-->
শিরোনাম

আলোচনায় প্রবাসী সরকার

গুঞ্জন নাকি গুজব

সিরাজুল ইসলাম
আলোচনায় প্রবাসী সরকার

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন আড়াই মাস আগে। তার পদত্যাগ নিয়ে এখনো ধূম্রজাল রয়ে গেছে। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এর আগে দাবি করেছিলেন- তার মা পদত্যাগ করেননি। সপ্তাহ দু-এক আগে বিএনপির নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, আইনগতভাবে শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন একটি সংবাদ মাধ্যমের একজন সাংবাদিককে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। তার এই বক্তব্য নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, ঠিক সেই সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবাসী সরকারের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

গতকাল সোমবার (২১ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, দেশ রূপান্তর, সময়ের আলো, ঢাকা টাইমস, মানবকণ্ঠ, জনকণ্ঠ, আমাদের সময়সহ দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে প্রবাসী সরকার গঠনের গুঞ্জনের কথা বলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে বিষয়টি। প্রবাসী সরকার গঠনের বিষয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেছেন শেখ পরিবারের সদস্য শেখ রুবেল। তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে প্রধান করে শিগগিরই ভারতের মাটিতে প্রবাসী সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, রোববার (২০ অক্টোবর) ভারতে আমাদের একটি ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় প্রবাসী সরকার গঠনের; যার প্রতিনিধিত্ব করবেন শেখ হাসিনা। তবে প্রবাসী সরকার ইস্যুতে ভারত সরকারের অনুমতির বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। তিনি বলেন, দেখেন, তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের কোনো কিছুই করা সম্ভব না। তবে দুই দেশের সুসম্পর্ক যেন বজায় থাকে সে জন্য আমরা কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। পরে একটি সামরিক উড়োজাহাজে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা।

কুমিল্লায় বিক্ষোভ: এদিকে শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, খুনি হাসিনা ভারতের ত্রিপুরায় বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এ কারণে আমরা কুমিল্লাবাসী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই বিক্ষোভ মিছিল বের করেছি। আমরা স্পষ্ট ভাষায় তাদেরকে বলে দিতে চাই, তাদের ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা কখনোই বাংলার মাটিতে সফল হবে না। ফ্যাসিবাদের দালাল ছাত্রলীগ, যুবলীগ, টোকাই লীগ, বাংলাদেশের কোথাও পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করলে তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করা হবে।

আমরা প্রস্তুত আছি। তাদেরকে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রয়োজনে কুমিল্লা থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। শনিবার রাতে তিনি এসব কথা বলেন। গত রোববার দুপুরে কুমিল্লার সমন্বয়ক রুবেল হোসাইন ও আবু রায়হান সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লা সীমান্তের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা। সেখানে বসে দেশবিরোধী চক্রান্ত করা হচ্ছে। ফ্যাসিস্টদের এ ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রস্তুত ছাত্র-জনতা। যেকোনো মূল্যে আওয়ামী চক্রান্ত রুখে দেওয়া হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সমন্বয়ক জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলের বহু নেতাকর্মী চোরাপথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়ে তারা জড়ো হয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

বিশেষ করে কুমিল্লা সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল সংখ্যক পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জড়ো হয়েছে। তারা সেখানে শেখ হাসিনাকে এনে একটা প্রবাসী সরকার গঠনের পাঁয়তারা করছে। সম্প্রতি এসব খবর দেশে ছড়িয়ে পড়লে সোচ্চার হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগের চক্রান্ত রুখে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সমন্বয়করা।

কুমিল্লার সমন্বয়ক রুবেল হোসাইন বলেন, কুমিল্লার সাবেক এমপি সন্ত্রাস-চাঁদাবাজের গডফাদার বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা দেশ থেকে পালিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থান করছে। বাবা-মেয়ে মিলে সেখানে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পলাতক বেশ কিছু কেন্দ্রীয় নেতাও রয়েছে। তারা সেখানে বসে দেশবিরোধী চক্রান্ত করছে। একটা প্রবাসী সরকার গঠনের পাঁয়তারা করছে। মূলত তারা দেশকে অস্থিতিশীল এবং দেশের জনসাধারণের ক্ষতি করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা তাদের এসব চক্রান্তের খবর পেয়েছি। যে কোনো মূল্যে দেশবিরোধী এ চক্রান্ত রুখে দেওয়া হবে। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না।

তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আওয়ামী লীগের খুনিরা ভারতে গিয়ে একত্রিত হচ্ছে। তাদেরকে কারা ইন্ধন ও আশ্রয় দিচ্ছে আমরা সবই জানি।

কুমিল্লার আরেক সমন্বয়ক আবু রায়হান বলেন, সীমান্তের ওপারে হাসিনার প্রেত্মারা একত্রিত হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। আমরাও সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এবারের জবাব হবে শক্ত ও কঠিন। তাদেরকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার জন্য একটা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল করেছি। এখন তাদেরকে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছি। সামনের দিনে তারা যদি কোনো চক্রান্ত করে, আমরা তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেব না।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version