-->
শিরোনাম

আ.লীগের মনোনয়ন চাইবেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার

আরিফ সাওন
আ.লীগের মনোনয়ন চাইবেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার

আরিফ সাওন: থাকেন নিউইয়র্কে। কিন্তু মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে। ভাবেন দেশের মানুষ নিয়ে; পাশে থাকতে চান তাদের সুখে-দুঃখে। সেই মানসিকতা থেকেই করোনার মতো শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সংকটকালীন সময়ে আমেরিকার সম্মুখসারির সেই যোদ্ধা ছুটে আসেন নিজ দেশে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই। সংকটকালীন সময়ে দেশের মানুষকে সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া। কিন্তু বিধিবাম। দেশে ঢুকেই পড়েন সমালোচনা আর একটি চক্রের ষড়যন্ত্রের বাধায়। তাও ছোটখাটো কোনো ষড়যন্ত্র নয়; রীতিমতো জাতির পিতা বঙ্গবঙ্গুর খুনি পরিবারের সদস্য বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। নামের পদবি খন্দকার থাকায় ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাগ্নে বলে অপপ্রচার চালানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণই মেলেনি। তবে কাজে বাধা দেখে তখন কোয়ারেন্টাইন শেষে তিনি বুকভরা ব্যথা আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফিরে যান আমেরিকায় ।

 

বৈশ্বিক অতিমারিতে দেশের মানুষকে সেবা দেয়ার আশা পূরণ না হলেও থেমে থাকেনি আমেরিকা প্রবাসী ডা. ফেরদৌস খন্দকার। করোনার সময় নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশে মানুষের সেবায় নিজেকে কাজে লাগাতে না পারলেও নিজের এলাকার মানুষের পাশে থেকেছেন সবসময়। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংসদ নির্বাচনের। আগামী নির্বাচনে চাইবেন কুমিল্লা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।

 

গত তিন বছর ধরে তিনি শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন, ইউএসএ ইনক-এর মাধ্যমে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছেন। তিন বছর এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে হলেও মূলত তিনি গত ২০ বছর ধরে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। জীবনের প্রথম বেতনের টাকা দিয়েই শুরু করেন এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগটি। তখন বয়স্কদের তিনি ভিটামিন ওষুধ কিনে দেন। এ পর্যন্ত অন্তত ১২০০ সেলাই মেশিন দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ দিয়েছেন অন্তত ৪ হাজার ব্যক্তিকে। ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন কারিগরি স্কুল।

 

এখন স্বপ্ন বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল করার। সেজন্য জায়গাও খুঁজছেন তিনি। স্বাবলম্বী করতে কয়েকজন প্রতিবন্ধীকে দোকান করে দিয়েছেন। ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন কয়েকজন বিধবা নারীকে। নিজ উদ্যোগে সংস্কার করে দিয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের কয়েকটি সড়ক। সম্প্রতি তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারেরর ছয় শতাধিক সদস্যসহ অন্তত দেড় হাজার মানুষকে হেলথ কার্ড দিয়েছেন। এই কার্ডে দেয়া নম্বরে কল করেই চিকিৎসা পরামর্শ পাবেন এই দেড় হাজার পরিবারের সদস্যরা। তিনি চান নিজের জেলায় একটি মডেল দাঁড় করাতে। ব্যক্তিগতভাবে যে কাজটি করে যাচ্ছেন, এর ব্যপ্তি বাড়াতে এবং স্থায়ী রূপ দিতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। সেজন্য তিনি ভাবছেন সংসদ নির্বাচন করার কথা।

 

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কয়েকজন প্রবীণ বলেন, ডা. ফেরদৌস এই স্বেচ্ছাসেবী কাজগুলো ২০ বছর আগেই শুরু করেন। করোনাকালীন সময়ে এটা বেশি মানুষের নজরে পড়ে। আমেরিকার নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে হলেও তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চান। তার পরিবার আমেরিকায় থাকে। পরিবারও এতে সায় দিয়েছে। আমাদের উচিত হবে এমন মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে ধরে রাখা।

 

