আর মাত্র ৪৮ ঘন্টা পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায়। এখন ভোটার এবং প্রার্থীরা শেষ সময়ের হিসেব মিলাচ্ছেন। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন আলোচনা চলছে রবিবারে কে হচ্ছেন নতুন সংসদ সদস্য।
এর ব্যতিক্রম নয় পিরোজপুর-১ আসন। পিরোজপুর-১ আসনে ৪জন প্রার্থী থাকলেও মূলত ভোটের লড়াই হবে দু’জনে মধ্যে।
এ আসনে প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের শ ম রেজাউল করিম (যিনি বর্তামান সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।) অপর তিন প্রার্থী হলেন নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত একেএমএ আউয়াল, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম ও তৃণমূল বিএনপির মো. ইয়ার হোসেন রিপন।
পিরোজপুরের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১/১১ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয় একেএমএ আউয়াল। এরপর টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকলেও পিরোজপুরের সাধারণ মানুষের ভাগ্যে কোন উন্নয়ন হয়নি বরং তাদের পরিবারের উন্নতি হয়েছে। নিজের আপন তিন ভাইকে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে শান্তির এ জনপথকে করে তুলেছে সন্ত্রাস আর মাদকের জনপথ হিসেবে। এ থেকে যখন পিরোজপুরের জনসাধারণ মুক্তির পথ খুঁজছিলেন।
তখন ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের নৌকার প্রার্থী হিসেবে চমক নিয়ে আসেন তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। মনোয়ন বঞ্চিত হয়ে ছিটকে পরেন দুই বারের সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল। প্রথমবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চমক দেখান শ ম রেজাউল করিম। দীর্ঘ বছরের অভাব ঘুচিয়ে পিরোজপুর-১ আসন উপহার হিসেবে পান একজন পূর্ণাঙ্গ কেবিনেট মন্ত্রী।
প্রথমে তিনি দায়িত্ব পান গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে এরপর সেখান থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পিরোজপুরের জনসাধারণ এই প্রথমবারের মত মুক্তির সু-বাতাস গ্রহণের সুযোগ পায়। গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে তিনি পিরোজপুরবাসীর জন্য সরকারের কাছ থেকে উপহার পান গৃহায়ন প্রকল্প। এ প্রকল্প এক উন্নত ও সমৃদ্ধ পিরোজপুরের স্বপ্ন দেখায়।
এরপর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে তিনি পিরোজপুরবাসীর জন্য একের পর এক চমক নিয়ে আসেন এর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ এক অনন্য মাইল ফলক। বিদ্যুতের সমস্যা পিরোজপুরবাসীর জন্য নিত্যদিনের যন্ত্রণার কারণ, এ সমস্যা দূর করতে স্থাপিত হচ্ছে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন। কর্মস্থানের জন্য তৈরী করেছেন ইপিজেট, ঢাকার সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে নির্মাণ করেছেন অসংখ্য পাকা রাস্তা-কালভার্ট। শিক্ষার জন্য নির্মাণ ও পূণ:সংস্কার করেছেন অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমপিওভুক্ত হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্ধ করেছেন মাদক এবং চাঁদাবাসী ব্যবসা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, একেএমএ আউয়াল এর দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে আপন ভাইয়েরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তা পিরোজপুরবাসী ভুলে যায়নি। এই শহরের মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং উন্নয়নের পক্ষে তাই ৭ জানুয়ারি সবাই নৌকা প্রতিকই ভোট দিবে।
