যেকোনো মূল্যে আজ শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির চেয়ারম্যান-মহাসচিবসহ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার; দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলটি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে, জাপার সমাবেশের আড়ালে আওয়ামী লীগ মাঠে নামতে চাইছে এমন অভিযোগ করে এই সমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। অর্থাৎ, সমাবেশকে কেন্দ্র করে অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে জাপা ও ছাত্র অধিকার পরিষদ। ফলে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, তারা কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’র ব্যানারে মূলত গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের মিছিল নিয়ে জাপা কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে তাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। এর আগে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও দেশবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে’ মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’ এর কিছুক্ষণ পর হাসনাত আবদুল্লাহ আরেকটি পোস্টে লেখেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে ৮টায় মিছিল নিয়ে তারা বিজয়নগরে যাবেন।
ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জাপার বনানী কার্যালয়ে সংবাদ সসেম্মলন করে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ সময় তিনি বলেন, শনিবার আমাদের সমাবেশ কর্মসূচি চলবে। আমাদের কর্মসূচি ও আন্দোলন সবই চলবে নিয়মতান্ত্রিক এবং অহিংসভাবে। তিনি বলেন, আমরা মরতে এসেছি, আমরা মরতে চাই, কত মারবে, আমরা দেখতে চাই। তারপরও আমাদের সমাবেশ হবে। আল্লাহ আমাদের প্রটেকশন দিচ্ছেন বলে এখনও বেঁচে আছি, অন্য কারও প্রটেকশনে নয়। বিচারের জন্য যদি আল্লাহর সাহায্যের দিকে চেয়ে থাকতে হয়; তাহলে দেশ কীভাবে চলবে বলেও প্রশ্ন রাখেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, আমরা একদিনের ডেমোক্রেসি চাই না। সব সময়ের ডেমোক্রেসি চাই। আমরা চাই সরকার হবে অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’।
তিনি আরো বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের দোসর নয়। আমরা নির্বাচনে গিয়ে কী অন্যায় করেছি? এদিকে, বিকেলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসিতে গতকাল শুক্রবার ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। ওই সংবাদ সস্মেলনে জাপার আজকের সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টিকে শনিবার সমাবেশ করতে দেওয়া মানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার আরেকটি চক্রান্ত। জাপা চেয়ারম্যান-মহাসচিবসহ নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান বিন ইয়ামিন মোল্লা।
সংবাদ সম্মেলনে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিল। আমরা কাকরাইলে পৌঁছানো মাত্রই আমাদের ওপর তারা অতর্কিত হামলা করে। আপনারা শুনেছেন, জাতীয় পার্টি আগামীকাল (আজ) সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এসে সমাবেশ করবে। আমরা বার বার আল্টিমেটাম দিচ্ছি, যেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেন নিষিদ্ধ করা হয়। তারা বিভিন্ন রূপে ফেরার চেষ্টা করছে। তাদের প্রতি বর্তমান সরকারের অবস্থান কী, আমরা তা জানতে চাই। ডিএমপি কমিশনার কীভাবে এই হত্যাকারীদের দোসরদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়, আমরা জানতে চাই।
জাতীয় পার্টির অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতাই তাদের কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ তাদের অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবারের পর থেকে এখনো কাকরাইলে জাপা কার্যালয়ের সামনে পুলিশি অবস্থান রয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জাপা নেতারা তাদের কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া গত সপ্তাহে সমন্বয় সারজিস আলম রংপুর সফরে যান। যার প্রতিবাদ করেন স্থানীয় জাপা। জাপার নেতাকর্মীরা সারজিসের রংপুর সফরের প্রতিবাদ করে লাঠি মিছিল করে।
সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ডিএমপি : উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশ অর্ডিন্যান্স এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে কাকরাইল ও তার আশপাশের এলাকায় সভা-সমবেশ ও মিছিলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য