-->

আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে রাজধানী

নিখিল মানখিন
আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে রাজধানী

নিখিল মানখিন: বিএনপির আগামীকাল ২৭ জুলাইয়ের মহাসমাবেশের দিন রাজধানী দখলে রাখতে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির তিনটি সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে বিএনপির কর্মসূচির জবাব দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগী সংগঠনগুলো সমাবেশের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

 

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগসহ দলের অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোকেও মাঠে রাখার প্রস্তুতি রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে নামবে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন। রাজধানীর প্রধান প্রধান প্রবেশপথ থাকবে তাদের পাহারায়। ফলে পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘাতের শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।

 

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় সমাবেশ করার চার দিন পর ঢাকায় বিএনপির আরেকটি মহাসমাবেশের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। দলটির নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ মনে করে, বিএনপির এ মহাসমাবেশের মূল লক্ষ্য হলো সরকারের ওপর চাপ আরো বাড়ানো এবং বিদেশিদের কাছে জনসমর্থন দেখানো।

 

বিএনপি সুযোগ পেলে সরকার পতনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করতে পারে। তাই ঝুঁকি এড়াতে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশের ডাক দিয়ে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকায় দুটি বড় সমাবেশ করার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে, এর পেছনে দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী কোনো পক্ষের সায় থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্র। তাই খালি মাঠে বিএনপিকে গোল দেয়ার সুযোগ দিতে নারাজ দলটি। রাজনৈতিক মাঠ দখলে রাখতে কঠোর অবস্থানে যেতেও প্রস্তুত রয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

দেশের বিভিন্ন স্থানে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে আগামী ২৭ জুলাই রাজধানীতে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে এ শান্তি সমাবেশ ওইদিন বিকেল ৩টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত হবে।

 

গত সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এদিকে তারুণ্যের জয়যাত্রা নাম দিয়ে যুবলীগ এদিন যে সমাবেশ করতে যাচ্ছে, তাতে ব্যাপক যুব সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনটি। এদিনের সমাবেশে যুবলীগ তাদের জমায়েতের সক্ষমতা ও সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে বলে সংগঠনের নেতারা বলছেন। যুবলীগের সমাবেশটি সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারিখ পরিবর্তন করে ২৭ জুলাই নেয়া হয়েছে। আর এর উদ্দেশ্য বিএনপির যেকোনো নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা প্রতিহত করা বলে যুবলীগ নেতারা জানান।

 

ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার নেতাকর্মীরা এ সমাবেশে অংশ নেবেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা আগামী ২৭ জুলাই শান্তির সমাবেশ করব। তাদের যেকোনো নৈরাজ্যের চেষ্টা প্রতিহত করতেই আমাদের এ সমাবেশ।

 

তিনি আরো বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হবে, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে দেশবিরোধী চক্র, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আবারো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপির বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশের পাল্টা সমাবেশ করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাইনুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাজনৈতিক দল হিসেবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব।

 

স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা তিন সংগঠনই ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে বলব। লক্ষাধিক লোকের জমায়েত হবে। সমাবেশের দিনে ছাত্রলীগ সচিবালয় থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে সমাবেশস্থলের দিকে অবস্থান নেবে। যুবলীগ গোলাপশাহ মাজার থেকে সমাবেশের দিকে অবস্থান নেবে। আর স্বেচ্ছাসেবক লীগ দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সমাবেশস্থলের দিকে অবস্থান নেবে।’

 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঢাকা ও আশপাশের ১১ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন। প্রতিটি জেলা থেকেই অন্তত শতাধিক বাসে যুবলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন। এরই মধ্যে যুবলীগের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর ও জেলা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীদের ২৭ জুলাই দুপুরের আগেই ঢাকায় উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শান্তি সমাবেশ সফল করতে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে নামবেন তারা। আন্দোলন ও মহাসমাবেশের নামে বিএনপিকে কোনো অবস্থায়ই রাজপথে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের আশঙ্কা তো আছেই। বিএনপি সংঘর্ষের দিকে যেতে চাচ্ছে।

 

তাদের উদ্দেশ্যেই পরিস্থিতিকে সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাওয়া। তাদের আন্দোলনের প্রতি জনগণের সমর্থনও নেই, গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান তৈরি করার মতো সাংগঠনিক শক্তিও তাদের নেই। সরকার সুযোগ দিচ্ছে বলে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে পেরেছে। কিন্তু এখন ভয় হলো তারা সন্ত্রাসের দিকে, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের দিকে যাবে। তাই প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে অবস্থান করবে আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version