-->

টানা আন্দোলনে বিএনপি পর্যবেক্ষণে আ.লীগ

নিখিল মানখিন
টানা আন্দোলনে বিএনপি পর্যবেক্ষণে আ.লীগ

নিখিল মানখিন: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালিত হলেও এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে সফলতা দেখাতে পারেনি বিএনপি। তারা অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গেছে।

 

এবার ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে তারা। তবে বিদেশি কূটনীতি মোকাবিলায় সফলতা পেয়ে প্রশান্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ। সরাসরি প্রতিরোধ নয়, বিএনপির টানা কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

 

চলতি বছরের নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান। গত রোববার দুপুরে কিশোরগঞ্জের সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান এ কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, চলতি বছরের নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।

 

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ কিন্তু আমাদের ওপর নির্ভর করে না। দলের অংশগ্রহণ করা নির্ভর করে দলের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। এতে আমাদের এখতিয়ার নেই। তবে আমরা নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করব বলে জানান মো. আনিছুর রহমান।

 

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সৃষ্ট সংকট সমাধানে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ নেই। নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়ে এক দফা আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। আর বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে অনড় রয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে সামনের দিনগুলোয় দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

টানা আন্দোলনে বিএনপি: বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। টানা ১৫ দিনব্যাপী এ কর্মসূচি আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। কর্মসূচির মধ্যে রোডমার্চ এবং সমাবেশ রয়েছে।

 

সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এটি সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের বিএনপির সপ্তম কর্মসূচি ঘোষণা। তিনি বলেন, আগামীকাল ঢাকা জেলার জিনজিরা, কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ হবে; ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভৈরব- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেটে রোডমার্চ; ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় বাদ জুমা সারা দেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

 

এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করে বিএনপি। সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, জোট ও বিএনপির সমমনারাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ কর্মসূচি পালন করে। সেটি ছিল সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের বিএনপির ষষ্ঠ কর্মসূচি।

 

এর আগে এক দফা আন্দোলনের পঞ্চম কর্মসূচি ছিল গত ২৫ আগস্ট। ওইদিন বিএনপি এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, জোট ও বিএনপির সমমনারা ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করে।

 

গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর থেকে এক দফা দাবি আদায়ে রাজপথে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এসব কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী জোটগুলোও সংহতি জানাচ্ছে। এক দফা ঘোষণার পর গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ২৯ জুলাই ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর আগে গত ১১ ও ১৮ আগস্ট গণমিছিল হয়।

 

রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষ জেগে উঠেছে, রাজপথে নেমেছে। রাজপথে এই সরকারকে পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরব। আওয়ামী লীগ আবারও নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে চায়। আমরা নির্বাচন নিয়ে পাতানো খেলা খেলতে দেবো না।

 

আন্দোলন পর্যবেক্ষণে আওয়ামী লীগ: বিদেশ কূটনীতিতে আবার আলোচনায় আওয়ামী লীগ। এক মাস আগেও পশ্চিমা বিশ্ব এবং বিবৃতিদাতাদের হস্তক্ষেপে প্রবল চাপে ছিল দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বিদেশ কূটনীতিতে বিরোধী জোটকে পেছনে ফেলে আবার এগিয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

বিশ্ব নেতাদের বাংলাদেশ সফর ও ইতিবাচক আলোচনা এবং ব্রিকস সম্মেলন ও জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উজ্জ্বল উপস্থিতি দেশের অসাধারণ কূটনৈতিক সফলতা বয়ে এনেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্ব নেতারা। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের ৭৮তম সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। দেশে ফিরবেন আগামী ৪ অক্টোবর। এই দীর্ঘ সময়ে সম্মেলনের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেয়ার পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ভেতরের রাজনীতিতেও এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০২২ সালের শেখ দিক থেকে এপর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশ করে আসছে দলটি। শান্তি সমাবেশের নামে তারা অনেকটা বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছেন। একেকটি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের তীব্র চাপে পড়তে হয়েছে।

 

যা তা অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, লোক সমাগম ঘটিয়ে বেশ কয়েকটি বড় কর্মসূচি সফল করেছেন তারা। আওয়ামী লীগ এবং তার ভ্রাতৃপ্রতি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। দলটি এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখরিত দেশের মাঠ প্রান্তর। নির্বাচনী ব্যাপনার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে দেশ। সব মিলিয়ে প্রশান্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

গত ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলনে জনগণ নেই। তাদের আন্দোলনের বাজার ভেঙে যাচ্ছে। বিএনপির আন্দোলনে শুধু আছে তাদের নেতা-কর্মী। তাদের আন্দোলনের বাজার ভেঙে যাচ্ছে। নেতিবাচক রাজনীতির কারণে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।

 

আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে আছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, কিন্তু ওদের (বিএনপি) নেতা নেই। আজকে লাফালাফি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক করেছেন...দিন যায়, মাস যায়, দেখতে দেখতে ১৫ বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর? বিএনপি মানুষের মনে আস্থা রাখতে পারছে না। তাদের আন্দোলনের ধরন অনুযায়ী আওয়ামী লীগ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় দলের নেতাকর্মীরা সব সময় প্রস্তুত আছেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

 

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে যে কর্মসূচিই নেয়া হোক না কেন, তাদের মূল লক্ষ্য ঢাকা। রাজধানীকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা, অচল করে দেয়া এবং শেষে লাগাতার অবস্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করা বিরোধীদের লক্ষ্য। ফলে আওয়ামী লীগ ঢাকা ও এর আশেপাশে শক্ত অবস্থান ধরে রাখার পক্ষে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সেভাবেই প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরের কর্মসূচিতে কোনো সমস্যা হলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহজেই সমাধান করতে পারবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় ডুবেছে বিএনপি। নেতাদের প্রতি কর্মী ও সমর্থকদের আস্থা আর নেই। একটি গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের নামে দেশের মানুষ ও সম্পদের ক্ষতি হতে দেয়া হবে না। বিএনপি কী কর্মসূচি দিল না দিল, এই নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথাব্যথা নেই।

 

বিএনপি নৈরাজ্য করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা প্রতিহত করবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে যা যা করণীয়, তা করবে। বিএনপির টানা কর্মসূচি কোন দিকে গড়ায় তা মনিটরিং করছে আওয়ামী লীগ। তাদের কর্মকান্ড বিবেচনা করে মাঠে কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান সুজিত রায় নন্দী।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version