সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কর্যকর হওয়ার প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘কোনও একটা নীতি (ভিসা নীতি) নিয়ে কারও পুলকিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এই নীতি তাদের বিরুদ্ধেই প্রযোজ্য হবে, যারা নির্বাচনে বাধা দেবে।’
আজ রোববার প্রীতিলতা ওয়েদ্দারের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
আলোচনা সভায় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজ বিএনপি নানা ধরনের কথা বলে। ভিসানীতি ঘোষণা করার পর এক ধরনের কথা বলে, আবার পত্রিকায় খবর আসার পর আরেক ধরনের কথা বলে। এগুলো বলে কোনও লাভ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। স¤প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ সেটি প্রমাণ করে। তাদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা এবং বহুমাত্রিক সম্পর্ক দিন দিন দৃঢ় হচ্ছে।’
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু পরাশক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেই রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, সেই ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে আমাদের পূর্বসূরী মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। আজও অনেকে চোখ রাঙায়, অনেক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হয়।’
গত ১৫ বছরে দেশের অগ্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করার জন্য দেশের ভেতরে ও বাইরে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এখনও বহু ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা কোনও রক্তচক্ষুকে পরোয়া করেন না। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বেড়াজালকে ছিন্ন করে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধীদের নতুন সংস্করণ মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে দেশবিরোধী অপশক্তি, যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই নতুন সংস্করণ হচ্ছে বিএনপি এবং তাদের সহযোগী হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। যারা শুধু দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেনি, বরং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে অস্ত্র ধরেছিল। তাই এই বিএনপি-জামায়াত চক্র আজকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। আগামী নির্বাচনকে ভন্ডুল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আগামী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে যদি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসেন, আমরা তাদের স্বাগত জানাই। তবে কেউ না এলেও কোনও অসুবিধা নেই। এই নির্বাচন আমাদের, এই দেশ আমাদের। এখানে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটি আমরা ঠিক করবো। কাউকে আমাদের গণতন্ত্র শেখাতে হবে না।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যারা দেশে দেশে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে, যাদের নিজের দেশে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন, যাদের দেশে পার্লামেন্ট ভবনে আক্রমণ হয়, তাদের আমাদের গণতন্ত্র শেখাতে হবে না। আমাদের দেশ আমাদের। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা আমরা কীভাবে করতে হয় আমরা জানি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অবশ্যই থাকবে।’
প্রীতিলতা ও সূর্যসেনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রীতিলতা যেভাবে আত্মাহুতি দিয়েছিল, এটি সমস্ত ভারতীয় মুক্তিকামী মানুষদের অনুপ্রাণিত করেছিল, উদ্বুদ্ধ করেছিল।
প্রীতিলতা-সূর্যসেন যেভাবে দেশ মাতৃকার জন্য জীবন দিয়েছেন, সেটি ভারতীয় মুক্তির সংগ্রাম এবং আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বারে বারে যুগে যুগে প্রেরণা জুগিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও যোগাবে। আজকে তাই প্রীতিলতা ও সূর্যসেনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরি সভাপতি কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, একুশেপদক প্রাপ্ত, দৈনিক ভোরের আকাশের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. বলরাম পোদ্দার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য নিখিল মানখিন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শিপংকর শীল প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য