সম্প্রতি বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা হয় ডা. ফেরদৌস খন্দকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এনজিও ব্যুরো থেকে রেজিস্ট্রেশন করা আমাদের একটা ফাউন্ডেশন আছে। আমি বিদেশ থেকে সেই ফাউন্ডেশনের জন্য টাকা পাঠাই। আমি শুরু করলাম, আমি দেখতে চাই আমি কতটুকু নিয়ে যেতে পারি। আমি বলতেছি নির্বাচন করতে পারি। যদি ধরেন হয়ে গেল। হয়ে গেলে তো পারমান্যান্ট একটা সল্যুশনের দিকে যাব। আমি সারা বাংলাদেশের জন্য এই ইউনিক আইডিয়া দিয়ে যাব। আর যদি না হয়, তাহলে যারা এ খাতে বিদেশ থেকে ফান্ডিং করে আমি তাদের আনব।’

 

করোনার সময়ে দেশে প্রবেশ করে বাধার মুখে পড়া নিয়ে একটু ছোট আফসোস আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন শেষে বললেই হতো, আমরা কিছুই পাইনি। আমরা এ ঘটনার জন্য দুঃখিত। করতে পারত কিনা, পারত। কিন্তু করেনি। কারণে সব জায়গায় ভূত আছে। এই ভূতের দিকে তাকিয়ে আমি যদি বলি আমি কাজ করব না, তা হলে তো দোষ আমারও হইতো। আমার গ্রামবাসী কী দোষ করেছে। তখন জাতির জন্য কমিটেড ছিলাম। দেখলাম তা পারব না আমি। আমি আমার গ্রাম নিয়ে করব, আমার উপজেলা নিয়ে করব, জেলা নিয়ে করব। এখানে যদি সময় দিই, একটা জেলাকে তো ইউনিক করতে পারব। এটাও বা কম কীসের।

 

কেন তাকে কোভিডের সময় দেশে এসে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমেরিকা এবং বাংলাদেশে কিছু লোক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মূলত তারাই অপপ্রচার চালিয়েছেন। ৪-৫ দিন ইনভেস্টিগেশন করার পর সরকার বুঝে গেছে, যে সবই অপপ্রচার। কিন্তু ততক্ষণে খেলা শেষ।

 

উন্নতি বা উন্নয়নের জন্য বসে থাকা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে কাজের লোক যারা তারা কিন্তু এগুলোতে বাধা ফিল করে না। কিন্তু আমি আশাহত হইনি। আমি চাইলে কিন্তু বসে যেতে পারতাম। তারপরও আমি এখানে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি স্কুল করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে যদি মনে করেন এখানে টিকিট পেয়ে জিতে যাই, তাহলে অন্যরকম অপারেশর হবে। আপনারা বুঝতেই পারবেন না। আমি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। এটা মডেল হবে বাংলাদেশের জন্য। আমাদের এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্য নয়; আমরা এ পর্যন্ত ১২শর মতো সেলাই মেশিন দিয়েছি। এক মাসের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ৩০ জনের ট্রেনিং হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ৯ থেকে ১০ জনকে সেলাই মেশিন দেয়া হয়। গত ১৫ বছর ধরেই সেবা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় এ পর্যন্ত চারশর মতো মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়েছে। ক্যাম্পে সকলকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয়। বিনামূল্যে স্কুলগুলোয় শিশুদের চোখের পরীক্ষা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু দৃষ্টি চেক করব, কার চশমা লাগবে। এর আগে চার হাজার চশমাও দিয়েছি। করোনাকালীন সময়ে দেবিদ্বারের ৯৯ শতাংশ অক্সিজেন আমাদের স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে গেছে।

 

