-->
শিরোনাম

পাকিস্তানও আমাদের উন্নয়নের প্রশংসা করে, অথচ দেশে সেভাবে হয় না: তথ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
পাকিস্তানও আমাদের উন্নয়নের প্রশংসা করে, অথচ দেশে সেভাবে হয় না: তথ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা পাকিস্তানও করে, অথচ দেশে সেভাবে প্রশংসা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ।

 

তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে পৃথিবী যখন থমকে গেছে, মানুষ ঘরে আবদ্ধ- তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেলো। এটা নিয়ে তখন ভারতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো। সামাজিক অঙ্গন, টেলিভিশন , টকশোতে হৈচৈ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা শুরু হলো। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেলো। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফা স্বীকার করলেন- বাংলাদেশ আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। অথচ আমাদের দেশে প্রশংসার ঢেউ দেখতে পাই না। যেভাবে প্রশংসা হওয়া দরকার সেভাবে হয় না। আর যারা সেমিনার, টেলিভিশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, তাদের কাছ থেকেও আমরা প্রশংসা দেখতে পাই না।’

 

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষে সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশন।

 

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সব মানুষের যে ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে তা আমরা যারা এই উন্নয়নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তারা অনুভব করতে পারি না। আজ থেকে ১৫ বছর আগে যে মানুষ বিদেশে গেছেন তিনি এখন দেশে এসে আর এই দেশকে চিনতে পারেন না।’

 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের বিরাট অবদান রয়েছে। অর্থনীতি সচল রাখতে হলে এর ভূমিকা অগ্রগণ্য এবং এই দুইটি যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আমাদের দেশে মানি মার্কেটের অনেক গ্রোথ হয়েছে। এটা কখনোই হতো না যদি না বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ভালো না হতো। ক্যাপিটাল মার্কেটের দিকে যদি আমরা তাকাই, সেখানেও অনেক ভালো গ্রোথ হয়েছে।’

 

সরকারের অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির আকার গত ১৫ বছরে প্রায় ৫ গুণ বেড়েছে। অপরদিকে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ। আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাজেটের আকার ছিল ৮৮ হাজার কোটি টাকা, বাস্তবায়িত হয় ৮১ হাজার কোটি টাকার বাজেট। এখন তা ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭৫ কোটি সামথিং। বাংলাদেশে যেখানে বাজেটের আকার বেড়েছে সেখানে বোঝা যায় সমৃদ্ধি এসেছে। ২০০৬ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০৭ ডলার, ২০০৭ সালে ছিল ৬০০ ডলার। এখন তা ২ হাজার ৮৫৯ ডলার। যদি ডলারের ডিভ্যালুয়েশন না হতো তাহলে এটা তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতো।’

 

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজ দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সব মানুষের যে ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে- তা আমরা যারা এই উন্নয়নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তারা অনুভব করতে পারি না। আজ থেকে ১৫ বছর আগে যে মানুষটি বিদেশে গেছেন তিনি এখন দেশে এসে আর এই দেশকে চিনতে পারেন না। যখন গ্রামে যান তখন তার গ্রামকে চিনতে পারেন না। গ্রামে আগের কুঁড়েঘরগুলো আর নাই, হারিয়ে গেছে। সবগুলোই টিনের চালা, আধা পাকা ও পাকা বাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। গ্রামের যে মেঠোপথ সেখানে পিচ ঢালা পথ তৈরি হয়েছে। তখন তিনি বুঝতে পারেন দেশটা কোথায় গেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘আমি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যখন প্রথম যাচ্ছিলাম তখন আমার ড্রাইভার বলছিলেন- স্যার দুবাই দুবাই মনে হচ্ছে। আর একজন বলছিলেন- স্যার আমরা সিনেমায় ইউরোপ, আমেরিকার যে শহরগুলো দেখি সেরকম মনে হচ্ছে। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং এটি সম্ভব হয়েছে নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকার কারণে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি না থাকতো তাহলে কি পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করা সম্ভব হতো? রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি না থাকতো তাহলে আজকে মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে ৩ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব হতো? আজকে পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকার কারণে কিছুদিন আগে পর্যন্ত তারা দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে ছিল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’

 

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান।

 

‘টেকসই অর্থের জন্য পুঁজিবাজার’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. রিয়াদ মতিন। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক ইসতার মহল, শান্তা ইক্যুইটি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version