এলে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

 

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ভোরের আকাশকে বলেছেন, বিএনপির নির্বাচনে আসা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। পশ্চিমা বিশ্বের কূটনীতিকরা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন। একই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিদেশি কূটনীতিকদের আশস্থ করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ যেখানে বিদেশিদের প্রত্যাশা পূরণ করতে প্রস্তুত ও অঙ্গীকারবদ্ধ, সেখানে বিএনপি নির্বাচনে না এলে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ।

 

তখন নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী বিরোধী দল থাকবে না। আওয়ামী লীগের পক্ষে ক্ষমতায় আসা সহজতর হবে। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারলে বিদেশিরাও সন্তুষ্ট হবেন। তখন শত অভিযোগ দাঁড় করিয়েও পাশে কাউকে পাবে না বিএনপি। গ্রহণযোগ্যতা পাবে না তাদের এক দফা আন্দোলন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বেন তারা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version