পৌর সদর বসবাসকারী ভ্যান চালক নজরুল ইসলাম জানান, মন্ত্রীকে বিপদে ফেলার জন্য এবং মানুষ ভুল বোঝানের জন্য বিগত ৫ বছর মেয়র এই শহরের রাস্তা-ঘাটের কোন উন্নয়ন করেনি। আমার মত অনেক ভ্যান-অটো রিক্সা চালক জানে যা উপার্জন করি তা মেরামতের পিছনেই ব্যয় হয়। যে যাই বলুক না কেন ভোটটা নৌকা মার্কাতেই দিব।
এবাই প্রথম ভোটার হয়েছেন পিরোজপুর সদর হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা রাকিব আহসান। রাকিব জানান, ছোট বেলা থেকেই বাবা-মা এর মুখে নৌকা আর আওয়ামী লীগের কথা শুনে বড় হয়েছি। তাই নৌকাই আমার প্রথম পছন্দ। আমি চাই আমার মত যারা নতুন ভোটার হয়েছে তাদের প্রথম ভোট হোক নৌকার পক্ষে।
নাজিরপুর হাসপাতালের সামনে বসে কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা বৃদ্ধা নূরজাহান বেগমের সাথে। তিনি বলেন, রেজাউল (শ ম রেজাউল করিম) মন্ত্রী হওয়ার পর এই হাসপাতাল এর চিকিৎসার মান অনেক ভালো হয়েছে। বিনা টাকায় ঔষধ পাওয়া যায়। সবাই ভালো ব্যবহার করে, তাই ভোট নৌকাতেই দিব।
নাজিরপুরের দীঘিরজান এলাকায় এক বৃদ্ধাকে লেপ রোদে দিতে দেখে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে তিনি বলেন, শীতে কষ্ট হয় দেখে মন্ত্রী একটা লেপ উপহার দিয়েছিলেন সেটাই রোদে গরম করছেন। ভোট কাকে দিবেন বলতেই বৃদ্ধা বলে উঠেন, যে আমাকে শীত থেকে বাঁচিয়েছে ভোট তাকেই দিব। নাতি-পুতিরেও বলেছি ভোটটা নৌকায় দিতে।
ইন্দুরকানি উপজেলার বাসিন্দা আতাউর রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই উপজেলায় আউয়াল এমপি ছিলেন। তিনি নিজের ভাগ্য উন্নয়ন করেছেন। তাই এবার নতুন প্রার্থী শ ম রেজাউল করিমকেই ভোট দিব। শুধু আমি না আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন যারা আছেন তাদেরকেও বলবে শ ম রেজাউল করিমকে ভোট দিতে। তিনি আমাদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন নিশ্চই রাখবেন।
কথা হয় সাউদখালী এলাকার একটি মসজিদের ইমামের সাথে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তিনি বলেন, এটি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বাড়ি একারণে আউয়াল যতদিন এই এলাকার এমপি ছিলেন ততদিন অশান্তি সৃষ্টি করে রেখেছিল। আমার জানামতে শ ম রেজাউল করিম ভালো লোক তাই আমরা তাকেই এমপি হিসেবে দেখতে চাই। আমরা চাই না এই এলাকায় অশান্তি আর সন্ত্রাস আবারও ফিরে আসুক।
পিরোজপুর-বরিশাল রুটে চলাচলকারী একটি বাসের মালিক জানান, একেএমএ আউয়াল তার ছোট ভাইকে বাস মালিক সমিতির সভাপতি করে এই খাতে চাঁদাবাজীর রাজত্ব কায়েক করেছিল। শ ম রেজাউল করিম সেই অবস্থা থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন। আমার এখন ব্যবসার মুখ দেখতে পাচ্ছি। তাই বাস মালিক ও শ্রমিকদের ভোট নৌকার বাইরে যাবে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, পিরোজপুরের জনগণ তাদের আমানত হিসেবে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, বিগত ৫ বছরে আমি তাদের আমানতের কোন খেয়ানত করিনি। আমি তাদের বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছি। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী জনসংযোগ করতে গিয়ে আমি তাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে আমি ব্যর্থ হইনি। আগামীতেও আমি তাদের ভালোবাসা নিয়ে পথ চলতে চাই।
তিনি বলেন, এই শান্তির জনপথে মানুষ কোন দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবে না। মানুষ উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ জীবন চায়, আমি বিগত ৫ বছর ধরে পিরোজপুরের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। করোনা মহামারীকালে যখন এই অঞ্চলের মানুষের পাশে কেউ ছিলনা তখন আমি জীবনের মায়া ত্যাগ করে তাদের পাশে থেকেছি।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য