-->
ঢাকায় বিএনপির তারুণ্য সমাবেশ আজ

বিশেষ বার্তা দিতে ব্যাপক জনসমাগমের টার্গেট

এম সাইফুল ইসলাম
বিশেষ বার্তা দিতে ব্যাপক জনসমাগমের টার্গেট

এম সাইফুল ইসলাম: আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকার এ তারুণ্য সমাবেশে ব্যাপক শোডাউন দেখাতে চায় বিএনপি। ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ মিলেই এ সমাবেশ। ইতোমধ্যে এ সমাবেশে পুলিশের অনুমতিও মিলেছে। সমাবেশে যোগ দিতে দুয়েকদিন আগেই অনেকে ঢাকায় চলে এসেছেন।

 

দলের তারুণ্যনির্ভর এ তিন সংগঠনের বাইরে বিএনপির উদীয়মান নেতাকর্মীরাও সমাবেশে উপস্থিত হবেন। এ সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতির মাধ্যমে বিএনপি ফের সরকারবিরোধী বার্তা স্পষ্ট করতে চায় বলে জানা গেছে। এ সমাবেশ থেকে বিএনপি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলেও জানা গেছে।

 

বিএনপি ও আয়োজক সংগঠনের নেতারা বলছেন, নতুন ভোটাররা গত ১৫ বছরে ভোট দিতে পারেননি। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। অনেকে আবার চাকরিবঞ্চিত। কেউ কেউ মামলার ঘানি টানছেন। তাই এ সমাবেশে যোগদানে তাদের ব্যাপক উদ্দীপনা রয়েছে। নতুন ভোটার আর তরুণদের কাছে টানতে জুন মাসের প্রথম দিকে বিএনপি ‘তারুণ্য সমাবেশের’ ঘোষণা দেয়।

 

দলটির অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে এ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সংগঠন তিনটির পক্ষ থেকে পরে দিনক্ষণ ও তারিখ ঘোষণা করা হয়। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪ জুন চট্টগ্রাম, ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট ও ১৭ জুলাই খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশ করেছে।

 

এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করছে। ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরের সবক’টি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সমাবেশের উপস্থিতি ছিল বেশ নজরকাড়া। এবার ঢাকার সমাবেশে সফলভাবে সম্পন্ন করতে চায় দলটি। ইতোমধ্যে এ সমাবেশের জন্য ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

 

দুপুরে সমাবেশের আনষ্ঠানিকতা শুরুর কথা। সমাবেশের জন্য অনুমতিও পেয়েছে দলটি। অনুমতি পেয়ে তিন সংগঠনের নেতারা মাঠে নামেন বিপুল উপস্থিতির মাধ্যমে সমাবেশ বাস্তবায়নে। ঢাকা বিভাগের সব জেলা থেকে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলের নেতারা গতকালও দিনভর কাজ করেছেন।

 

জানা গেছে, সমাবেশের দিন অর্থাৎ আজ সকাল থেকেই অঘোষিতভাবে রাজধানীর প্রবেশমুখ নানা কারণে বন্ধ করে দিতে পারে প্রশাসন। তাই রাতের মধ্যেই বড় অংশের নেতাকর্মীকে ঢাকায় প্রবেশের নির্দেশ দেন দলের নেতারা।

 

এছাড়া আশপাশ থেকে যারা যানবহন বন্ধ করে দিলেও হেঁটে আসতে পারবেন তাদের খুব ভোরে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা জনসমাবেশে উপস্থিতি নিশ্চিতে কৌশল নির্ধারণ করেছেন। সমাবেশে বিপুল উপস্থিতি ঘটিয়ে বিএনপি আবারো বিশেষ বার্তা দিতে চায়।

 

অর্থাৎ তরুণদের বড় একটি অংশ যে সরকারবিরোধী অবস্থানে মাঠে রয়েছে, সেটি প্রমাণ করতে বিপুল উপস্থিতি ঘটানোর পরিকল্পনার সংগঠনগুলোর। এ সমাবেশ ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের তৎপরতায়ও নজর রাখছে বিএনপির কয়েকজন নেতা। সতর্ক থেকে দলটি সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

 

শুক্রবার তারুণ্য সমাবেশের অবস্থান তুলে ধরতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

 

সেখানে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু বলেন, বঞ্চিত তরুণদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তারুণ্যের সমাবেশ।

 

তিনি বলেন, তরুণ সমাজ প্রস্তুত, জনগণের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তারা এখন মুক্তি চায়। এখন আর কোনো প্রতিবাদ নয়, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ভোট ও চাকরি থেকে বঞ্চিত তরুণদের নিয়ে আমাদের তারুণ্যের সমাবেশ। এটি বিএনপির আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়। জনগণের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আন্দোলন করছে বিএনপি।

 

তিনি আরো বলেন, তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে তরুণ সমাজ উজ্জীবিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বারবার জীবন দিয়ে প্রমাণ করছে তারা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে। এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন যান জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীসহ নেতারা।

 

এ সময় জিলানী বলেন, ঢাকার তারুণ্যের সমাবেশে নতুন জাগরণ ও গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। তারুণ্যের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। তরুণদের নিয়ে রাজপথে এ ফ্যাসিবাদী সরকারকে রুখে দেব। জিলানী বলেন, সমাবেশের প্রস্তুতি অনেক আগেই শেষ হয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের সমন্বয়ে এ সমাবেশ হচ্ছে।

 

এদিকে এ সমাবেশে বিএনপির নতুন কর্মসূচি আসবে বলেও জানা গেছে। দলটি আবারো শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশের কথা ভাবছে বিএনপি। দলটি আরো কিছুদিন গতানুগতিক কর্মসূচি দিয়ে ধীরে চালো নীতিতে এগোতে চায়।

 

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, এবার বিএনপি ঢাকাকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে ঢাকা ঘেরাও বা অবরোধ করার প্রস্তুতিও রয়েছে দলটির। ঢাকার বাইরে নেতাকর্মীদেরও রাজধানীতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করা লাগতে পারে বলে দলটি ইতোমধ্যেই বার্তা দিয়েছে।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, তারুণ্য সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন বার্তা আসবে। ঘোষণা করা হবে বিএনপির নতুন কর্মসূচি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version