-->
আতঙ্কের ২৮ অক্টোবর

প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

রুদ্র মিজান
প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

রুদ্র মিজান: ২৮ অক্টোবর। বিএনপির মহাসমাবেশ। ওই দিন থেকেই সরকার বিরোধী কঠোর ‘আন্দোলনের মহাযাত্রা’। এমনটিই জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে উত্তেজনা। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যেমন সমাবেশের ডাক দিয়েছে। তেমনি একই দিন সমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতেই জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক।

 

ঢাকায় বিএনপির কয়েকটি সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও এবারে সহিংসতার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রিপোর্ট দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্তণালয়ের তরফ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, কী হচ্ছে নভেম্বরে।

 

সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মামলায় বিএনপির পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ডিবির কয়েক টিম মাঠে কাজ করছে। সেই সঙ্গে নতুন করে অরাজকতা করতে পারে, এমন নেতাদেরও নজরদারিতে রেখেছে গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেচেন। বৈঠকে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সবগুলো ইউনিটকে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

বিশেষ করে ঢাকায় যেন কোনোভাবেই অরাজকতা না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান পুলিশ লাইনে পুলিশ সদস্যদের রোলকল অনুষ্ঠানে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সতর্ক থেকে দ্বায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। তবে সেই সমাবেশ থেকে যদি নাশকতা কিংবা অরাজকতা তৈরির চেষ্টা হয় তবে অবশ্যই পুলিশ কঠোরভাবে দমন করবে।

 

এদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নেতারা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ওই দিনের সমাবেশ থেকেই সরকারের পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে। সেই প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। ঢাকায় সারাদেশ থেকে ১০-১৫ লাখ লোকের সমাগম ঘটানো হবে। এমন অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সমাবেশের ডাক দিয়েছে।

 

সেই সঙ্গে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নিতে পারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দুই দলের এমন ঘোষণায় চারদিকে শুরু হয়েছে আতঙ্ক ও চাপা উত্তেজনা। এমনকি চলমান পূজার পর কি ঘটতে যাচ্ছে সেটি নিয়েও জল্পনা কল্পনা চলছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন এতদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি হলেও এটি সহিংসতার দিকেই যাচ্ছে।

 

ঢাকায় পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয় ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করেছি। গত বছরের ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা ছিল। আমরা সেটিকে শান্তিপূর্ণভাবেই মোকাবিলা করেছি। আমাদের ওই রকম প্রস্তুতি রয়েছে। যারা অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গেই সেগুলো মোকাবিলা করা হবে।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৮ তারিখের সমাবেশের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে কমিশনারের নিকট চিঠি দেবে। আমরা আমাদের নিকট থাকা গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করবো। তারপর সিদ্ধান্ত হবে তারা সমাবেশ করতে পারবে কি-না?

 

এছাড়াও সমাবেশ হলে সেটি কোথায় হবে। এ প্রসঙ্গে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, নৈরাজ্য অরাজাকতাকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

 

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে পুলিশের ক্রাইম কনফারেন্স থেকে নাশকতা ও দাঙ্গা দমনে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন ঘিরে কোনোরকম অরাজকতা যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারেও বিশেষ নজর দিতে হবে। ইউনিটের কোনো কর্মকর্তাকে তার এলাকার বাইরে যেতে হলে তদারকি কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে।

 

পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, অক্টোবরের বাকি দিনগুলোতে এবং নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা বিরাট চ্যালেঞ্জের কাজ হবে। আমরা এ সময় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশে চিরুনি অভিযান, ব্লক রেড অভিযান, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি, টহল জোরদার করাসহ মাঠপর্যায়ের পুলিশকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফোর্সে ছুটি বাতিল করেছি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version