-->
শিরোনাম

বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে: প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের জড়িতদের বিচার করার পর দলটিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বাগত জানানো হবে। মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটি বলেন। আজ বৃহস্পতিবার এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন , ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বাগত জানানো হবে। তবে তার আগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বিচারে অপরাধী প্রমাণিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে। যারা অপরাধী নয় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন। আমরা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করব।

সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে সরকারের দায়িত্ব নিতে বলায় শুরুতে আমি তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরে বললাম, ঠিক আছে, তোমরা তোমাদের জীবন দিয়েছ, তোমার বন্ধুরাও জীবন দিয়েছে, তাই আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।

জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে সাক্ষাৎকারে জানান প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে সাড় ৩ হাজারজনকে বিচারবহির্ভূতভাবে গুম করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যা, গুম ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস সাধনের মাধ্যমে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়ের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়ে আবার কথাও বলছেন, এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ভারতে বসে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সহিংসতার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার প্রেক্ষিতে তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত চাওয়া হয়েছে। যদিও কেউ বিশ্বাস করে না যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে রাজি হবেন।’

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে ট্রাম্পের পোস্টের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারব বলে আত্মবিশ্বাসী। এ ছাড়া ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমরাও ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আমরা কোনো সংকটে সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে টাকা চাইছি না, আমরা একটি ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব চাই। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বস্ত করতে হবে যে বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খোলা রয়েছে।

দেশকে পুনর্গঠিত করার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধানকে কেন্দ্র করে কাজ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের হাজার কোটি ডলার পাচারের অর্থ উদ্ধারে কাজ করবেন বলে টাইম ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্য ‘‘ব্লক মেকানিজম’’ শেয়ার করার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং প্রতিটি দেশ এসব অর্থ ফেরত পেতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।

অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, সংস্কারপ্রক্রিয়া ধীরগতির হওয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ চলছে, কিন্তু এটি রাষ্ট্রপতি নাকি সংসদীয় পদ্ধতির দিকে যাবে, তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান টাইম ম্যাগজিনকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্তর্র্বতী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এটি একটি খারাপ ও স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ। এ জন্য তিনি দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমা ও রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, তাঁদের সম্মিলিত শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাহিদ মালেক টাইম ম্যাগাজিনকে জানান, তিনি ষড়যন্ত্রের অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য আদালতে আত্মসমর্পণ করার সাহস করেন না। কারণ তিনি হৃদরোগে ভুগছেন এবং বিশ্বাস করেন যে, তাঁর জামিন প্রত্যাখ্যান করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে, আমার পারিবারিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।আমি একজন অসুস্থ মানুষ। চার মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।’

নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কোনো তারিখ দিইনি। প্রথমে আমাদের রেললাইনগুলো ঠিক করতে হবে, যাতে ট্রেন সঠিক পথে চলে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই একমাত্র স্বৈরাচারের ফিরে আসাকে রুখে দিতে পারে। সংস্কারই পুরো বিপ্লবের মূল। এ কারণেই আমরা বিপ্লব-পরবর্তী একে আমরা বাংলাদেশ ২.০ বলছি।

এদিকে ঢাকায় আওয়ামী লীগ ঘেঁষা সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সাংবাদিকদের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ জনের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্সের পরিচালক অ্যান্টোইন বার্নার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মিডিয়া পেশাদাররা প্রতিশোধের প্রয়োজনীয়তার বোঝা বহন করছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে এই দুষ্ট প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য তাদের ক্ষমতার সবকিছু করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version