সম্প্রতি তিনি নিজ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য টেলিহেলথ সার্ভিস চালু করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধরেন রাত ১২টার সময় আপনার একটা মেডিকেল হেলথ লাগবে। আপনি কী করবেন? হাসপাতালে যাবেন, গ্রামে? পারবেন না। এ সময় আমাদের দেয়া কার্ডের মোবাইল নম্বরে ফোন করবেন। কার্ড নম্বর জানাবেন। আপনার সমস্যার কথা জানাবেন। সমস্যা বুঝে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার তাকে ফোন করে পরামর্শ দেবেন বিনামূল্যে। ডাক্তার রোগীর কাছে সব শুনে যদি মনে করেন, হাসপাতালে যেতে হবে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু রেফারেল জায়গা আছে, আমরা সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দেব। সেসব জায়গায় আমাদের কো-অর্ডিনেটর আছে। আমাদের অ্যাসাইন করা জায়গা আছে। ভর্তি হওয়া লাগলে সেসব জায়গায় ভর্তি হবে। হাসপাতালের খরচ রোগীই বহন করবেন। তবে গরিব রোগীদের ক্ষেত্রে গত তিন বছর খরচ আমরাই দিয়ে আসছি। মনে করেন একটা অপারেশনে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের মাধ্যমে গেলে সাড়ে চার হাজার টাকায় হয়ে যায়। এরকম আমরা হাজার হাজার রোগীকে সেবা দিয়েছি। অপারেশনের রোগী, যাদের এখানে হবে না। তারা ঢাকায় যায় আমাদের তত্ত্বাবধানে। আমি বেসিক সেবাটা সবার দরজায় পৌঁছে দিতে চাইছি। সেজন্য এই সেবাটা। এই গ্রামের সাড়ে ৩০০ পরিবার, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাড়ে ৬০০, আর উপজেলার প্রায় ১৬০ জন ওয়ার্ড মেম্বার এবং আমাদের ফাউন্ডেশনের ১৬০ জন সদস্য এই কার্ডের আওতাভুক্ত। অর্থাৎ প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে আমরা সেবাটা দিচ্ছি। ছয় মাস পর আমরা দেখব কতটুকু সাফল্য এলো। আর কী করা যায়?

 

খুব শিগগিরই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিল চালুর পর এক বা দুইজন নারী চিকিৎসক দিয়ে প্রতি ওয়ার্ডে একেক দিন ক্যাম্পেইন করব। বাড়িতে যাবে, ক্যাম্পেইন হবে, ওষুধও দিয়ে দেব। লক্ষ লক্ষ টাকার ওষুধ আমাদের কাছে আছে। আমি যখন বিদেশে থেকে আসি, ওষুধও নিয়ে আসি। এখানকার ওষুধও আমরা কিনি। ক্যাম্পেইন থেকে যে রেফারেল হবে, কারো একটা অপারেশন হবে, গলায় একটা মাস, তার জন্য স্পেশালিস্ট সেটাও আমরা ইনিশিয়েট করে দিই। শুধু পারি না দুইটা জায়গায়, এক হলো ক্যান্সার, এক হলো ডায়ালাইসিস। খুব ব্যয়বহুল। আমরা এই কমিটমেন্টে যেতেই পারছি না। আমরা এখনো ট্রায়ালায়ানের মধ্যে আছি। কীভাবে এটা সাসটেইনেবল সিস্টেম হয়।

 

তিনি বলেন, আসলে প্রথম কথা হচ্ছে মানুষের মধ্যে কনফিডেন্ট বিল্ড করা দরকার যে, আমি অন্তত পক্ষে একজন লাইসন্সে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে আছি। এটা দিতে চাই আমরা।

 

দেবিদ্বার উপজেলার শাহীনুর লিপি বলেন, ডা. ফেরদৌস ভাই স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েকজন প্রতিবন্ধীকে দোকান করে দিয়েছেন। অনেক রাস্তা করে দিয়েছেন। কয়েকজন বিধবা নারীকে ঘর করে দিয়েছেন। শুধু চিকিৎসা পর্যন্তই শেষ নয়; ফলোআপও রাখেন। পরবর্তী কোনো জটিলতা হলো কিনা তা দেখভাল করেন। রোগীর বাসায় ফলও পাঠান। ওষুধ কিনে দেন।

 

শুধু দেবিদ্বার উপজেলা নিয়ে এই আসনটি। এটি জাতীয় সংসদের ২৫২নং আসন। এখানে ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ১৪ হাজার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এই আসনটিতে চারবার করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জয় পায়, দুইবার জাতীয় পার্টি এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন।

 

১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিরাজুল হক (বাচ্চু মিয়া), ১৯৭৯ সালে দেওয়ান সিরাজুল হক, ২০০৮ সালে এবিএম গোলাম মোস্তফা ও ২০১৮ সালে রাজী মোহাম্মদ ফখরুল আওয়ামী লীগ থেকে জয় পান। যদিও এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয় পান। তবে তা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নয়; স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি, আবার ১৯৯৬ সালে এবং ২০০১ সালে মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী বিএনপি থেকে টানা চারবার জয় পান। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুইবার জাতীয় পার্টি থেকে জয় পান। এই আসনটিতেই এবার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার।

 

ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও করবেন। তিনি প্রতিমাসেই বাংলাদেশে আসেন এবং প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version