-->
শিরোনাম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মেহেরপুর-২ আসন

মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ নেতাদের

ফজলুল হক, মেহেরপুর
মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ নেতাদের
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সম্ভ্যব্য প্রার্থীরা

সংসদ নির্বাচন ঘিরে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের বড় দুদলের সম্ভ্যব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে গণসংযোগ ও মতবিনিময় শুরু করেছেন। বিগত নির্বাচনে দুটি দলের মধ্যেই ছিল অন্তর্দ্বন্দ্ব। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোমর বেঁধে নেমেছিল তাই আসনটি হাতছাড়া হয়নি।

 

এখনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে আওয়ামী লীগে। অন্যদিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও নির্বাচনে একাত্ততা ঘোষণা করতে পারে বলে মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তবে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো কোন্দল থাকবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তাছাড়াও রাজনৈতিক অতিথী পাখি হিসেবে বিবেচিত অনেকেই মনোনয়ন চাইবেন।

 

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেভাবে দাপটের সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে তাতে প্রতিপক্ষ বিএনপি তেমনটা পারছে না। মামলা আর ধরপাকড়ের ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। তবু যার যার কৌশলগত কারণেই রীতিমতো ঘোষণা দিয়েই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে বিএনপি। সুযোগ পেলেই সভা ও বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের নানা দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য পেশ করছেন।

 

এদিকে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন তুলে ধরে নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল বা টানেলের মতো বড় প্রকল্প হাতে নেয়াসহ নানা ফিরিস্তি তুলে ধরছেন তারা।

 

আওয়ামী লীগ থেকে ৬ জন আর বিএনপিতে ৩ জন মনোনয়ন চাইতে পারেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন-বর্তমান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি এমএ খালেক, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মখলেসুর রহমন মুকুল, সাবেক এমপি মকবুল হোসেন, সাবেক মেয়র আশরাফুল ইসলাম এবং ডা. নাজমুল হক সাগর। আর বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন- জেলা কমিটির সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন ও গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সাহারবাটি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু।

 

একটি সুত্র জানিয়েছে, বর্তমান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। সংসদে এলাকার উন্নয়ন তথা বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া রোড উন্নয়ন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কৃষক ছাউনিসহ নানাবিধ দাবি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এসব দাবী সবগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে চাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলাতে না পারায় অনেকেই তার প্রতি অনাস্থা আনছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলীয় কয়েকজন।

 

বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতা প্রদানের তালিকায় স্বচ্ছল, তার আস্থাভাজন ও দলীয় কিছু কর্মীর নাম দেয়ায় তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর এলাকার তেমন কোন উন্নয়ন করতে পারেননি। কি এবং কতটুকু বরাদ্দ এসেছে এবং কোন কোন খাতে তিনি উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তা অগোচরেই রয়ে গেছে। এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে নিজের দলের অন্য প্রার্থীর কাছে হেরে যান।

 

দলের আরো এক প্রতাপশালী নেতা গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মকলেচুর রহমান মুকুল তার প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের ইতোবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে তিনি দলীয় মনোনয়নে এমপি হলে আগামীতে কি উন্নয়ন ঘটাবেন তারও বর্ণনা করছেন। তবে গাংনী উপজেলা কাউন্সিল হবার ছয়মাস অতিক্রান্ত হলেও পুর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ।

 

এদিকে সাবেক পৌরমেয়র আশরাফুল ইসলাম জাতীয় নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন। বিগত পৌর নির্বাচনে তিনি ব্যাপক ভোটে জয়ী হবার পর পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তবে পৌরবাসির উপরে বাড়িয়েছেন করের বোঝা। তাছাড়া ফুটপাথের হকার ও ব্যবসায়িদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে সড়ক ও জনপথের জায়গায় অস্থায়ী শেড নির্মাণ করেন। বর্তমানে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ওই সকল শেড ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়ায় ব্যবসায়ীরা পথে বসবেন। তারা টাকা ফেরত চেয়েও পাচ্ছেন না।

 

ডা. নাজমুল হক সাগরও রয়েছেন আলোচনায়। তিনি প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। ঢাকায় সরকারি চাকরির কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পারায় তিনি চাকরি ছেড়ে এলাকায় ফিরেছেন এবং জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এলাকার অনেক মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজ করছেন তিনি।

 

অন্যদিকে সাবেক এমপি মকবুল হোসেনও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এক সময়কার দোর্দন্ড প্রভাবশালী রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুবার নির্বাচিত এ নেতাও নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

 

নেতাকর্মীরা অনেকেই জানিয়েছেন, মকবুল হোসেনের কাছের মানুষ ও আত্মীয়দের অনেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন। বিশেষ করে তার একান্ত কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছাত্রনেতা সাইদুজ্জামান শিপুর কর্মকান্ড ছিল হতাশাজনক।

 

অন্যদিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেক আগের। সাবেক এমপি আব্দুল গণির আমলেই বিএনপি দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতা আজও বজায় রয়েছে। আব্দুল গণি নির্বাচনে পরাজিত হলে এলডিপিতে যোগদান করেন। এতে দলের অনেকেই তাকে বয়কট করেন। তার স্থানটি দখল করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন।

 

আমজাদ হোসেন এমপি হিসেবে নির্বাচিত হবার পর বিরোধীদলের এমপি এই ধোঁয়া তুলে যা পেয়েছেন তার সবটুকুই গিলেছেন বলে সব মহলেই স্বীকৃত। তবে তিনি এ অভিযোগ নাকচ করেছেন। গেল সংসদ নির্বাচনে জাবেদ মাসুদ মিল্টন মনোনয়ন পান বিএনপি থেকে। আমজাদ হোসেনের রাগ ভাঙ্গাতে দলের নেতাকর্মী তার কাছে ধর্ণা ধরে দলে ফেরান। তবে সরকার বিরোধী আন্দোলনে এলাকায় তার কোন পদচারনা নেই। তবুও দলের কাছে তিনি মনোনয়ন চাইবেন।

 

এদিকে দলীয় লোকজনের কাছের মানুষ হিসেবে বিবেচিত শিল্পতি জাবেদ মাসুদ মিল্টন আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় দলীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনকে বেগবান করেন। জেল জুলুম অত্যাচার ও মামলায় আটক নেতাকর্মীদের পাশে সবসময় থেকে নিজেকে যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তিনিও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version