তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেছে বিএনপি। বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আবেদন করেছেন। গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী হলেন- অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও মোহাম্মদ শিশির মনির। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার জন্য এই আবেদন (রিভিউ আবেদন) করা হয়েছে। রিভিউ আবেদন করার কথা স্বীকার করে মোহাম্মদ শিশির মনির ভোরের আকাশকে বলেন, আগামীকাল (আজ) বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দেন আপিল বিভাগ। তখনকার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এই রায় দিয়েছিলেন। এই রায় দেয়ার আগে আদালত এ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সে সময়কার আটজন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন। এদের মধ্যে ৫ জন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। তারা হলেন- ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। দুইজন সংস্কারের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তারা হলেন- ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির। অপর আমিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন। এমনকি তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) মাহবুবে আলমও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মতামত তুলে ধরেছিলেন।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর প্রকাশ্য আদালতে দেয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে অভিমত দেয়া হয়, পরবর্তী দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন তথা ১০ম ও ১১তম নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। রায়ে বলা হয়, এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। রায়ে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে। কিন্তু কয়েকবছর পর যখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় তখন দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দুটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো কথাই নেই। এই রায় দেখার পর তখন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। অপরদিকে এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে বিচারপতি এবি এম খায়রুল হকের ওই রায় জালিয়াতিকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য