এম সাইফুল ইসলাম: এবার নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা-ই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দলটির নেতাদের। তারা বলছেন, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দলীয় চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ নিয়েই এবার তারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছেন। এদিকে আজ শুক্রবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলটি রাজধানীসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
কয়েক বছর ধরে দলটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একই ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এবারো সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপির পক্ষ থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারের পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। বিকেল ৩টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করবে দলটি। র্যালিটি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজধানী মার্কেটেকে গিয়ে শেষ হবে। র্যালিতে বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে ইতোমধ্যে দলের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংসদ নির্বাচনের আগের এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে বিপুল উপস্থিতির মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিতে চাইছে। সেখান থেকে সরকারকেও বিশেষ বার্তা দিতে চান তারা। এছাড়া সারা দেশের ইউনিটগুলোকেও সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকালে বিএনপি সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা। কারণ গত দুবারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনদের সহজ জয় হবে। ফের আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে বিএনপি নেতাকর্মীরা আরো হামলা-মামলায় জর্জরিত হবেন। কঠোর আন্দোলনে ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগের পর দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারলে বিএনপি ও সমমনারা জয়ী হলে সরকার গঠনের আশা রয়েছে। সরকার গঠন করতে পারলে দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্ত করা সম্ভব হবে।
এছাড়া দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত বিদেশে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে এসে রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন। দলটির নেতাকর্মীরা হামলা মামলা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন বলে মনে করছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কী চ্যালেঞ্জ বা দলের হাইকমান্ডের কাছে কী প্রত্যাশা এমন প্রশ্নের উত্তরে সাতক্ষীরা কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বিএনপি যে শক্তভাবে মাঠে আছে, সেটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ উপস্থিতির মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। বর্তমান সরকারকে হটানোই বিএনপির এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকারকে হটাতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই।’
যশোর সদর উপজেলার ঘুরুলিয়া ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী বলেন, ‘কথা একটাই মানুষ ভোট দিতে চাই। ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারলে সরকারের পতন হবে। মানুষ ভোট দিতে পারবে এমন নির্বাচন আদায় করাই আমাদের প্রধান চাওয়া।’ এ বিষয়ে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় ও দলের চেয়ারপারসনের মুক্তিই এখন দলের বড় চ্যালেঞ্জ। তৃণমূল কঠোর আন্দোলনে আছে।’ সঠিক নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির বিদেশ বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, ‘দেশে যে অরাজকতা চলছে, তা বেশিদিন চলবে না। মানুষ তার হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনবে। দেশে মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা এখন বিএনপি বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।’
জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন। এরপর ১৯৭৭ সালে ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগ দল) প্রতিষ্ঠা করেন। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ছিলেন এ দলের সমন্বয়ক। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাগ দল বিলুপ্ত করে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করা হয়। জিয়াউর রহমান হন দলের চেয়ারম্যান। ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান বিপথগামী সেনাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এরপর এ দলের সভাপতি নির্বাচিত হন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। এইচএম এরশাদের সামরিক শাসন চলাকালে ১৯৮৪ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি।
এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে কিছুদিনের জন্য সরকার গঠন করেছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। এরপর জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পাস করে বিএনপি সরকার। পরই সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ২০০১ সালে ফের নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।
১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ওই দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল ছিল বিএনপি। ২০০৮ সালে নির্বাচনী জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর ফেরত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।
কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে হেরে নির্বাচনে অংশ নিলে পরাজিত বিএনপির। অনেকটাই একতরফা ওই নির্বাচনের পর দলটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি এখন রাজপথে আন্দোলন করছে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য