সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের পতিত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে (জাপা) জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যে বলা হয়েছে, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ও জাপার সমর্থক। এই দুটি দলকে বাইরে রেখে অর্থাৎ ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে বাদ দিয়ে সুন্দর দেশ গড়া বাস্তবসম্মত নয়। জাপা চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে মুহূর্তে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, সেই মুহূর্তে জাপা চেয়ারম্যানের আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে বক্তত্ব্য দেওয়ার অর্থই হলো পতিত আওয়ামী লীগ তথা ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার নামান্তর। কারণ এই মুহূর্তে প্রতিবেশী দেশটির সরকার, ক্ষমতাসীন দলসহ দেশটির কিছু রাজনীতিবীদ ও মিডিয়া বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত। ফলে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজেদের পুরোনো জোটের কথা স্বরণ করিয়ে জোটকে চাঙ্গা করার মধ্য দিয়ে দলটি প্রতিবেশী দেশেল স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। কারণ প্রতিবেশী দেশটি পতিত আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জিএম কাদেরের ওই বক্তব্যের পর দলটির বিরুদ্ধে ফের ভারতের স্বার্থ রক্ষায় মাঠে অভিযোগ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। তারা বলছেন, জাপা ভারতের ইশারায় ফের আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট টানতে জাপা কাজ করছে। তাদের বক্তব্য, ভারত এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বাইরে কাউকে বন্ধু ভাবতে পারে না। আর জাপা যেহেতু আওয়ামী লীগের আর্শিবাদ নিয়েই দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে ছিল তাই আওয়ামী লীগকে সুবিধাজনক অবস্থানে রাখার পাশাপাশি নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ভারত ফের জাতীয় পার্টিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। অতীতে জাপাও ভারতের ইশারার বাইরে যায়নি। জুলাই বিল্পবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে নিষিদ্ধের বিপক্ষে সম্প্রতি জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বক্তব্যের পর বিষয়টি ফের আলোচনায় এসেছে।
তবে, জাপা নেতারা বলছেন- তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। তারা দাবি, জাপার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি নেতারাও এই ইস্যুতে একই বক্তব্য দিলেও তাতে কোনো সমস্যা নেই। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি নেতারা বলছেন- জাপা ইতিপূর্বে ভারতের কথার বাইরে চলেনি। এখন দলটির অবস্থান ভারতের পক্ষেই।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর বেশ বেকায়দায় পড়েছে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সংস্পর্শে থেকে রাজনীতি করা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টি। আগে থেকেই ‘স্বৈরাচারের’ তকমা লাগানো এ দলটি ফের বেকায়দায় পড়ে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দলটি ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিল এমনটা দাবি করে পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে আনতে চেয়েছিলেন দলটির নেতারা। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা কোন কাজে আসেনি। বিশেষ করে জুলাই বিপ্পবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এই দলটির ব্যাপারে একেবারে জিরো টলারেন্স ছিল। বিশেষ করে অক্টোবরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক প্রশ্নে জাপার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা জাপাকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়া দলটিকে ভারতের আর্শিবাদপুষ্ট উল্লেখ করে বক্তব্য দেন। উদাহরণ হিসেবে গত বছর নির্বাচনের কিছুদিন আগে জি এম কাদেরের ভারত সফর প্রসঙ্গ সামনে আনেন। তিনি ভারত সফর শেষ করে ঢাকায় বিমানবন্দরে নামলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন ‘ভারতের অনুমতি ছাড়া বৈঠকের ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না’। নভেম্বর মাসজুড়ে জাপার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বক্তব্য দিয়েছিলেন। ৩১ অক্টোবর জাপার কাকরাইল কার্যালয়ে হামলাও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঘটনার পর প্রথমদিকে জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের বারবার বলার চেষ্টা করেছেন তাদের জোর করে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অপতৎপরতায় জাপাকে ভাঙা হয়েছে। এছাড়া তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এসব বক্তব্য কোনো কাজে না আসায় শেষ পর্যন্ত তিনি আবার ফের আওয়ামী লীগের পক্ষেই কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। সবশেষ জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত ৭ ডিসেম্বর শনিবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যারা দোষ করেছে তাদের তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করুন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩০টি আসন। তাদের ভোটের হার ছিল ৪৮.০৪। বিএনপি পেয়েছিল ৩০টি আসন। তাদের ভোটের হার ছিল ৩২.০৫। জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ২৭টি আসন। ভোটের হার ছিল ৭.০৭। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিলে দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে জাতীয় ঐক্যের ডাকের বাইরে রাখা হয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষের দলকে সংলাপের বাইরে রাখা হয়েছে। এতে জাতিগতভাবে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। দেশে একটা সংঘাতময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে বাদ দিয়ে সুন্দর দেশ গড়া বাস্তবসম্মত নয়।
এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেছেন- আসলে জাপা এখন আর মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। দলটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে আসছে। আর ভারত যেহেতু আওয়ামী লীগের বাইরে এখানে কিছু ভাবার চেষ্টা করে সুতরায় জাপাও ভারতের বাইরে যায় না।
যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, যশোর জেলায় জাপার কোন কার্যক্রম দেখি না। দলটি এখন আছে কি নেই তারও খবর মেলে না। সুতরাং এ দলটিকে নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ দৈনিক ভোরের আকাশ কে বলেন, জাপা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘদিনের দোসর। বারবার ভারতের ইশারায় দলটি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে সহযোগিতা করেছে। ২০১৪ সালে যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কান উপয়ান্তর খুঁজে না পেয়ে এই দলটি ফের পার্শ্ববর্তী দেশের কথায় আওয়ামী লীগকে রক্ষায় মাঠে নেমেছে। দলটির নেতাদের সম্প্রতিক বক্তব্যে যার সত্যতা মিলেছে। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেছেন, জাপা ভারতেকে খুশি করতে অতীতে ব্যস্ত ছিল এটি প্রমাণিত। দলটির যে ভারতপ্রীতি রয়েছে এটি অত্যন্ত পরিষ্কার। দেশের মানুষ মনে করে জাপা দিনশেষে আওয়ামী লীগ ও ভারতের কথার বাইরে যায় না।
জামায়াত ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগের চাওয়াকে ইতিপূর্বে বাস্তবায়ন করেছে জাপা। তাদের প্রতি মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই। দলটি এখন মানুষের কাছ থেকে বিতাড়িত হয়েছে।
তবে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজি সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, জাপার স্বার্থ রক্ষায় জাপা স্বরূপে ফিরেছে এমন অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এটা অনেকের মনগড়া বক্তব্য। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের হিসেবেও জাপা তৃতীয় রাজনৈতিক দল। চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আসলে আওয়ামী লীগ ও জাপা মিলে পট্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং তাদেরকে বাদ দিয়ে কীভাবে বৈষম্য দূর করা যাবে? সেই জায়গাা থেকে জিএম কাদের সাহেব বলেছেন, আওয়ামী লীগের কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হোক দল হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিপক্ষে। বিএনপি নেতারাও তো ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার পর সরকারের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কথা বলেছেন। বিএনপি বললে দোষ নেই জাপা সেই একই কথা বললে দোষ।
এ বিষয়ে কয়েকদিন আগে দৈনিক ভোরের আকাশকে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছিলেন, ২০০৮ সালে সকল দল নির্বাচনে এসেছে। ২০১৪ সালে আমাদের নেতা নির্বাচনে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারপর একটা পর্যায়ে এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। তখন উপজেলাসহ বিভিন্ন নির্বাচন হয় সেখানে কিন্তু বড় বড় দলগুলো অংশগ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালে আমরা যেমন পার্লামেন্টে ছিলাম তেমন বিএনপিসহ বিভিন্ন দল কিন্তু চার বছর পার্লামেন্টে ছিল। এরপর ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করে। আমরা কী অবস্থায় নির্বাচনে এসেছি তা আমাদের চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্ট করেছেন। মূলত জাতীয় পার্টিকে জোর করে নির্বাচনে আনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে জাপা ভোটে গিয়ে দোষ করলে বিএনপি ও অন্যান্য দল ২০১৮ সালে ভোটে গিয়ে কী কোনো দোষ করেনি?
জানা গেছে, ১/১১ পরিস্থিতির পর ২০০৮ সালের হুসেইন মুহম্ম¥দ এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দলটির কয়েকজন নেতা মন্ত্রিপরিষদেও স্থান পান। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে নামে। সই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ঘোষণা দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে মানুষ তাকে ‘জাতীয় বেঈমান’ মনে করবেন। ওই ঘোষণার পর অজ্ঞাত কারণে তাকে অসুস্থ দেখিয়ে সিএমএইচে ভর্তি করানো হয়। পরে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুতাজা সিং বাংলাদেশে এসে জাপাকে ম্যানেজ করে। পরবর্তীতে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে দিয়ে ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান ও তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদেরও শেষ পর্যন্ত ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থেকে দলটির অপর অন্যতম নেতা কাজী জাফর আহমদ দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি এরশাদকে বহিষ্কারও করেন। কাজী জাফর এরশাদকে ছেড়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে যোগ দেন বিএনপি জোটে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট ভোট বর্জন করলে একতরফা ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আর জাপা সরকারে থাকার পাশাপাশি জাতীয় সংসদের বিরোধী দল নির্বাচিত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জাপা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকেই ভোটে আসে। ওই একতরফা ও পাতানো ভোটে জাপাকে সংসদের প্রধানবিরোধী দল বানোনো হয়। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও একতরফা আখ্যা দিয়ে তা বর্জন করে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। সেসময় জাপা ক্ষমতার মোহে শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যায়। মাত্র ১১ আসন নিয়ে দলটি বিরোধী দলের আসনে আসীন হয়। ওই নির্বাচনের আসন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ফের জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তার ভাবি রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। ভোটের পর ফের জাপায় ভাঙন আসে। রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে নতুন জাপা গঠিত হয়।
মূলত ১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখলের পর এইচ এম এরশাদ ১৯৮৪ সালে ‘জনদল’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৮৫ সালে এরশাদ তার জনদল, বিএনপির একাংশ, ইউপি পি, গণতান্ত্রিক পার্টি এবং মুসলিম লীগের সমন্বয়ে গঠন করেন জাতীয় ফ্রন্ট। একপর্যায়ে কাজী জাফর স্বেচ্ছায় ইউপি পি ভেঙে দিয়ে এরশাদের দলে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা নিয়েই জাপা ৬ বার ভেঙেছে। সবশেষ দলটির ভাঙন ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারি নির্বাচনের পর। দলটির বারবার এভাবে ভাঙন আর সকাল বিকেল সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগায় অনেকে জাপাকে এখন ‘সার্কাস পাটি’ হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য