-->
শিরোনাম
নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে কমিটি আওয়ামী লীগের

গুরুত্ব দেয়া হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জকে

মোতাহার হোসেন
গুরুত্ব দেয়া হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জকে

মোতাহার হোসেন: এশীয়ার প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘নির্বাচনী ইশতেহার’ প্রণয়ন ও ঘোষণার উদ্যোগে নিয়েছে। আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, স্মার্ট,কর্মমুখী, এবং তরুণ-যুবসমাজকে আকৃষ্ট করার মতো চমক থাকছে এই ইশতেহারে। একই সঙ্গে ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শতভাগ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বহুবিধ প্রস্তাবনা। থাকছে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যাপক কর্মসূচি। বেশি মাত্রায় জোর দেয়া হবে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের। ইশতেহার প্রণয়নে যুক্ত একজন প্রভাবশালী সদস্য  শনিবার দৈনিক ভোরের আকাশকে এই তথ্য জানান। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রত্যাশা, এই ইশতেহার তরুণ যুব সমাজসহ দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করবে।

 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আহব্বায়ক এবং দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ সদস্যসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। উপ-কমিটির সদস্যরা হলেন ড. হাছান মাহমুদ, মশিউর রহমান, অনুপম সেন, খন্দকার বজলুল হক, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, ড. শামসুল আলম, ডা. দীপু মনি, সাজ্জাদুল হাসান, বিপ্লব বড়ুয়া, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ওয়াসিকা আয়েশা খান, শ ম রেজাউল করিম, মোহাম্মদ এ আরাফাত, মাহফুজুর রহমান, মাকসুদ কামাল, সাদেকা হালিম, জুনায়েদ আহমেদ পলক, সায়েম খান, শেখর দত্ত, খায়রুল হোসেন ও তারানা হালিম।

 

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দলের নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনার বিস্তারিত থাকবে। ‘রূপকল্প ২০৪১’কে ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১; স্মার্ট ডেল্টা বিনির্মাণে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০,’ নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২৬-২০৩০, দশম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০৩১-২০৩৫, একাদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০৩৬-২০৪০-এর বিস্তারিত থাকবে এবারের ইশতেহারে।

 

ইশতেহার প্রণয়নে যুক্ত একজন সদস্য জানান, চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং এর সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া এবং তোলার বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের মূল ভিত্তি হবে চারটি। এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। ২০৪১ সালের মধ্যে

 

এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের ঘোষণা থাকছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্যসচিব সেলিম মাহমুদ জানান, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নবিষয়ক উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এই উপ-কমিটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়ন করবে।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যাওয়ার আগেই এই উপ-কমিটির অনুমোদন দিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার উপ-কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির আহব্বায়ক ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

 

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সভায় নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে নেতাদের কাছ থেকে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তাব চাওয়া হবে। উপস্থিত নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। সময়ের দাবি বিবেচনায় কোনো বিষয়গুলো যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হবে। ২০১৮ সালে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের মূল্যায়ন করা হবে। এই ইশতেহারের কতটুকু বাস্তবায়ন হলো, সে বিষয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে।

 

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনী ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব পাবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হবে। ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের পুরো সুফল পেতে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ঘরে তোলার প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করা হবে।

 

সেখানে থাকবে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য নতুন বাজার অনুসন্ধানের পরিকল্পনার কথা। অভ্যন্তরীণ ডিজিটাল বাজার সম্প্রসারণ ও মানুষের ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়েও পরিকল্পনা উল্লেখ থাকবে। রোবটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলজির মতো অত্যাধুনিক বিষয়গুলোতে সম্পৃক্ততা বাড়াতে বড় ধরনের পরিকল্পনা থাকবে। এ ছাড়া থাকবে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন পরিচালনা ও বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা। কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশে নানা অঙ্গীকার থাকবে ইশতেহারে।

 

দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার শুধু ক্ষমতায় গিয়ে আগামী পাঁচ বছর কী করা হবে সেটা নয়। এখানে দীর্ঘমেয়াদি নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ থাকবে। ইশতেহার কয়েকটি প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রণয়ন করা হবে।

 

ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির একজন নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের রূপকল্প ঘোষণা করেছেন। তিনি এই রূপকল্প বাস্তবায়নে ১১টি পরিকল্পনার কথা এ বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন। এই ১১টি পরিকল্পনা দলের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত হবে।

 

প্রসঙ্গত: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। ওই ইশতেহারে ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার রূপরেখা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

 

দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানায়, এবারের ইশতেহারে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং মাথাপিছু গড় আয় পাঁচ হাজার ৯০৬ ডলারের ওপরে নেয়ার ঘোষণা থাকবে। একই সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ এবং মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ ডলারের ওপরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার বিস্তারিত থাকবে।

 

সূত্রটি জানায়, ২০৩১ সালের মধ্যে দেশে চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা থাকবে।

 

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিবেচনায় নেয়া হবে। এই দুটি বৈশ্বিক সংকটের কারণে ২০১৮ সালে ঘোষিত ইশতেহার বাস্তবায়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ধরনের সংকট মোকাবিলার কথা মাথায় রেখে আগামী ইশতেহারের পরিকল্পনাগুলো নেয়া হবে।

 

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির সদস্যসচিব সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম, তার ধারাবাহিকতা থাকবে আগামী ইশতেহারে। বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখে আমাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই, সেই পরিকল্পনাগুলো থাকবে ইশতেহারে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version