-->
শিরোনাম

আ.লীগে একক প্রার্থী শিরীন, জাপার জাদু, বিএনপি নীরব 

বাবলুর রহমান বারী, রংপুর
আ.লীগে একক প্রার্থী শিরীন, জাপার জাদু, বিএনপি নীরব 
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচনে রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী শিরীন শারমিন চৌধুরী। নির্বাচনকে ঘিরে খোশ মেজাজে জাপা এবং নীরব ভূমিকায় রয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। রাজপথে সরগম রয়েছে সরকার। বিএনপি সরাসরি নির্বাচন ইস্যুতে কথা না বললেও ভিতরে ভিতরে চলছে আলোচনা। তাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই দাবি নিয়ে তারা রাজপথে আন্দোলন করছে। এদিকে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা নির্বাচন নিয়ে ভাবছে, নিচ্ছে প্রস্তুতি।

 

বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে ময়দানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। থেমে নেই উত্তরের জেলা রংপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারাও সভা-সমাবেশ কুশল বিনিময়, উঠান বৈঠকসহ নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে জনগণের নিকট উপস্থাপন করছেন বিনয়ের সঙ্গে।

 

‘রংপুরের মাটি, জাতীয় পার্টির ঘাঁটি’ এক সময়ের প্রচলিত বাক্যটি এখন আর নেই। রংপুরের রাজনীতিতে’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ কথা’ ‘হামার এরশাদ মামা’ এখন আর বাস্তবে নেই, সেটি এখন পুরান কথা। বিগত সময়ে রংপুর তথা উত্তরের সব আসনই জাতীয় পার্টির দখলে থাকতো। রংপুরে ছয়টি আসনের মধ্যে টানা মেয়াদে আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেছে চারটি আসন। বাকি দুটি আসন রংপুর সদর ও গঙ্গাচড়া।

 

এ দুটি নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া আওয়ামী। লীগ দীর্ঘদিন থেকেই তারা তৎপর রয়েছে। তবে মহাজোটের শরিক দল হওয়ায় বার বার রংপুরের এই দুটি আসন ছেড়ে দিতে হয় জাপাকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটিতে অর্ন্তদ্বন্দ্ব চলছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসন দুটি দখলে নিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, নির্বাচন নিয়ে তেমন তৎপর নয় বিএনপি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির জীবন মরনের প্রশ্ন।

 

পীরগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসন। এই আসনটি রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিভিআইপি হিসেবে সবার কাছে সুপরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে পীরগঞ্জ উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে অভিমত এলাকাবাসীর। একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গও বলে খ্যাত ছিল এই আসনটি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিউর রহমান চৌধুরীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

 

২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন নূর মোহাম্মদ মন্ডল। সাবেক বিএনপি নেতা নূর মোহাম্মদ মন্ডল বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ২০০৮ ও ২০১৪ সালে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে চলে আসে নতুন মেরুকরণ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আসনে বিজয়ী হয়ে পরবর্তী আসনটি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ এমপি নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আসনে বিজয়ী হয়ে আসনটি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছেড়ে দিলে তিনি উপনির্বাচনে বিজয়ী হন। এছাড়াও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলামকে হারিয়ে বিজয়ী হন শিরীন শারমিন চৌধুরী।

 

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে এ এলাকার মানুষ নৌকাকেই জয়ী করবে। এ আসনে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে প্রার্থী হন তাহলে তো আর কোনো কথাই নাই।

 

পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম বলেন, এ আসনের মনোনয়ন নিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিবেন। তারপরও যদি তিনি মনে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রার্থী করবেন তাহলে পীরগঞ্জের মানুষ অত্যন্ত খুশি হবেন। এছাড়া বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তারা স্পিকারকেই সমর্থন করবেন। স্পিকার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মোতাবেক এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।

 

উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম জাদু ইতোমধ্যে উপজেলার অলিগলিতে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন টানিয়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন। তিনি জানান, জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপার রাজনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমি। এই আসনে জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থানে ছিল।

 

রংপুর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক সাইফুল ইসলাম তিনিই এই আসনের প্রার্থী। পীরগঞ্জে নির্বাচনী মাঠে বিএনপি তেমন সক্রিয় হয়ে ওঠেনি তারা আন্দোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৌশল গতভাবে মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন। এখানে বিএনপি সুসংগঠিত। বিএনপির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।

 

রংপুর-৬ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজার ১৫ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৮ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩১৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৪ জন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আসনে জয়লাভ করেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বিন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন তৎকালীন বিএনপির নূর মোহাম্মদ মন্ডল ভোট পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৬৭২ ভোট।

 

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তিনি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির নূর মোহাম্মদ মন্ডল তিনি ভোট পান ৪ হাজার ৯৭৩। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version