শুধু চোখ দেখেই এবার বলে দেওয়া যাবে আপনার আয়ু আর কত দিন! আর কী রোগে মৃত্যু হচ্ছে! মৃত্যু হবে কীভাবে তা-ও ধরে ফেলা যাবে আগেভাগেই। স্রেফ রেটিনা পরীক্ষা করে।
এই খবর দিয়েছে সাম্প্রতিক একটি নজরকাড়া গবেষণা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ব্রিটিশ জার্নাল অব অপথ্যালমোলজিতে।
দুজন সমবয়সীর শরীরের দেহকোষগুলোর ক্ষয় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একই হারে হয় না। কারো ক্ষেত্রে তা হয় দ্রুত হারে। কারো ক্ষেত্রে তা কম। এখানেই বছরের হিসাবে মানুষের বয়সের সঙ্গে তার দেহকোষের আয়ুর (‘বায়োলজিক্যাল এজ’) তফাতটা হয়ে যায়।
গবেষণা জানাল, মানব দেহকোষের সেই ক্ষয়ের ছবিটা নিখুঁতভাবে অনেক আগেভাগেই ধরা পড়ে রেটিনায়। রেটিনার ভাষা পড়েই আগেভাগে বলে দেওয়া যেতে পারে কার আয়ু আর কত দিন। মৃত্যু হতে পারে কী ধরনের রোগে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’) পদ্ধতির অ্যালগরিদমের মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের কথায়, ‘এই পদ্ধতি আগামী দিনে চিকিৎসকদের হাতে বড় হাতিয়ার তুলে দিতে পারে। কারণ এই পূর্বাভাসের জন্য এখন যে পদ্ধতিগুলো (যেমন, নিউরোইমেজিং, ডিএনএ মেথিলেশন ক্লক, ট্রান্সক্রিপটোম এজিং ক্লক) চালু রয়েছে সেগুলো ততটা নিখুঁত নয়। অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। যন্ত্রণাদায়কও। কাজটা যদি রেটিনা পরীক্ষা করেই করা যায় তা হলে খরচ, হ্যাপা দুই-ই কমবে। তা যন্ত্রণাদায়কও হবে না।’
ব্রিটেনে প্রায় ৫০ হাজার মধ্যবয়সির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতির মাধ্যমে যদি বোঝা যায় কারো চোখের রেটিনার বয়স তার নিজের বয়সের চেয়ে অন্তত এক বছর বেশি, তা হলে বলে দেওয়া যাবে আগামী ১১ বছরের মধ্যে যে কোনো কারণে তার মৃত্যুর আশঙ্কা ২ শতাংশ বেড়ে গেছে। সেই পূর্বাভাস যতটা সঠিক হবে পুরুষের ক্ষেত্রে, ততটাই নিখুঁত হবে মহিলাদের ক্ষেত্রেও।
গবেষকরা এ-ও দেখেছেন, রেটিনার বয়স কারো বয়সের চেয়ে অন্তত এক বছর বেশি হলে ক্যানসার বা কোনো রকমের হৃদরোগ ছাড়া অন্য কোনো রোগে আগামী ১১ বছরে তার মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যাবে কম করে ৩ শতাংশ।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদম অনুযায়ী এইভাবে প্রায় ৫০ হাজার মধ্যবয়সীর রেটিনা পরীক্ষা করে গবেষকরা যে পূর্বাভাস করেছিলেন, তা মিলে গেছে এক দশকের মধ্যে প্রায় ২ হাজার জনের মৃত্যুর মাধ্যমে। মৃতদের রেটিনার বয়স তাদের বয়সের চেয়ে এক বছর বেশি ছিল।
পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই চালানো হয়েছে এই গবেষণা। রেটিনা দেখে কেন মৃত্যুর পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে তার কারণ এখনো জানতে পারেননি গবেষকরা।
তবে গবেষণার ফল অন্তত এইটুকু জানিয়েছে, দেহের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ক্ষয়ক্ষতিগুলো হয় দেহকোষের তাতে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল রেটিনাই। রেটিনার কোষগুলোতেই সেই ক্ষয়ক্ষতির ছাপ পড়ে সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে আগে। চোখের ভাষাতেই প্রথম ধরা পড়ে আমাদের বুড়িয়ে যাওয়ার দাগ!
রেটিনার কলাগুলোতে থাকে স্নায়ুকোষ, থাকে রক্তজালিকাও। গবেষকদের ধারণা, রেটিনার কোষ, কলাগুলিই সবচেয়ে আগে জানাতে পারে রক্তজালিকা আর মস্তিষ্কের খবরাখবর। তাদের হালহকিকৎ।
এর আগের কয়েকটি গবেষণা দেখিয়েছিল, রেটিনা জরিপ করে নানা ধরনের হৃদরোগ, কিডনির অসুখ, বুড়িয়ে যাওয়ার কিছু লক্ষণ আঁচ করা যেতে পারে।
এই গবেষণা দেখাল, রেটিনা খুঁটিয়ে দেখে, দেহের বয়সের সঙ্গে রেটিনার বয়সের ফারাক মেপে-বুঝে যে কোনো রোগেই মৃত্যুর আশঙ্কা এক দশকের মধ্যে কতটা তার পূর্বাভাস দেওয়াও সম্ভব হতে পারে।
গবেষণাপত্রে গবেষকরা লিখেছেন, ‘দেখা গেল, রেটিনা নানা ধরনের স্নায়ুরোগ আর হৃদরোগের আঁচ আগেভাগে বোঝার জানালা। এটা এর আগে এতটা নিখুঁতভাবে দেখা যায়নি।’
নতুন নতুন ওষুধ, শল্য চিকিৎসা ও নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য হৃদরোগে মৃত্যুর হার আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু এই গবেষণা জানাল, কে ১০ বছরের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে চলেছেন তা চোখের রেটিনা পরীক্ষা করে বলে দেওয়া যেতে পারে এক দশক আগেই।
মন্তব্য