-->
শিরোনাম
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ

হোম ওয়ার্কে ব্যস্ত বিএনপি নেতারা

এম সাইফুল ইসলাম
হোম ওয়ার্কে ব্যস্ত বিএনপি নেতারা

এম সাইফুল ইসলাম: ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে এখন হোম ওয়ার্কে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি নেতারা। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে প্রস্তুত করতে কাজ করছেন। নানা প্রতিবন্ধকতা মাথায় রেখেই সতর্কভাবে মহাসমাবেশে বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিতে তাদের অনেকেই এখন বিভাগীয় পর্যায়ে বৈঠক করছেন।

 

অনেকেই আবার মাঠপর্যায়ে বিশেষ বার্তা বা কৌশল নির্ধারণী কর্মকান্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সমাবেশের কমপক্ষে দুদিন আগেই অঙ্গ সংগঠনের পাশাপাশি পেশাজীবী ও শ্রমজীবী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিএনপি। এছাড়া নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে দলটির নেতারা কারাবন্দিদের বাসায় গিয়ে স্বজনদের খোঁজ-খবরও রাখছেন।

 

বিএনপি নেতারা বলছেন- যেকোনো মূল্যে মহাসমাবেশ সফলে কর্মযজ্ঞ নিয়ে তারা মাঠে। দলীয় হাইকমান্ডের চাওয়া অনুযায়ী সর্বকালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ করতে চান তারা। সরকারি দলের তৎপরতা ও পুলিশের প্রতিবন্ধকতা মাথায় রেখেই তারা এগোচ্ছেন।

 

জানা গেছে- নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এখন বিপরীত মেরুতে। আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক ধারা রক্ষায় বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের বাইরে ভাবছে না। আর বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। দলটি চায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার।

 

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুাযায়ী, নভেম্বরের শুরুর দিকে তফশিল আর জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই হিসেবে তফশিল ঘোষণার আর মাত্র কয়েকদিন সময় হাতে রয়েছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে ১০ দফা ও পরবর্তীতে ১২ জুলাই থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজপথে।

 

দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত রয়েছে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি ও ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক দল ও সংগঠন। কয়েক দফা বিক্ষোভ সমাবেশ, পদযাত্রা, অবস্থান ও অনশনসহ লাগাতার নানা ধরনের কর্মসূচি পালন শেষে গত ১৮ অক্টোবর বিএনপি ঢাকায় গণসমাবেশ করেছে দলটি।

 

ওই সমাবেশ থেকে সরকারকে দাবি মানতে চলমান দুর্গাপূজা পর্যন্ত সময় দিয়ে দলটি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণার সময় কঠোর কর্মসূচির ইঙ্গিত বলেছেন, মহাসমাবেশ থেকেই যাদের ‘মহাযাত্রা’ শুরু।

 

বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলের নেতারা বলছেন, ২৮ অক্টোবরে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করতে চান তারা। শান্তিপূর্ণ ভাবে সর্বোচ্চ লোকসমাগমের উপস্থিতি ঘটিয়ে তারা সরকারকে বিশেষ বার্তা দিতে চান। তারা বোঝাতে চান সরকারের কর্মকান্ডে দেশের বড় একটি বড় অংশের মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা সরকারকে ‘না’ বলতে শুরু করেছেন। এছাড়া এই সমাবেশের বিপুল উপস্থিতি ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যেন বিশেষ বার্তা দিতে সক্ষম হয় সে চেষ্টা রয়েছে সরকারবিরোধীদের।

 

এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই এখন টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কারণ বিএনপির মহাবেশ ঘোষণার একদিন পর আওয়ামী লীগ ও ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। দুই দলের এই সমাবেশের পর ঘটনাবহুল ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রাজনৈতিক সমাবেশের নামে কেউ সহিৎসতা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা সমাবেশ সফলে মাঠে নেমেছেন। তারা হোম ওয়ার্ক শুরু করেছেন। শুক্রবার বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ময়মনসিংহ বিভাগে মতবিনিময় সভা করেছেন। সেখানে বিএনপির পাশাপাশি দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শনিবার বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শাসসুজ্জামান দুদু ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

জানা গেছে, ২৬ অক্টোবরের আগেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা সাংগঠনিক সব বিভাগ ও বিশেষ জেলাসমূহের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষ করবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সমাবেশের দুই একদিন আগে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথসভা করার কথা রয়েছে।

 

দলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিতে দলের একজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের নেতৃত্বে কাজ চলছে বলেও জানা গেছে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য পেশাজীবীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে কাজ করছেন। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলের পাশাপাশি যারা বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদেরকে মাঠে নামতে কাজ করছেন বিএনপির একাধিক নেতা। এসব কর্মকান্ড পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

এদিকে, নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়াতে ও মনোবল ধরে রাখার কৌশল হিসেবে এক সপ্তাহ কর্মসূচি না থাকায় বিএনপি নেতারা কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত করে সমবেদনা জানাচ্ছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় কারাবন্দি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর গুলশানের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সান্তনা জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দুলুর সহধর্মিণী সাবিনা ইয়াসমিন ছবিকে সান্তনা জানান।

 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা কারাবন্দি আব্দুস সাত্তারের বাসায় গেছেন বিএনপি নেতারা। কারাবন্দি আব্দুস সাত্তারের পরিবারের সদস্যদের সান্তনা ও সমবেদনা জানাতে পুরান ঢাকার লক্ষীপুর তার বাসায় যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামসহ দলটির নেতারা। পর্যায়ক্রমে চলতি সপ্তাহে আরো অনেকের বাসায় যাবেন বিএনপি নেতারা।

 

এদিকে দলটির একাধিক সূত্র বলছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তবে, ক্ষমতাসীন বা প্রশাসন যদি সমাবেশ বানচালের চেষ্টা করলেও তাৎক্ষণিক আরো কঠোর কর্মসূচির প্রস্তুত নিয়ে রাখছে বিএনপি। সমাবেশ পন্ড করার চেষ্টা করা হতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সমাবেশের আগেই গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ার শঙ্কায় নেতাকর্মীদের আগেভাগেই ঢাকায় আসতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। ঢাকার আশপাশের জেলা বাদ রেখে দূর-দূরান্ত থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ঢোকানোর পরিকল্পনা দলটির।

 

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মুতাছিম বিল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, সমাবেশ সফলে সব ধরনের প্রচেষ্টা রয়েছে ছাত্রদলের। অভিভাবক সংগঠন বিএনপির নির্দেশনা আমরা সর্বাত্মকভাবে পালন করব।

 

যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বলেন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ রাজনীতিতে একটি বিশেষ অধ্যায় সৃষ্টি করবে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির জন্য সব ধরনের প্রস্ততি নিচ্ছি আমরা।

 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেছেন, মহাসমাবেশে জনসমাগমের সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি হবে। বর্তমান সরকারের আমলের কষ্টে থাকা মানুষেরা সেদিন সরকারকে না বলে দেবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে সেটি মাথায় নিয়েই কাজ করছে বিএনপি। জনগণের ঢেউ আটকানো যাবে না।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে ভোট চুরির নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেটি এখন দেশ-বিদেশের সবাই জানেন। কিন্তু এবার আর লাভ হবে না। সরকারকে যেতেই হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version