-->
শিরোনাম

শঙ্কা থেকেই গেল

নিখিল মানখিন ও এম সাইফুল ইসলাম
শঙ্কা থেকেই গেল

নিখিল মানখিন ও এম সাইফুল ইসলাম: আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ কোনো দলকেই ২৭ জুলাই প্রত্যাশিত স্থানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। এ অবস্থায় বিএনপি মহাসমাবেশ এক দিন পিছিয়ে ২৮ জুলাই শুক্রবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে করার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগও বৃহস্পতিবার কর্মসূচি পালন করতে না পারায় শুক্রবার তাদের নির্ধারিত শান্তি সমাবেশ করবে বলে জানা গেছে। ফলে ২৭ জুলাইকে ঘিরে সর্বমহলে যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছিল, তা রয়েই গেল।

 

রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করার কথা ছিল ২৭ জুলাই। এ নিয়ে উভয় দলেরই ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। উভয় জোটই লাখো মানুষ জমায়েত করার ঘোষণা দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় চর মোনাই পীরের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমাবেশ। ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগ। গত ১৫ বছরে এটিই রাজধানীতে তাদের প্রথম যৌথ কর্মসূচি।

 

অস্তিত্ব রক্ষার দাবি আদায়ে মাঠ ছাড়তে নারাজ ছিল বিএনপিও। এমন অবস্থায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কোনো দলকেই তাদের আবেদনকৃত স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। ডিএমপির প্রস্তাবিত ভেন্যূ গোলাপবাগে যেতে রাজি হয়নি বিএনপি। ডিএমপি যে কারণ দের্খিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি, সেই কারণ দেখিয়েই বিএনপি শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

 

এদিকে, আওয়ামী লীগকে তাদের আবেদনকৃত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে দুই দলকেই সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়নি ডিএমপি পুলিশ। ডিএমপির পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর দলটির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়নি।

 

এ অবস্থায় আওয়ামী লীগও তাদের শান্তি সমাবেশ এক দিন পেছিয়ে শুক্রবার ২৮ জুলাই শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ২৭ জুলাই দু’দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সৃষ্ট উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েই গেল।

 

এ দিনও রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে মুখোমুখি হয়ে যেতে পারে সমাবেশে আগত বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। যেকোনো দলের পক্ষ থেকে আসতে পারে উস্কানিমূলক আচরণ। বেঁধে যেতে পারে অনাকাঙ্খিত সংঘাত। এক জায়গায় শুরু হওয়া সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে সারাদেশে। এমন অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। নিজেদের তিন সহযোগি সংগঠন - যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে বিএনপির কর্মসূচির জবাব দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বৃহস্পতিবার শান্তি সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠন। শুরুতে মৌখিকভাবে তাদের সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলেও পরে নিষেধ করা হয়।

 

সে জন্য তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগি সংগঠনসমূহ আওয়ামী লীগের সমাবেশের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগসহ দলের অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোকেও মাঠে রাখার প্রস্তুতি রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

 

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ভোরের আকাশকে জানান, সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মহানগরের প্রতিটি অলিগলিতে সতর্ক নজরদারি করতে বলা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের সব জেলা থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

প্রতিটি জেলা থেকে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কমপক্ষে শতাধিক বাস ছেড়ে আসবে ঢাকায় মহাসমাবেশের উদ্দেশ্যে। বাসগুলো যাতে নেতাকর্মী দ্বারা ভর্তি থাকে, এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে রাজধানীর কোনো স্থানে অবস্থান নিতে না পারেন, সেজন্য মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে পাহারায় থাকবেন নেতাকর্মীরা।

 

সমাবেশের দিন ছাত্রলীগ সচিবালয় থেকে শহিদ নূর হোসেন স্কয়ার হয়ে সমাবেশস্থলে আসবে। যুবলীগ আসবে গোলাপশাহ মাজারের দিক থেকে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিক থেকে এসে যোগ দেবে।

 

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, তারুণ্যের জয়যাত্রা নাম দিয়ে যুবলীগ এদিন যে সমাবেশ করতে যাচ্ছে, তাতে ব্যাপক যুব সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনটি। এই দিনের সমাবেশে যুবলীগ তাদের জমায়েতের সক্ষমতা ও সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে বলে সংগঠনের নেতারা বলছেন। যুবলীগের সমাবেশটি সোমবার (২৪ জুলাই) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারিখ পরিবর্তন করে ২৭ জুলাই নেওয়া হয়।

 

আর এর উদ্দেশ্য বিএনপির যেকোনো নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা প্রতিহত করা বলে যুবলীগ নেতারা জানান। বিএনপি সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করে ২৮ জুলাই নির্ধারণ করায় আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনও ২৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৮ জুলাই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার নেতাকর্মীরা এ সমাবেশে অংশ নেবেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা শান্তির সমাবেশ করবো। তাদের যেকোনো নৈরাজ্যের চেষ্টা প্রতিহত করতেই আমাদের এ সমাবেশ।

 

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হবে, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে দেশবিরোধী চক্র, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আবারও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

 

বিএনপির বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশের পাল্টা সমাবেশ করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাজনৈতিক দল হিসেবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব।

 

স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা তিন সংগঠনই ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে বলব। লক্ষাধিক লোকের জমায়েত হবে।

 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঢাকা ও আশপাশের ১১ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন। প্রতিটি জেলা থেকেই অন্তত শতাধিক বাসে যুবলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন। এরই মধ্যে যুবলীগের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, গাজীপুর মহানগর ও জেলা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার নেতাকর্মীদের আগেই ঢাকায় উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শান্তি সমাবেশ সফল করতে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে নামবেন তারা। আন্দোলন ও মহাসমাবেশের নামে বিএনপিকে কোনো অবস্থায়ই রাজপথে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের আশঙ্কা তো আছেই। বিএনপি সংঘর্ষের দিকে যেতে চাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যেই পরিস্থিতিকে সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাওয়া। তাদের আন্দোলনের প্রতি জনগণের সমর্থনও নেই, গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান তৈরি করার মতো সাংগঠনিক শক্তিও তাদের নেই।

 

সরকার সুযোগ দিচ্ছে বলে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে পেরেছে। কিন্তু এখন ভয় হলো তারা সন্ত্রাসের দিকে, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের দিকে যাবে। তাই প্রস্তুতি নিয়েই আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান করবেন বলে জানান কামরুল ইসলাম ।

 

আওয়ামী লীগ মনে করে, সরকারের পতন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুলের লক্ষ্যে বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। ২০১৩ সালের মে মাসে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর যে চেষ্টা চালিয়েছিল, তাও মাথায় আছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের।

 

এসব বিষয় সামনে রেখেই একই দিন ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ব্যানারে পালটা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উপসর্গ দেখা গেলেই তা কঠোর হস্তে মোকাবেলা করবেন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version