এম সাইফুল ইসলাম: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে যাওয়ার দুদিন পর দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস সস্ত্রীক গেলেন দেশটিতে। কয়েক মাস থেকেই সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গুঞ্জন রয়েছে, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমদ চৌধুরীও দু-একদিনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির এক দফা আন্দোলন চলাকালে দলটির একের পর এক জ্যেষ্ঠ নেতাদের সিঙ্গাপুরে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন আর গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, দলটির নেতারা চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন নাকি সেখানে রাজনৈতিক ‘বিশেষ মিশন’ আছে?
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রাহাত আরা বেগম এবং ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ।
মহাসচিবের একান্ত সহকারী মো. ইউনুস আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘাড়ে ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়ে। এছাড়া তার গলার ধমনিতে রক্ত চলাচলেও জটিলতা রয়েছে। তখন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়।
সর্বশেষ চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল। এবার তার ফলোআপ করানোর কথা রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী রাহাত আরা সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল সন্ত্রীক সিঙ্গাপুরে যাওয়ার দুদিন পর দেশটির উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। গতকাল শনিবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন তারা।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, ফলোআপ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।
এছাড়াও গত ২৭ জুন থেকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ব্রেইন স্ট্রোক করে গত ১৮ জুন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানে ৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল সিঙ্গাপুরের নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ইউ শেন শাই-এর অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দলটির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির বিদেশবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও দু-একদিনের মধ্যে সিঙ্গপুর যাবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন যুগ্ম-মহাসচিব ভোরের আকাশকে বলেছেন, সিঙ্গাপুরে দলের যেসব নেতারা চিকিৎসার জন্য গেছেন, তারা প্রকৃতপক্ষেই অসুস্থ। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গুরুতর অসুস্থ। এছাড়া মহাসচিব দেশ ত্যাগের আগের দিন ২৩ আগস্ট বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের একটি কর্মসূচিতে অংশ নেন। অসুস্থতার কারণে সেখানে তিনি বক্তব্যও সঠিকভাবে শেষ করতে পারেননি।
তার দাবি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে রয়েছেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সার্বিক করণীয় নিয়ে তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। এমন ঘটলে তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।
এদিকে, বিএনপি নেতাদের একের পর এক সিঙ্গাপুরে যাওয়ায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ তোলপাড় হয়েছে। যদিও বিএনপি বলছে, দলের নেতারা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। তারপরও অনেকের ধারণা, চিকিৎসা ছাড়াও বিশেষ কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা কর্মকৌশল নির্ধারণী বৈঠক সেখানে হতে পারে। কারণ দলটির নেতারা যখন সিঙ্গাপুরমুখী তখন বিএনপি ও সমমনা দল ও জোটসমূহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ‘এক দফা’ আন্দোলনে মাঠে রয়েছে।
এছাড়া বেশ কিছুদিন থেকেই থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি চিকিৎসার জন্যে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে দাবি করলেও ইতিমধ্যে একটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। অনুপ্রবেশের মামলায় চলতি বছরের মার্চে ভারতের শিলং আদালত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খালাস দেন। এর কিছুদিন পর তিনি দিল্লি যান। চিকিৎসার জন্যে তিনি স্ত্রীসহ এখন সেখানে অবস্থান করছেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য