-->
শিরোনাম

উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন
উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ

নিখিল মানখিন: ফের উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ জোট। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিয়ে পুরোপুরি নির্বাচনমুখী দলটি। চলছে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্বাচনী জনসংযোগে মুখর হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকাসমূহ। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নানা সমাবেশে বা সাংগঠনিক আয়োজনে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

সর্বশেষ গত ৬ আগস্ট গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভায় সারা দেশ থেকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দলীয় নেতাদের ডেকে এনে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আর বিদেশি কূটনীতিকদের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি উচ্চারিত না হওয়ায় হতাশ বিএনপি জোট, প্রশান্তি আওয়ামী লীগে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেড়েছে বিদেশি শক্তির তৎপরতা। পাওয়া যাচ্ছে বিদেশিদের অযাচিত হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত। বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতা মোকাবিলা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দেশের স্বার্থ রক্ষায় বিদেশিদের কড়া জবাব দিতেও দ্বিধা করছে না দলটি। নিজেদের স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে তারই প্রমাণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

কূটনৈতিক মোকাবিলা: পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, গত কয়েক বছরে নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর বৈদেশিক চাপ বেড়ে গিয়েছিল। তবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা সামাল দিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ। তিক্ততা চরম পর্যায়ে যাওয়ার আগেই দলটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সুনজরে পড়েছে বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকার। বাংলাদেশে আগমন ঘটছে বিশ্বের একের পর এক প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদের।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। চীন সফর করে এসেছে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে দেশটিতে সফরে রয়েছে আওয়ামী লীগের ৫ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

 

গত ৬ আগস্ট বিকেল ৫টায় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দিল্লির উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তারপর দিল্লি সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনের আগে এটিই হবে তার শেষ ভারত সফর। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর হতে পারে আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর।

 

ওই সময় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তার। এই সফরে সম্মেলনের বাইরেও ভারতের নেতৃত্বের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হবে এবং তাতে নানা বিষয়ে আলোচনা হবে আওয়ামী লীগ প্রধানের। এর আগে এপ্রিলে জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, জুনে কাতার ও সুইজারল্যান্ড সফর করেছেন।

 

দেশের ভেতরেও বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে চলছে আওয়ামী লীগের একের পর বৈঠক। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশন টিম, যুক্তরাষ্ট্রের সিভিলিয়ান সিকিউরিটি, ডেমোক্রেসি ও হিউম্যান রাইটসবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, মানবাধিকারবিষয়ক ইইউর বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক প্রতিনিধির সঙ্গে বেঠক করেছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

 

বিএনপিকে মোকাবিলা: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২২ সালের শেষ সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশ করে আসছে আওয়ামী লীগ। বাগ্যুদ্ধেও এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। মে মাসের দিকে শান্তি সমাবেশের পরিবর্তে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেয় দলটি।

 

ওই সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন শেখ হাসিনার সরকারকে পতনের জন্য এক দফা ঘোষণা দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর ঘোষণা দেন রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিএনপির জেলা আহব্বায়ক। আমরা অনেক শান্তি সমাবেশ করেছি। নেতাকর্মীদের বলব, আর শান্তি সমাবেশ নয়, তাদের প্রতিরোধ করা হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। গত কয়েক মাসে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির বিপরীতে বিশাল আকারের সফল কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ।

 

দলীয় সভানেত্রীর আপসহীন নেতৃত্ব: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতে আপসহীন নেতৃত্বের পরিচয় দিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের শেষ নেই। একটি ঘটনা ঘটলেই চলে পশ্চিমা বিশ্বের একের পর এক বিবৃতি। তীব্র চাপের মাঝেও নিজের অবস্থানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

বিদেশিদের দল ও দেশবিরোধী বক্তব্য ও কর্মকান্ডের স্পষ্ট জবাব দিতেও দ্বিধা করেন না তিনি। গত ১৯ জুলাই রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে যারা এ দেশের নির্বাচন নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাদের আসল উদ্দেশ্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়। তারা মূলত অর্থনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। তিনি খুন হয়েছেন, আমিও হতে পারি। যা হয় হবে, কিন্তু আমি কোনো অন্যায় চাপের কাছে মাথা নত করব না।’

 

নির্বাচনী প্রস্তুতি: নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে আওয়ামী লীগ জোটে। চলছে দলটির নির্বাচনী প্রস্তুতি। জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ নিজ এলাকায় দলীয় মনোনয়ন পেতে দলীয় হাইকমান্ডের নজরে পড়তে নানা উপায়ে শোডাউন করে যাচ্ছেন দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জেলা ও বিভাগীয় নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রথম ধাপ শেষ করেছে আওয়ামী লীগ।

 

১৪ দল: জোট শরিকদের কদর বেড়েছে আওয়ামী লীগে। জোট শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে দলটি। শরিকদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নানা কৌশলে উপস্থিত থাকছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। ঘন ঘন আলোচনায় বসছেন তারা। মনে ক্ষোভ থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে চলেছেন জোটের শরিক দলের নেতারা।

 

গত ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের পক্ষে একটি নতুন রাজনৈতিক জোটকে মাঠে নামানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।

 

বিদেশি কূটনীতিকদের মুখে নেই ‘ তত্ত্বাবধায়ক ’ শব্দ: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ত্বাধীন সরকারের বিরোধী নানা বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পশ্চিমাবিশ্বের কূটনীতিকরা অনেকটা বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাহস ও শক্তি সঞ্চার করে। গতি বেড়ে যায় বিএনপির আন্দোলনের। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বিদেশি কূটনীতিকের মুখে ‘ তত্ত্বাবধায়ক’ শব্দটি উচ্চারিত হয়নি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে কোনো কথা বলছেন না তারা।

 

সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি উঠে আসছে বিদেশি কূটনীতিকদের আলাপচারিতায়। শর্ত মেনে নিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে এমন শর্ত বা পরামর্শ থাকছে না তাদের আলাপে। অর্থাৎ নির্বাচনের বিষয়ে নিজেদের সৌজন্যমূলক কথাবার্তা ও দায়িত্ব পালনেই সীমাবদ্ধ রাখছেন ক‚টনীতিকরা। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কূটনীতিকদের এমন ভুমিকায় মন ভেঙে যায় বিএনপির আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের। হতাশা নেমে এসেছে আন্দোলনে। বর্তমানে তারা অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গেছেন।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপি জোটের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র কখনো আলোর মুখ দেখবে না। আওয়ামী লীগ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তাই খুব বেশি সুবিধা নিতে পারছে না বিএনপি। আওয়ামী লীগ জোটে ইতোমধ্যে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। মাঠে-প্রান্তরে জনগণের দ্বারে দ্বারে নির্বাচনী জনসংযোগ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিএনপির আন্দোলন অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে দেশের জনগণ।

 

সোমবার এক দলীয় বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে এবং জনগণ দ্বারা বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি নেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা একেক সময় একেক কথা বলে। বিএনপির তথাকথিত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলামরা এখন পাগলের প্রলাপ বকছে। কখনো বিদেশি প্রভুদের কৃপা প্রত্যাশায় তাদের স্তুতি করে। আবার কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version