রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে ভোটের লড়াই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে জমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জোটগত কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গেছে আওয়ামী লীগ। এতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র আসাদুজ্জামান বাবলু ও মসিউর রহমান রাঙ্গা। নিজেদের প্রার্থী না থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠ দখলে রেখেছেন ২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বর্তমানে রংপুর-১ আসনে সক্রিয় দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন।
প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা হুসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ লড়ছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা স্বতন্ত্র হয়ে লড়ছেন ট্রাক প্রতীকে। আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে দলটির উপজেলা সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেটলি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী এখন ভোটারদের আলোচনার রয়েছেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিদায় নিবেন লাঙ্গল মন্তব্য করছেন সতন্ত্র প্রার্থীরা।
জানা গেছে, গত তিনবারের সংসদ সদস্য, বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ ও সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, যাহার প্রতীক হচ্ছে ট্রাক এবং সাবেক গংগাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু , প্রতীক হচ্ছে কেটলি। সাধারন মানুষের ভালবাসায় এগিয়ে আছেন মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং আসাদুজ্জামান বাবলু। রংপুর-১ আসনের অন্যান্য প্রার্থীরাও ভোটারদের বাড়ীতে ভোট ও দোয়া চাচ্ছেন। তবে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি শুনে ভোটের সিদ্ধান্ত নিবেননা জানান ভোটাররা।
আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী বাজারে কথা হয় আবুল কাশেম নামের এক ভোটারের সঙ্গে।
আবুল কাশেম বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলু বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। আমাদের এই দিকে বাবলু ছাড়া কিছুই নেই। তবে বাবলুর ভোট মাঠে লাফালাফি করে না। ভোটের দিন দেখিয়ে দেবে বাবলু কত জনপ্রিয়।’
বাবলুর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কে হতে পারে?— এমন প্রশ্নের জবাবে এই ভোটার বলেন, ‘মশিউর রহমান রাঙ্গা এলাকায় কিছুটা উন্নয়ন করেছেন, তাই তিনি এবার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন; তবে জয়ী হওয়ার মতো নয়।’
গঙ্গাচড়া উপজেলা চত্বরে কথা হয় মোখলেছুর নামে এক ভোটারের সঙ্গে। মোখলেছুর বলেন, ‘নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রাঙ্গা না বাবলু, কে বিজয়ী হবে; এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই দুই জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এবার ভোটের মাঠে।
লক্ষীটারি ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের আমেনা খাতুন বলেন, `প্রার্থীর মিষ্টি কথায় মুই এবার ভোট দিবার নং, দেখি শুনি ভোট দেম, যায় গরীব দুঃখীর কষ্ট বুঝবে হামার গ্রামের উন্নতি করছে তার মার্কায় ভোট দেইম।'
বড়বিল ইউনিয়নের বকসিবগঞ্জ বাজারের আনোয়ার হোসেন বলেন, `ভোট আলছে, প্রার্থীরা বাড়ী আসি ভোট চাওছে, কওছো ভোট ওমাক দিলে হামার উন্নতি হইবে, কিন্তু ভোট গেইলে ওমরা ওগলা কথা মনে থোয় না সগই ভুলে যায়, এবার দেখি শুনি সৎ মানসোক ভোট দেমো।'
লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা হুসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ বলেন, রংপুরে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। এই গঙ্গাচড়া থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলাম। আবারো নির্বাচনী অংশগ্রহণ করেছি। গংগাচড়ার মানুষ লাঙ্গল প্রিয় মানুষ। তারা আবারও লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবে। গঙ্গাচড়ার মানুষ আগের মত আর ভুল করবে না। জনগণের ভোটে যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো।
এদিকে, রওশন এরশাদ পন্থী রংপুর ১ আসনে ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলাম, লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আমাকে এবার মনোনয়ন দেয়নি এজন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি, গঙ্গাচড়ার মানুষ যদি আমাকে পছন্দ করে অবশ্যই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু অবাদ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করে দিব জনগণ আবারো আমাকে চায়। এখানে ভোট ডাকাতির কোন সুযোগ নেই জনগণ যাকে ভোট দিবে গংগাচড়া দায়িত্ব তিনি পালন করবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকের আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, রংপুর-১ আসনের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি একজন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তারা এবার সেই সুযোগটি পেয়েছে। ৭ তারিখে ভোটের মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দেবে। আপনারা ওই দিনে বুঝতে পারবেন সাধারণ মানুষের মনের কথা।
গংগাচড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি গংগাচড়ার মানুষ গংগাচড়ায় আমার জন্ম। আগে যেভাবে জনগণের পাশে ছিলাম এখনো জনগণের পাশে আছি থাকবো। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে এবারে যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে তাহলে গংগাচড়া বাসির দাবী তিস্তা নদী খনন। সেই তিস্তা নদী খননের দাবি বাস্তবায়ন করব। যাতে করে গংগাছড়ার মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে না হয়।
এবারের ভোট নিরপক্ষ আমি বিজয়ী হব। যেভাবে সাধারণ ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি ইনশাল্লাহ আগামী ৭ জানুয়ারি বিজয় হব।
অন্যদিকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর বিষয়ে বাবলু বলেন, ৭ জানুয়ারি ভোটের মধ্য দিয়ে রায় দেবে জনগণ।
উল্লেখ্য, গংগাচড়া উপজেলা সহ সিটি কর্পোরশনের ১-৮ নং পথসভা ও জনসভা করতেছেন। তাহাদের জনসভায় হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন। উক্ত জনসভায় তাদের বক্তব্যে বলেন সুষ্ঠ নির্বাচন হলে ২০২৪ সালে রংপুর ১ আসন হতে বিদায় হবে লাঙ্গল। এদিকে জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার এর জনসভা এবং পথসভা একেবারেই কম।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনটিতে ১২ প্রার্থীর মধ্যে তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় এখন ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নয়জন। তাঁরা হলেন—জাতীয় পার্টির হুসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, তৃণমূল বিএনপির বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বখতিয়ার হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শ্যামলী রায়। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা, আসাদুজ্জামান বাবলু, শাহিনুর আলম, মোশাররফ হোসেন।
এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৬। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৪৮, নারী ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের দুজন।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য