ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মো. মোসলেম উদ্দিন এমপির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন তার মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাবা নৌকা প্রতীক ও মেয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় জেলায় আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নিয়েছে। বাবা-মেয়ে ভোটযুদ্ধে থাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা চরম বিপাকের মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল মালেক সরকার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
জানা গেছে এই আসনের প্রবীণ রাজনীতিবিদ মো. মোসলেম উদ্দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার কন্যা সেলিমা বেগম সালমা নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন নাহার হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে সংসদ নির্বাচনের সময় প্রবাস থেকে এসে তার বাবার পক্ষেই নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছেন।
গত প্রায় দেড় বছর তিনি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে টানা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে তিনি বাদ পড়লেও নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) সংসদীয় আসন। এ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৫ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৪ হাজার ৪৪২ ও মহিলা ভোটার এক লাখ ৯১ হাজার ৫৪৩ জন। এর মধ্যে দুই জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন। ভোটকেন্দ্র ১২১টি ও ভোট কক্ষ রয়েছে ৮৫৭টি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন এমপি (নৌকা), উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল মালেক সরকার (ট্রাক), আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিমা বেগম সালমা (ঈগল), জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বাবুল (লাঙ্গল), জাতীয় পার্টি নেতা (রওশন এরশাদপন্থি) ডা. খন্দকার রফিকুল ইসলাম (কেটলী), কৃষক শ্রমিক জনতালীগের প্রিন্সিপাল আব্দুর রশিদ (গামছা) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর সব প্রার্থীই পুরোদমে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিমা বেগম ভোটারদের আকৃষ্ট করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের তার ভাগে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। দুর্নীতিমুক্ত উপজেলা গড়াসহ নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের।
বাবার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রসঙ্গে সেলিমা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ফুলবাড়িয়ায় সাধারণ মানুষের সেবা দিয়ে আসছি। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলাম। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে এই নিয়ে বাবার সঙ্গে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।
মোসলেম উদ্দিন এমপি তার নিজস্ব বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাসায় বসে নির্বাচনি কার্যকলাপ পরিচালনা করছেন। অজ্ঞাত কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাকর্মীদের তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও তিনি সাত বার সংসদ নির্বাচন করে পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন। ৮৫ বছর বয়সে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এসে নিজের কন্যাসহ আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে।
আওয়াম লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোসলেম উদ্দিন দলীয় ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেকটা বেকায়দার মধ্যে রয়েছেন। তিনি টানা প্রায় ৪৫ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি তার হাতছাড়া হয়ে যায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল মালেক সরকার, এমপির পারিবারিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের একাংশ নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠে লাগামহীনভাবে দৌড়াচ্ছেন। অপরদিকে নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ এখনও অনেকটাই নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনেকেই নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বাবা-মেয়ের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বেকায়দার মধ্যে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা। উপজেলাজুড়েই এ আলোচনা চলছে, ভোট চাইতে গিয়ে ভোটারদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ ছাড়াও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ. মালেক সরকার স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন।
আব্দুল মালেক সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও আমাদের উপজেলা দৃশ্যমান কোনও উন্নয়ন হয়নি বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্যের সময়ে। তিনি দলীয় ও পারিবারিক কোন্দলে জর্জরিত। তার কাছে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা সবসময় অবমূল্যায়িত হয়েছে, যে কারণেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইমদাদুল হক সেলিম বলেন, নির্বাচনে সবারই অধিকার আছে অংশ নেওয়ার। তবে যার জনপ্রিয়তা বেশি সেই নির্বাচনে জয়লাভ করে আসবে। দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার আওয়ামী লীগ সভাপতি সুযোগ করে দিয়েছেন।
ভোটের বিষয়ে জানতে মোসলেম উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য