‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীতে র্যালি করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনে থেকে শুরু হওয়া র্যালিতে বিপুল নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। ফলে এটি জনসমুদ্রে রূপ নেয়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। র্যালি শুরু হওয়ার আগে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা হয়। র্যালি পূর্ব সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না।
কয়েকদিন আগেই বিএনপি এই র্যালিতে ব্যাপক লোকসমাগমের ঘোষণা দেয়। র্যালিটি দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এর আগে থেকেই সেখানে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় র্যালি শুরু হয়। র্যালি পূর্ব সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, আজকের র্যালি সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং দেশ গড়ার মিছিল। বিএনপির লক্ষ্য জনগণের ভোট নিশ্চিত করা। গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তার মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) রাজপথের সমাবেশ, মিছিল কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য নয়। আজকের মিছিল দেশের স্বার্থ রক্ষার মিছিল। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চেনার দিন। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর শত্রু চিহ্নিত করার দিন।
তিনি আরও বলেন, আগেও বলেছি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করতে পারবে না। রাজধানী ঢাকার এই রাজপথে লাখো জনতার এই মিছিল, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল। লাখো জনতার আজকের এই মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহীদের স্বপ্নে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মিছিল। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি জেনে রাখুক আজ, রাজধানীর রাজপথের আজকের এই সমাবেশ-মিছিল, নিজের অধিকার রক্ষার মিছিল। নিজের ভোট প্রয়োগের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল।
তারেক রহমান বলেন, কখনো যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে সেজন্য সব নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জনগণের ভোটের প্রতি যতক্ষণ পর্যন্ত মুখাপেক্ষী করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পাবে না। এমনকি স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশেও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যদি মানুষের সরাসরি ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে না পারি।
জনগণের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, একটি বিষয়ে স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাতে চাই, আমি নিজেও সতর্ক থাকতে চাই। সেটি হলো গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো কিন্তু থেমে নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে, প্রশাসনে, এখনো সক্রিয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এরপর র্যালি উদ্বোধন ঘোষণা করেন তারেক রহমান।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বারবার রক্ষা করেছে বিএনপি। আওয়ামী দুঃশাসনে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী গুম, খুন হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়েছেন, কিন্তু আওয়ামী দোসররা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে অংশ নেয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
এদিকে, শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার আগে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় প্রতীকী শেখ হাসিনাকে প্রদর্শন করা হয়। ইতোমধ্যে এ সম্পর্কিত একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি খাঁচার ভেতরে বন্দি রয়েছেন প্রতীকী শেখ হাসিনা। তাকে টিয়া রঙের শাড়ি ও সাদা ব্লাউজ পরানো হয়েছে। তার চোখে কালো রঙের চশমা। এভাবেই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খাঁচার ভেতরে রেখে প্রদর্শন করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিকেলে এই র্যালিতে যোগ দিতে রাজধানীর পাশাপাশি আশপাশের জেলাগুলোর বিএনপি ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনমুখী হন। তারা নানা রঙয়ের ব্যানার আর ফেস্টুন হাতে নিয়ে র্যালিতে যোগ দিতে আসেন। ফলে, রাজধানীর নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে র্যালি শুরু হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য