-->
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন

বিএনপির নির্বাচনী ট্রেন মিস!

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির নির্বাচনী ট্রেন মিস!

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত জমার সুযোগ ছিল। শেষ পর্যন্ত আওয়ামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বিএনপির কেউ এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। ইসির পক্ষ থেকে পুনঃতফসিলের ঘোষণা দেয়া হয়নি। পুনঃতফসিল না হলে দ্বাদশ নির্বাচনেও বিএনপির ট্রেন মিস। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সময়সীমা শেষ হলেও নির্বাচনের পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। তবে ক্ষমতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পুনঃতফসিলের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

 

ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, মনোনয়নপত্র জমার সময় আর বাড়ানো হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় সময় শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এ সময়সীমা বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়েছে। এর আগে বিকেল ৩টায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বসেন। বিকেলে জনপ্রশাসন সচিব, সকালে জননিরাপত্তা বিভাগ সচিব, আইজিপির সঙ্গে ইসির বৈঠক হয়। ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায়। বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। বিএনপিসহ একডজন দল ছাড়া ভোট হচ্ছে এবার। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ৩০টির মতো দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

 

গত ১৫ নম্বেবর টিভি ভাষণের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ৩০ নম্বের বৃহস্পতিবার। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এই তফসিল প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলনে রয়েছে। বর্তমানে দলটি কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তার। অজ্ঞাত স্থান থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করছেন দলটি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দুইপক্ষই দাবিতে অনড় থাকায় এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো আশা নেই। তবে ইসির পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে বিএনপি নির্বাচনে আসলে তফসিল পেছানো হতে পারে। পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে তফসিল পেছানোর বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসার কোনো ঘোষণা নেই। এ অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনী ট্রেন মিস বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন বিএনপি না আসলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। ফলে আবারও একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, তা এবারও হচ্ছে না। এটি উদ্বেগের। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন হবে। ক্ষমতায় কারা থাকবে, সেটাও নির্ধারণ হবে। কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না। জনগণের আস্থা নিশ্চিত করাও অসম্ভব হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন, শুদ্ধাচারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাজনৈতিক দল। এখানে তারা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, তাদের হাতে ক্ষমতা। এখানেও সংস্কারের কথা বলেন তিনি।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধি না করলে বিএনপি নির্বাচনের বাইরে থাকবে। যদিও একাধিক নির্বাচন কমিশনার এরই মধ্যে বলেছেন যে বিএনপি নির্বাচনে আসলে তফসিল পিছিয়ে দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করা হবে। কিন্তু শেস পর্যন্ত ইসির পক্ষ থেকেত সেই ঘোষণা আসেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইসির হাতে এখনো সেই ক্ষমতা রয়েছে। অতীতের নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সাধারণত ৪৫ দিন পর্যাপ্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবার তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের তারিখ পর্যন্ত আরও এক সপ্তাহ বেশি সময় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদপূর্তির আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের তারিখ আরও দু-সপ্তাহ পিছিয়ে দিলে সংবিধানের কোনো বরখেলাপ হবে না বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে তফসিল ডিসেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে পারে।

 

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বলেন, যদি ইতিহাস অনুসরণ করি তাহলে ৩ নবেম্বরের পরে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর সুযোগ নেই। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে তফসিল বাতিলও করতে পারে। কমিশনের সে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আছে বলে মি. আলীম উল্লেখ করেন। তিনি বলছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও নির্বাচন কমিশন চাইলে সে সময় বৃদ্ধি করতে পারে। ইচ্ছা করলেই সেটা করতে পারবে। কারণ এখানে আইনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে সেটা করা যাবে না, বলেন মি, আলীম।

মন্তব্য

Beta version