-->

ভারতে ট্রাভেল ডকুমেন্ট ‘পেয়েছেন’ শেখ হাসিনা

ভোরের আকাশ ডেস্ক
ভারতে ট্রাভেল ডকুমেন্ট
‘পেয়েছেন’ শেখ হাসিনা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ফলে তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খবর বাংলা ট্রিবিউন’র।

দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ভারত ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করেছে কিনা, আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার এখনও সেই প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে দিল্লিতে একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কেউ যেমন খবরটি ‘কনফার্ম’ করেননি, তেমনই ‘ডিনাই’ও করেননি।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেই ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বিশে^র যেকোনো দেশের ভিসা নিয়ে ভ্রমণও করতে পারবেন তিনি। ভারতেই শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তার বোন শেখ রেহানাও সেখানে অবস্থান করছেন বলেও জানান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ওই নেতা। অবশ্য ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেলেও আপাতত শেখ হাসিনা ভারতেই থাকবেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, শিগগিরই ভারতের বাইরে ভ্রমণে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তার।

সাধারণত কোনো দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের সেই দেশের ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়। তাহলে কি শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা জানান, শেখ হাসিনার গুরুত্ব বিবেচনায় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে ভারত।

ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী ব্রিফিংয়ের জন্য বরং অপেক্ষা করুন। সেখানে প্রশ্ন করে দেখুন, মুখপাত্র কী বলেন! তবে এটা স্পষ্ট যে ভারত সরকার এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়ার বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যেমন স্বীকার করেনি, আবার অস্বীকারও করেনি। এদিকে ভারতের একজন সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদ, যিনি ঢাকাতেও ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। এই ব্যক্তি বলেছেন, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সত্যিই দিয়ে থাকে, আমি তাতে এতটুকুও অবাক হবো না। কারণ এই পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত পদক্ষেপ। ভারতে ম্যাকলিয়ডগঞ্জ-সহ বিভিন্ন জায়গায় যে কয়েক লাখ তিব্বতি শরণার্থী থাকেন, তারাও কিন্তু বেশিরভাগই ভারতের পাসপোর্টধারী নন। বরং এই ধরনের ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ (সংক্ষেপে যেটাকে বলে ‘টিডি’) নিয়েই তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেন। এটি কোনো পাসপোর্ট নয়, বরং ভারত সরকারের জারি করা একটি বিশেষ ধরনের ‘পরিচয়পত্র’; যা দিয়ে বিদেশ সফরও করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এতে ভিসাও দিয়ে থাকে। এর পোশাকি নাম হলো ‘আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট’ বা আইসি। ভারতের সাধারণ পাসপোর্ট গাঢ় নীল রঙের হলেও আইসি সাধারণত হলুদ রঙের একটি বুকলেটের আকারে জারি করা হয়।

তিব্বতি ধর্মগুরু চতুর্দশ দালাই লামা- যিনি ১৯৫৯ সালে চীনের চোখ এড়িয়ে ভারতে পালিয়ে আসেন এবং এ দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। তিনিও এ ধরনের একটি ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ বা আইসি নিয়েই সারা পৃথিবী চষে বেড়ান। ভারতের পাসপোর্ট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আজ পর্যন্ত তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের যে তিব্বতিরা ভারতের মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন তারাও জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার অধিকারী। কিন্তু তাদেরও বেশিরভাগই ভারতীয় পাসপোর্ট না নিয়ে তার বদলে এই ‘টিডি’ বা ‘আইসি’ নিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলাফেরা করেন। এখন শেখ হাসিনার অফিসিয়াল বা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট (গত ৫ আগস্ট তিনি দেশ ছাড়ার সময়ও বৈধ ছিল) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দিয়েছে (‘রিভোকড’)। ফলে এখন যদি ভারত থেকে তৃতীয় কোনো দেশে তিনি যেতে চান, সেই পুরনো পাসপোর্ট কাজ করবে না। দরকার হবে একটি ‘টিডি’ জারি করার, আর ভারত সরকার ঠিক সেটাই করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওই সাবেক রাষ্ট্রদূতও বলছিলেন, জানি না শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দেবে কিনা। কিন্তু গত দুই মাসের ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে গড়িয়েছে, তাতে দালাই লামার ঘটনার সঙ্গে আমি কিন্তু শেখ হাসিনার কেসের অনেক মিল পাচ্ছি। ভারতে যতদিনই থাকুন, শেখ হাসিনা হাত গুটিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকবেন, এটা তো আর হতে পারে না। দালাই লামাও তাই করেছেন, রাজনীতি ও কূটনীতি চালিয়ে গেছেন এবং পৃথিবীর বহু দেশে সফর করেছেন। একইভাবে রাজনৈতিক প্রয়োজনে, বিশ^ময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে শেখ হাসিনাকেও ভারতের বাইরে যেতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। সেই বাস্তবতা অনুধাবন করে ভারত যদি তাকে ‘টিডি’ বা ‘আইসি’ দিয়ে থাকে, সেটাতে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই’।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version